1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আনিস, তপনের মৃত্যু ও পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ বিশ্বাসযোগ্যতা

১৬ মার্চ ২০২২

ঝালদায় মৃত কংগ্রেস কাউন্সিলারের স্ত্রী পুলিশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করলেন। আনিস খানের বাবাও করেছেন।

https://p.dw.com/p/48YVb
আনিস খান ও তপন কান্দুর মৃত্যুর পর পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছবি: Subrata Goswami/DW

ঝালদা থানার আইসি-র বিরুদ্ধে কংগ্রেস কাউন্সিলার তপন কান্দুর খুন নিয়ে লিখিত অভিযোগ করলেন তার স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগনকে লিখিত অভিযোগে পূর্ণিমা মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তার মধ্যে ঝালদা থানার আইসির পাশাপাশি তপন কান্দুর ভাইপো ও বিজেপি প্রার্থী দীপক কান্দু ও তার বাবা নরেন কান্দুও আছেন।

পুলিশ মঙ্গলবার রাতে দীপক কান্দুকে গ্রেপ্তার করেছে। সেটাও খুনের ৪৮ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর। তবে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।  

অভিযুক্ত আইসি এই অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। পুলিশ সুপার আনন্দবাজারকে বলেছেন, ''প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে।  পূর্ণিমার অভিযোগ তার সঙ্গে জুড়ে দেয়া হবে। ইতিমধ্যেই দীপককে ধরা হয়েছে।''

আনিস হত্যার পর তপন কান্দুরও নিহত হওয়ার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নটা কি আরো বড় হলো?

পূর্ণিমার অভিযোগ

পূর্ণিমা কান্দুর অভিযোগ, পুরসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই থানার আইসি তাকে ও তার স্বামী তপন কান্দুকে সমানে ফোন করতে থাকেন। আইসি তাদের তৃণমূলে যোগ দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তৃণমূলে যোগ দিলে পুরসভায় পদ পাওয়ার লোভও দেখান।

পূর্ণিমার আরো অভিযোগ, তারা তৃণমূলে যোগ দিতে অস্বীকার করলে নানাভাবে তাদের উপর চাপ দেয়া হয়। তারপর তপন কান্দু জিতে যাওয়ায় তৃণমূলের সুবিধামতো পুরবোর্ড গঠন  করার জন্যই তাকে খুন করা হয়েছে বলে পূর্ণিমার অভিযোগ। কারণ, পুরসভায় কংগ্রেস ও তৃণমূলের সমান সংখ্যক আসন ছিল। তপনের মৃত্যুর পর তৃণমূল এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেল।

পূর্ণিমার দাবি, আইসিসহ অন্য অভিযুক্তদের শাস্তি না দিলে সঠিক বিচার হবে না, তার স্বামীর আত্মাও শান্তি পাবে না।

পরপর দুইটি ঘটনা

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পরপর দুইটি ঘটনায় পরিবারের মানুষরা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন। প্রথমটি ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুর ঘটনা। সেখানে তার বাবা ও ভাইয়ের অভিযোগ, পুলিশ কর্মীরাই তাকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে। দ্বিতীয়টি হলো, কংগ্রেস কাউন্সিলার তপন কান্দুর হত্যা। এখানে তার স্ত্রী হত্যার ক্ষেত্রে পুলিশের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন।

অধীর চৌধুরীর বক্তব্য

মঙ্গলবার লোকসভার জিরো আওয়ারে কংগ্রেস নেতা এবং বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী আনিস খান এবং তপন কান্দুর মৃত্যুর কথা তোলেন। অধীর বলেন, ''পশ্চিমবঙ্গে যে আইন-শৃঙ্খলাহীনতা চলছে, তাতে স্বাধীনভাবে নির্বাচন হওয়াই সম্ভব নয়।''

অধীরের দাবি,  আনিস খানের ক্ষেত্রে তার পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিরা তাকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করে। আনিস খান ও তপন কান্দুর মৃত্যু নিয়ে তিনি আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের দাবি করেন। আর টেবিল চাপড়ে তার সেই দাবি সমর্থন করেন দলনেত্রী সোনিয়া গান্ধী।

শাসক দলের গুণ্ডাবাহিনীর ভূমিকায় পুলিশ?

পুলিশের এই আচরণ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন প্রবীণ সাংবাদিকরাও। প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''পুলিশ যে রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করে, সেই অভিয়োগ আগেও ছিল। কিন্তু তখন তা-ও একটা পর্দা থাকতো। এখন সেটাও ঘুচে গেছে। বিষয়টা এখন একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেছে।''

শুভাশিসের বক্তব্য, ''জ্যোতিবাবুকে এক সাবেক পুলিশ কমিশনার মনীষী বলে মনে করতেন। আবার একজন আইপিএস অফিসার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে মা বলে ডাকতেন। এহেন পুলিশের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না।'' 

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী মনে করেন, ''পুলিশ দলদাস হোক এটা সংবিধান প্রণেতা থেকে কেউই চাননি। কিন্তু স্বাধীনতার ৭০ বছরে নানা ক্ষেত্রে অধঃপতনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি রাজ্য়েই পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করে এমন অভিযোগ উঠছে। আবার সিবিআইসহ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে কাজ করে এমন অভিযোগ রয়েছে।''

দীপ্তেন্দ্রর মতে, ''এই অবস্থা অত্যন্ত অনভিপ্রেত। আনিস বা তপন কান্দু মৃত্যুর ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা কতটা তা পরে বোঝা যাবে, কিন্তু এটা স্পষ্ট, পুলিশ এখন ক্রমশ শাসক দলের গুণ্ডাবাহিনীর মতো কাজ করছে।''

শুভাশিস যেমন একাধিক উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, বীরভূমের এক দাপুটে তৃণমূল নেতাকে নিয়ে একটি ভিডিও বাজারে এসেছিল, সেখানে ওই নেতাকে গাঁজা কেস দিয়ে কাউকে ধরার কথা বলতে শোনা গেছিল। আবার কোনো পুলিশ অফিসারকে দেখা গেছে, জুতো খুলে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পুজোয় টুনি বাল্ব সাজাচ্ছেন। একজন পুলিশ অফিসারকে আবার রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রধান করে দেয়া হলো। অন্যদিকে রাজীব কুমারকে ধরার সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে মুখ্যমন্ত্রী তার বাড়ি চলে গেলেন। এ সবই মানুষ দেখছেন।

দীপ্তেন্দ্র বলছেন, ''মানুষের চোখে পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা আর নেই।''

জিএইচ/এসিবি   (পিটিআই, আনন্দবাজার)