1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অযোধ্যা রায়ে অখুশি মুসলিমদের একাংশ

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৫ ডিসেম্বর ২০১৯

অযোধ্যা মামলার রায় অখুশি ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ৷ রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হবে কিনা, তা নিয়ে দ্বিধা-‌দ্বন্দ্ব ছিল৷ শেষমেশ আবারও শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ দুটি মুসলিম সংগঠন৷

https://p.dw.com/p/3UFpl
ফাইল ছবিছবি: Getty Images/AFP/D. E. Curran

অযোধ্যা মামলার ‌রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি দাখিল করেছে জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ৷ একই দাবিতে আর্জি জানাতে চলেছে অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল বোর্ড৷ দুটি সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, ভারতের ৯৯ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সুপ্রিম কোর্টের গত ৯ নভেম্বরের রায় মেনে নিতে পারেননি৷ বরং রায় পুনর্বিবেচনার পক্ষে সায় দিয়েছেন তারা৷

দু-‌সপ্তাহ আগে জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে ৫ সদস্যের একটি প্যানেল তৈরি করা হয়৷ ওই প্যানেলে রয়েছেন ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞরা৷ জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের প্রধান মওলানা আরশাদ মাদানি সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের বড় অংশ মনে করছে রায় পুনর্বিবেচনা হওয়া উচিত৷ তাই আদালতের উপর ভরসা রেখে আবার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ আবেদনে আদালতের পর্যবেক্ষণগুলিকেই বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ তাঁর আশা, রায় পুনর্বিবেচনা করে বাবরি মসজিদ মুসলিমদের হাতেই তুলে দেবে সর্বোচ্চ আদালত৷ একই আর্জিতে কোমর বাঁধছে অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল বোর্ড৷ এ প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের একমাত্র সংখ্যালঘু মুখ কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি মন্তব্য করেছেন, ‘‌‘‌এই দুটি সংগঠন বিভাজনের পথে হাটছে৷ বিভেদের পরিবেশ তৈরি করছে৷’’

জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‌‘‌আমরা সুবিচার পাইনি৷ আমরা ভীষণ দুঃখিত হয়েছি৷ সমগ্র পৃথিবীর মানুষ দেখছে, ভারতের বিচারব্যবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে৷ আমাদের সংগঠন আইনের শাসনকে মর্যাদা দিতে চায়৷ তাই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হয়েছে৷ ১৯৪৯ সালে বাবরি মসজিদের প্রাচীর ভেঙে সেখানে মূর্তি রাখার সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন বল্লভভাই প্যাটেল৷ প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নির্দেশ সত্ত্বেও তিনি কিছু সুরাহা করেননি৷ তখন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ৷ সুপ্রিম কোর্টের যে রায় এসেছে, তাতে মসজিদ ভাঙার কথা, মূর্তি রাখার কথা, জবরদখলের কথা স্বীকার করেছেন৷ বিচারপতিরাই নিজেদের পর্যবেক্ষণে সেসব উল্লেখ করেছেন৷ বিচারপতিরা পুরাতত্ত্ব বিভাগকে শিখন্ডী করে রামলালার বিশ্বাসকে মর্যাদা দিয়েছেন৷ আইনের যুক্তি গুরুত্ব পায়নি৷’’

আমরা সুবিচার পাইনি: সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি

উল্লেখ্য, বহু পুরোনো বিবাদজনিত অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ যে রায় ঘোষণা করেছে, তাতে বলা হয়েছে, বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমিতে রাম মন্দির তৈরি করা যেতে পারে৷ এতে কোনো বাধা নেই৷ পাশাপাশি মুসলিমদের মসজিদ তৈরির জন্য বিতর্কিত জমি থেকে কিছু দূরে ৫ একর জমি দিতে বলা হয়েছে সরকারকে৷ আবেদনকারীরা বলছেন, ওই জমি ‘‌ভিক্ষার দান'‌, তা তারা নেবেন না৷ তাদের যুক্তি, ভারতীয় আইন ও বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী রায় পুনর্বিবেচনা করা আর্জি জানানো যেতে পারে৷ সেই পথেই হাঁটছেন তারা৷ অযোধ্যা মামলায় মূল বিতর্ক ছিল মন্দির ধ্বংস করে মসজিদ তৈরি হয়েছিল কিনা৷ বিচারপতিরা তাঁদের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মন্দির ধ্বংস করেই যে মসজিদ তৈরির কোনো প্রমাণ মেলেনি৷ ফলে মুসলিমদের দাবি ও অধিকার প্রমাণিত হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও চূড়ান্ত রায় ঠিক উল্টো হয়েছে৷ তাই রায় নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে৷ তারা মনে করছে, বাবরি মসজিদের তথ্যভিত্তিক বিচার হয়নি, রায় দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র আবেগের উপর ভর করে৷

জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে লড়ছেন আইনজীবী এজাজ মকবুল৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‌‘‌মূল মামলায় একটা পক্ষ ছিল জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ৷ এখন ভারতীয় সংবিধানের ১৩৭ ধারা অনুযায়ী ৯ নভেম্বর যে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হয়েছে তাতে ১টি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, রায়ে লিখিতভাবে স্বীকার করা হয়েছে, ১৯৩৪ সালে বাবরি মসজিদের ক্ষতি করা হয়েছিল৷ ১৯৪৯-‌এ জবরদখল করা হয়েছিল৷ তারপর ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল৷ এতকিছুর পরেও মসজিদের জমি হিন্দুদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে৷'' এজাজ আরো বলেছেন, ‘‌‘‌বাবরি মসজিদ ওয়াকফ সম্পত্তি৷ এই সম্পত্তি হিন্দুদের দিয়ে ভুল করেছে আদালত৷ এখন আদালত এই আর্জি কতদূর বিবেচনা করবে, সেটা আদালতের নিজস্ব বিষয়৷ অতীতে এমন বহু রায় পুনর্বিবেচনার উদাহরণ রয়েছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য