আদনানের ক্যামেরায় বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী
বাংলাদেশের বিভিন্ন বনে-জঙ্গলে দেখা যায় নানান বন্যপ্রাণী৷ বাংলাদেশের ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার আদনান আজাদ আসিফের তোলা চমৎকার কিছু আলোকচিত্র নিয়ে এই ছবিঘর৷
চিতা বিড়াল
চিতা বিড়ালের ইংরেজি নাম লেপার্ড ক্যাট৷ ছেলে ও মেয়ে বিড়ালের মধ্যে চেহারায় কিছুটা ভিন্নতা আছে৷এরা গভীর বনের বাসিন্দা৷ এরা শিকারে পটু৷ এদেরকে চিতা বাঘের রেপ্লিকাও বলা হয়৷
মুখপোড়া হনুমান
ক্যাপড লেঙ্গুর বা মুখপোড়া হনুমানের ছবিটি হবিগঞ্জের সাতছরি জাতীয় উদ্যান থেকে তোলা৷ লালা হনুমান নামেও পরিচিত এরা৷ বর্তমানে সারা বিশ্বেই এই প্রজাতিটির অস্তিত্ব বিপন্ন৷ একটি পুরুষের নেতৃত্বে দলের সব স্ত্রী, যুবক ও বাচ্চারা থাকে৷ এরা খুবই শান্তিপ্রিয়৷দলবদ্ধ এই প্রাণীদের একেকটি দলে সচরাচর ২ থেকে ১৪টি প্রাণী থাকে৷ এরা মূলত পাতাভোজী৷
উল্লুক
হুলক গিবন বা উল্লুক৷ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হতে বসেছে প্রাণীটি৷ পুরুষদের গায়ের রং কালো, কিন্তু দর্শনীয় সাদা ভ্রু রয়েছে৷ অন্যদিকে মেয়ে উল্লুকের সারা গায়ে আছে ধূসর-বাদামী লোম৷ ছবিটি তোলা হয়েছে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে৷
মেছোবাঘ
ফিশিং ক্যাট বা মেছোবাঘের এ ছবিটি মৌলভী বাজারের হাইল হাওড় থেকে তোলা৷ এরা সাধারণত নদী ও পাহাড়ি ছড়া ও জলাভূমির পাশে বাস করে৷ বাংলাদেশের বিপন্ন প্রজাতির এ প্রাণীটি রাতেই শিকার করে৷
বন বিড়াল
বন বিড়ালের ইংরেজি নাম ‘জাঙ্গল ক্যাট’৷ এরা জংলি বিড়াল নামেও পরিচিত৷ দিনে এদের দেখা যায় না বললেই চলে৷ এরা সাধারনত ছোট ছোট প্রাণী ও পাখি শিকার করে খায়৷
চশমাপরা হনুমান
ফেরে’স লিফ মাঙ্কির বাংলা নাম চশমাপরা হনুমান৷ কালো হনুমান নামেও এটি পরিচিত৷ চোখের চারপাশের লোম সাদা রঙের হয়ে থাকে বলেই মনে হয় চশমা পরে আছে৷ অন্যান্য প্রজাতির হনুমানের চেয়ে এরা কিছুটা লাজুক প্রকৃতির৷ ছবিটি তোলা হয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে৷
এশীয় তাল খাটাশ
এশিয়ান পাম সিভেট বা এশীয় তাল খাটাশ৷ এদের নামও ঠাঁই পেয়েছে পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায়৷ ছবিটি হবিগঞ্জের কালেংগা সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে তোলা৷ খাটাশের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এরাই মানুষের বেশি কাছাকাছি থাকে৷ এরা মূলত ফলখেকো হলেও কীটপতঙ্গ, শামুক, ডিম, বাচ্চা-পাখি, ছোট প্রাণী, তাল-খেজুরের রসও খায়৷
দেশি সজারু
ইন্ডিয়ান ক্রেস্টেড পোরকুপিন মূলত দেশি সজারু নামেই পরিচিত৷ নিরামিষভোজী জীব হিসেবে এটি পাতা, ঘাস, ফলমূল, শস্য, গাছের শিকড় ছোট ছোট গাছপালা খেয়ে জীবনধারণ করে৷ ছবিটি তোলা হয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে৷
মায়া হরিণ
মায়া হরিণের ইংরেজি নাম বার্কিং ডিয়ার৷ সর্বভূক এ প্রাণীটি গভীর বনে একাকী চলাফেরা করতে পছন্দ করে৷ ঘাস- লতাপতা ছাড়াও পাখির ডিম, এমনকি ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী প্রাণীও মায়া হরিণের প্রিয় খাদ্য৷ সামান্য শব্দ পেলেই এরা পালিয়ে যায় বলে এদের দেখা পাওয়া খুবই কঠিন৷ ছবিটি তোলা হয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে৷
লজ্জাবতী বানর
লজ্জাবতী বানরের ইংরেজি নাম বেঙ্গল স্লো লরিস৷ নিশাচর এ প্রাণিটি সাধারণত গাছের উঁচু ডালে থাকতে পছন্দ করে৷ দিনে গাছের ডালে বা গাছের গর্তে পায়ের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে বলের মতো হয়ে থাকে৷
কুলু বানর
নর্দার্ন পিগ টেইলড ম্যাকেক বা উল্টোলেজী বানর৷ কুলু বানর নামেও পরিচিত৷ পুরুষ কুলু বানর বেশ রাগী হয়, স্ত্রী বানর তুলনামূলকভাবে শান্ত৷ ফল, মূল, কচি পাতা, কুঁড়ি, কীটপতঙ্গ, কাঁকড়া, পাখির বাচ্চা ইত্যাদি খেয়ে থাকে৷ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে তোলা ছবিটি৷
চিত্রা হরিণ
স্পটেড ডিয়ার বা চিত্রা হরিণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সুন্দরবনে৷ আদনান এ ছবিটি সুন্দরবনেই তুলেছেন৷
রেসাস বানর
রেসাস ম্যাকেক-এর বাংলা নাম রেসাস বানর৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলে এদের প্রচুর দেখা যায়৷ এরা সাধারণত গাছের ডালে বিচরণ করে থাকে৷ এছাড়া মানুষের কাছাকাছি থাকতেও পছন্দ করে এরা৷ ছবিটি তোলা হয়েছে সুন্দরবন থেকে৷
লোনা পানির কুমির
সল্ট ওয়াটার ক্রোকোডাইল বা লোনা পানির কুমির৷ উপকূলীয় এলাকার অল্প লবণাক্ত পানি ও নদীতে বসবাস করে৷ বাংলাদেশের সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ ছবিটি তোলাও সুন্দরবনে৷ সুন্দরবনের করমজলে এই প্রজাতির কুমিরের একটি প্রজনন কেন্দ্রও আছে৷
আদনান আজাদ আসিফ
পেশায় মডেল ও অভিনেতা আদনান আজাদ আসিফ নেশায় একজন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ও গবেষক৷ টিভি ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি সময় পেলেই ক্যামেরা নিয়ে ছুটে যান বনে-জঙ্গলে৷ খুব কাছে থেকে দেখার চেষ্টা করেন বন্যপ্রাণীদের জীবন৷