আত্মসমর্পণের পর কারাগারে লতিফ সিদ্দিকী
২৫ নভেম্বর ২০১৪
গত ২৮শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে মুসলানদের পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে ‘আপত্তিকর' মন্তব্য করেন লতিফ সিদ্দিকী৷ হজ নিয়ে তাঁর মন্তব্যে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলামানরা আহত হন এবং প্রতিবাদ জানান৷ কয়েকটি ইসালামি দল ও সংগঠন তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে গ্রেপ্তার এবং শাস্তির দাবি জানায়৷ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও একই দাবি জানায়৷ এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকার আদালতে এই ঘটনায় ২২টি মামলা এবং প্রতিটি মামলাতেই গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি হয়৷
লতিফ সিদ্দিকী যখন বিদেশে বসে ঐ ‘আপত্তিকর' মন্তব্য করেন, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশের বাইরে ছিলেন৷ বাইরে ছিলেন রাষ্ট্রপতি৷ প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে লতিফ সিদ্দিকীর কথায় নিজেও দুঃখ পাওয়ার কথা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ এরপর বিদেশে থাকা লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং দল থেকে বাদ দেয়া হয়৷
লতিফ সিদ্দিকী তখন পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আর দেশে ফেরেননি৷ তিনি অ্যামেরিকা থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকতায় যান৷ সেখান কিছুদিন অবস্থানের পর রবিবার রাতে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে ঢাকায় ফেরেন তিনি৷ ঢাকায় ফেরার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার এড়িয়ে অজ্ঞাতস্থানে চলে যান লতিফ সিদ্দিকী৷
তাঁর ঢাকায় ফেরা এবং ফেরার পর গ্রেপ্তার না হওয়ায় ইসলামি দলগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ হেফাজতে ইসলাম এবং ইসলামি ঐক্যজোট নেতারা তাঁকে বুধবারের মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে বৃহস্পতিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে৷ বিএনপি অভিযোগ করে যে, সরকার লতিফ সিদ্দিকীকে রক্ষায় নতুন কৌশল নিয়েছে৷ এ অবস্থায় মঙ্গলবার দুপরে লতিফ সিদ্দিকী নিজেই ধানমন্ডি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন৷
আত্মসমর্পণের পর আদালতে হাজির করা হলে, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে ধর্মীয় উসকানির এক মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুর রহমান৷ মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান যে, ‘‘লতিফ সিদ্দিকী বেলা দেড়টার দিকে ধানমন্ডি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন৷ পরে থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিকীর সঙ্গে তিনি ঢাকার হাকিম আদালতে যান৷ আদালতই তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়৷'' আইনজীবী এ এম আবেদ রাজার দায়ের করা মামলার শুনানিতে বিচারক বলেন, ‘‘যেহেতু আসামি জামিন আবেদন করেননি, সেহেতু তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হলো৷''
জানা গেছে, রবিবার রাতে লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরে আত্মগোপনে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে আইনি পথে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ ভারতে থাকতেই তিনি দেশে এসে উচ্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন বলে ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছিলেন৷ তাই সোমবার দিনভর গুঞ্জণ ছিল যে, তিনি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করবেন৷ তবে তা হয়নি৷ এরই মধ্যে সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের আইজিকে নির্দেশ দেয়া হয়৷
উল্লেখ্য, মন্ত্রিসভা এবং দল থেকে বাদ পড়া লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ বহাল আছে৷