বিজেপির মধ্যে কোন্দল
২১ মার্চ ২০১৪নির্বাচনের মুখে ভারতীয় জনতা পার্টিতে লালকৃষ্ণ আডবানির মতো বড় মাপের নেতার বিদ্রোহ বাড়তে না দিয়ে দলের নেতৃত্ব ইচ্ছামত কেন্দ্র বেছে নেবার স্বাধীনতা দিল আডবানিকে৷ পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি লালকৃষ্ণ আডবানিকে গুজরাটের গান্ধীনগর কেন্দ্রের প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করায় বেঁকে বসেছিলেন আডবানি৷ ঐ প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল কেন্দ্র থেকে দাঁড়াবার ইচ্ছা প্রকাশ করলে দলের মধ্যে শুরু হয় কোন্দল৷ জটিলতা কাটাতে বিজেপির শীর্ষ নেতারা আডবানির মান ভাঙাতে দু'দিন ধরে তাঁকে বোঝাবার চেষ্টা করে চলেছেন৷ কিন্তু আডবানি তাঁর অবস্থানে ছিলেন অনড়৷ অন্যদিকে অনুরূপ কারণে বিজেপির আর এক প্রবীণ নেতা যশবন্ত সিং জেদ ধরেছেন, তিনি তাঁর পছন্দমত আসন রাজস্থানের বারমেড় কেন্দ্র থেকে দাঁড়াবেন৷ পার্টি যদি না মানে, তাহলে তিনি নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়ার হুমকি দিয়েছেন৷ শীর্ষস্থানীয় দুই প্রবীণ নেতার গলায় বিদ্রোহের সুর শুনে স্পষ্টতই বিব্রত দলীয় নেতৃত্ব৷
আডবানি পর পর চারবার গান্ধীনগর আসন থেকে জিতলেও এবার কেন সেই আসন থেকে দাঁড়াতে চাইছেন না? গুজরাটের নরেন্দ্র মোদীকে দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা থেকেই শুরু আডবানির সঙ্গে মোদীর তথা দলের সংঘাত৷ আডবানিকে বলা হয় দলের অন্যতম স্থপতি৷ ৮০-এর দশক থেকে দলকে লালন করে আজকের বিজেপি-তে তুলে আনার কৃতিত্বের প্রধান দাবিদার তিনি৷ এমনকি আজকের মোদী বস্তুত তাঁরই হাতে গড়া৷ তাঁকে ডিঙিয়ে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করাটা তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারেননি৷ আডবানির মোদী বিরোধিতার শুরু তখন থেকেই৷ পর্যবেক্ষক মহলের অনেকের ধারণা, তবে কি গুজরাটের গান্ধীনগর কেন্দ্রে তাঁকে হারাতে মোদীর চেলা-চামুণ্ডাদের অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা করছেন তিনি?
গান্ধীনগরের পরিবর্তে তাহলে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে দাঁড়াতে আগ্রহী কেন তিনি দলের আপত্তি সত্ত্বেও? আজ দলের মধ্যে তাঁর সব থেকে কাছের লোক মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান, যাঁকে আডবানি দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতে চেয়েছিলেন৷ দল তাতে কান দেয়নি৷ তবে কি চৌহানের রাজ্য ভোপালে দাঁড়াতে চেয়ে তিনি দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ইন্ধন যোগাতে চাইছেন?
তিক্ত হয়ে গেছে আডবানি-মোদীর ব্যক্তিগত রসায়ন৷ যদিও মোদীর তরফে আডবানির প্রতি কোনো অসৌজন্য দেখানো হয়নি৷ বারংবার তিনি ছুটে গেছেন আডবানির বাসভবনে৷ বুধবারও তিনি ছুটে গেছেন গান্ধীনগর থেকে তাঁকে দাঁড় করাবার অনুরোধ নিয়ে৷ তবু আডবানির মন টলানো যায়নি৷ একটা সহজ কথা কেন তিনি বুঝতে পারছেন না যে, এই অনমনীয় মনোভাবে তিনি দলের মধ্যে আরো বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়বেন? দলে আরো বেশি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন? বিজেপির তাত্ত্বিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আডবানির অনড় অবস্থানে অসন্তোষ গোপন রাখেনি৷ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ আডবানির এটা না বোঝার কথা নয় যে দলের চালিকা শক্তি আজ তাঁর হাতে নেই৷ সেই ভূমিকা নিতে উঠে এসেছেন মোদী৷ তবে কি পুরোটাই নবীন-প্রবীণের মধ্যে অহংবোধের দ্বন্দ্ব ?
পাশাপাশি দুটি কেন্দ্র উত্তর প্রদেশের বারাণসী এবং নিজ রাজ্যে ভদোদরা থেকে মোদীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ বলা হচ্ছে, মোদী ঝড় যদি সত্যি হয়, তাহলে কেন মোদীকে দুটি আসন থেকে দাঁড়াতে হচ্ছে? কেন তাঁকে নিতে হচ্ছে স্ট্যান্ড-বাই?