1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আক্রান্ত ৫০ হাজার, ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড বৃদ্ধি

৬ মে ২০২০

উদ্বেগজনক ছবিটা আবার ফিরে এসেছে। ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা মাঝে কমতে শুরু করেছিল। আবার তা বাড়ছে। 

https://p.dw.com/p/3bpts
ছবি: DW/A. Sharma

নিয়ন্ত্রণে আসছিলো। গত ৮ এপ্রিল থেকে ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেঁধে রাখা সম্ভব হচ্ছিলো। এই প্রবণতা ১ মে পর্যন্ত দেখা গিয়েছে। তারপরই হিসাবটা উল্টে গিয়েছে। গত কয়েক দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ফের বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড বৃদ্ধি হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার ছুঁয়েছে। এক হাজার ৬০০ জন মারা গিয়েছেন। এর মধ্যেই লকডাউনের কড়াকড়ি অনেকটা শিথিল করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এতদিন বন্ধ থাকার পর লোকে হইহই করে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। মদের দোকানের সামনে বিশাল লাইন পড়ছে এবং রেকর্ড বিক্রি হচ্ছে। কাজকর্মও শুরু হয়েছে বেশ কিছু সেক্টরে। নির্মাণ কাজ, রাস্তা তৈরির কাজ, কল-কারখানায় কাজ আরম্ভ হয়েছে। বেসরকারি অফিসও কম কর্মী নিয়ে খুলতে শুরু করেছে।

এর মধ্যে দিল্লি ও মুম্বইয়ের অবস্থা বেশ খারাপ। দেশের রাজধানী ও আর্থিক রাজধানীতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বিপুলভাবে বাড়ছে। কড়াকড়ি শিথিল হওয়ার পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দেশজুড়ে লাফিয়ে বাড়তে পারে বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে। তবে মুশকিল হলো, এখন কাজকারবার চালু না করলে লোকে না খেতে পেয়ে মারা যাবেন। সরকারের হাতেও এত টাকা নেই যে, তারা গরিবদের হাতে মাসের পর মাস অর্থ তুলে দেবে। তাই করোনার মধ্যে কড়াকড়ি শিথিল করে কাজ চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

তবে আগাম সতর্কবাণীও ছিলো। বিশেষজ্ঞদের একাংশ ও কিছু রিপোর্ট বলেছিলো মে মাসের প্রথম দিকে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বিপুলভাবে বাড়বে। ২১ মে পর্যন্ত গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। একটা উদাহরণ দিলেই মে মাসে বৃদ্ধির হার স্পষ্ট হবে। ১ মে থেকে প্রথম তিন দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা তার আগের এক সপ্তাহে মোট আক্রান্তের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ফলে করোনার রেখচিত্র যেটা নিচের দিকে যাচ্ছিলো, সেটা আবার ওপরের দিকে উঠে গিয়েছে। মনে রাখা দরকার, লকডাউন শিথিল হয়েছে ৪ মে থেকে। অর্থাৎ, লকডাউন চলাকালীনই রেখচিত্র ওপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে। কড়াকড়ি শিথিল হওয়ার পরে আক্রান্তের পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রথম দু'দিনের হিসেব সে কথাই বলছে। কিছু বিশেষজ্ঞ ভারতের পরিস্থিতির সঙ্গে ইটালির অবস্থার তুলনা টানছেন। ইটালিতেও একটা সময়ের পরে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে যায়। ভারতের প্রবণতায় তাই অশণি সংকেত দেখছেন তাঁরা। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, কিছু রাজ্য সময়ে ঠিক তথ্য জানায়নি। এখন সেই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তাই সংখ্যাটা বেশি লাগছে।  

এর মধ্যে মহারাষ্ট্রের অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। করোনায় সেখানে মারা গিয়েছেন ৫৮৩ জন। পরিস্থিতি দেখে মুম্বইয়ে মদের দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান বাদ দিয়ে অন্য কোনও ধরনের দোকানও খোলা হচ্ছে না। মুম্বইয়ে লকডাউন কড়াভাবে চালু রাখা হয়েছে। কারণ, শুধুমাত্র মুম্বইয়েই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। তেলেঙ্গানা সরকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্যে ২৯ মে পর্যন্ত লকডাউন চলবে। সেখানেও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান ছাড়া আর কোনও দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওড়িশা সরকারও। দিল্লিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার ছুঁতে চলেছে। গত তিনদিনে দিল্লিতে প্রায় এক হাজার জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কী হারে করোনা বাড়ছে রাজধানীতে। পশ্চিমবঙ্গেও করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। দিল্লির সেনা হাসপাতালে ২৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। উত্তর পূর্বে বিএসএফের তিনটি শিবির বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সেখানে ৪০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

তবে এরপরেও মদেরদোকানের সামনে লাইন বেড়েই চলেছে। দিল্লিতে মদের ওপর ৭০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। অন্ধ্রে ৭৫ শতাংশ, পশ্চিমবঙ্গে ৩০ শতাংশ, রাজস্থানে দশ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও দোকান খোলার আগে থেকে লাইন শুরু হয়ে যাচ্ছে। আসামে প্রথম তিন দিনে প্রায় ৮০ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। কর্ণাটকে হয়েছে ১৯৭ কোটি টাকার। অন্ধ্রে প্রথম দিনেই ৬৮ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আর উত্তর প্রদেশ মদ বিক্রির ব্যাপারে অন্যদের পিছনে ফেলে দিয়েছে প্রথম দিনেই। ১০০ কোটি টাকার মদ বিক্রি করে। এতখানি শুল্ক বসানোর পর মদের দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তারপরেও যে ভাবে মদের দোকানের সামনে লাইন পড়ছে ও বিক্রি হচ্ছে, তাতে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে না, ভারতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন চাকরি হারিয়েছেন। লোকের হাতে টাকা নেই। আর মদের দোকানের সামনে লাইনে অন্তত যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁরা সাধারণ মানুষ।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)