1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টাস্ক ফোর্স গোটানোর সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের

৬ মে ২০২০

দেশের অর্থনীতির স্বার্থে জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ার দরকার। তাই করোনা টাস্ক ফোর্স গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রাম্প। যা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

https://p.dw.com/p/3bpu2
ছবি: Reuters/C. Barria

করোনা মহামারি রোখার জন্য যে টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছিল অ্যামেরিকা, তা গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত জানালেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর যুক্তি, ''এ বার সামনের দিকে তাকাতে হবে। কী ভাবে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করা যায় এবং অর্থনীতিকে সচল করা যায়, সে কথা ভাবতে হবে। সে কারণেই আপাতত টাস্ক ফোর্স তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।''

মঙ্গলবার একটি মাস্ক উৎপাদনের কেন্দ্রে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, ''পরিস্থিতি যেমনই হোক, আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশকে বন্ধ করে দেওয়া যায় না। যে ভাবেই হোক স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে হবে। অর্থনীতির কথা ভাবতে হবে। তাই করোনা টাস্ক ফোর্সের আর প্রয়োজন নেই।'' যদিও একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, টাস্ক ফোর্সের প্রধান দুই ব্যক্তি অ্যান্টনি ফওসি এবং ডেবোরা বার্ক্সকে উপদেষ্টা হিসেবে রেখে দিচ্ছে হোয়াইট হাউস।

লন্ডনে গৃহহীন বাড়ছে

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছে, অ্যামেরিকায় যে দিন করোনা-মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেল, সে দিন প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণা বেমানান। তাঁদের বক্তব্য, টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে অর্থনীতির কার্যত কোনও সম্পর্ক নেই। টাস্ক ফোর্সের কাজ করোনা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা। অর্থনীতি সচল করার এবং জনজীবন স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া জারি রেখেও টাস্ক ফোর্সকে তাদের কাজ করতে দেওয়া যেত। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সমস্যা আসলে অন্য। অ্যামেরিকার করোনা পরিস্থিতি যে এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি এবং অদূর ভবিষ্যতে তা আরও ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে, টাস্ক ফোর্সের এ ধরনের বক্তব্য মেনে নিতে পারেননি ট্রাম্প।

শুধু তাই নয়, চীনের উহানের পরীক্ষাগার থেকে করোনা ছড়িয়েছে বলে ট্রাম্প যে দাবি করছেন বার বার, তার সঙ্গেও দ্বিমত পোষণ করেছেন ফওসি। ডেবোরার সঙ্গেও একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট। সে কারণেই রাতারাতি টাস্ক ফোর্স তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। যদিও সমালোচনা এড়াতে তাঁদের দু'জনকে উপদেষ্টা হিসেবে রেখে দেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্প এ দিন বলেছেন, তিনি জানেন এর ফলে আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হবেন। জানেন, আরও মৃত্যু হতে পারে। তবু লকডাউন তুলে দেশকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে হবে। পরিসংখ্যান বলছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত অ্যামেরিকায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২ লাখ ৩৭ হাজার জন। মৃত্যু হয়েছে ৭২ হাজার ২৭১ জনের।

 

এ দিকে ইউরোপে মৃত্যুর নিরিখে ইটালি এবং স্পেনকেও ছাড়িয়ে গেল যুক্তরাজ্য। বুধবার সকাল পর্যন্ত সেখানে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪২৭ জনের। ইটালিতে মৃতের সংখ্যা এখন ২৯ হাজার ৩১৫। স্পেনে মারা গিয়েছেন ২৫ হাজার ৬১৩ জন। আশঙ্কার বিষয়, গত তিন দিনে রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। প্রায় ১০ হাজার জন করে প্রতিদিন আক্রান্ত হয়েছেন। এই মুহূর্তে ভ্লাদিমির পুটিনের দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৫৫ হাজার। মৃত দেড় হাজার।

আশার কথা জানিয়েছে ফ্রান্সের একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা স্যানোফি। মঙ্গলবার তারা জানিয়েছে, গোটা বিশ্বে পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েক হাজার রোগীর উপর করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তারা ওই ভ্যাকসিন তৈরি করছে। রয়টার্সকে তারা জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে আরও বেশি মানুষের উপর ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দেখা হবে। তবে আগামী বছরের আগে ভ্যাকসিন বাজারে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই তারা জানিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ কোরিয়া নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়ি কমাতে শুরু করেছে। অস্ট্রেলিয়াতে জনজীবন এখন অনেকটাই স্বাভাবিকের পথে। স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। নিউজিল্যান্ডও লকডাউন তুলতে শুরু করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় শুরু হচ্ছে বেস বলের টুর্নামেন্ট। তবে স্টেডিয়ামে লোক থাকবে না।  

এক দিকে যখন আশার খবর, অন্য দিকে আশঙ্কার। দক্ষিণ অ্যামেরিকা এবং ভারতীয় উপমহাদেশের পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। মঙ্গলবার ব্রাজিল জানিয়েছে এক দিনে সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাত হাজার। ভারত, পাকিস্তানেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গত কয়েক দিনে রেকর্ড সংখ্যায় বেড়েছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বাংলাদেশেও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেব হলো, বুধবার পর্যন্ত গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭ লাখ ২৭ হাজার। মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ৫৮ হাজার জনের। সুস্থ হয়েছেন প্রায় ১২ লাখ ৪২ হাজার মানুষ।

এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)