1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপের অস্ত্র অ্যামেরিকায়

মিশায়েল ক্নিগে/এসবি১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

অ্যামেরিকায় গুলি চালিয়ে নিরীহ মানুষের হত্যার প্রতিটি ঘটনার পর ইউরোপে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ মার্কিন সমাজে ‘অস্ত্র সংস্কৃতি’-র নিন্দায় মুখর হয়ে ওঠেন সমালোচকরা৷ কিন্তু সেই ইউরোপই আবার নির্দ্বিধায় সেদেশকে অস্ত্র বিক্রি করে৷

https://p.dw.com/p/17Vmj
Flowers, candles and stuffed animals are seen at a makeshift memorial in Newtown, Connecticut December 17, 2012. Two funerals on Monday ushered in what will be a week of memorial services and burials for the 20 children and six adults massacred at Sandy Hook Elementary School in Newtown. REUTERS/Eric Thayer (UNITED STATES - Tags: CRIME LAW OBITUARY)
ছবি: Reuters

হত্যালীলায় ইউরোপের অস্ত্র

অ্যামেরিকায় সম্প্রতি একের পর এক হত্যালীলায় যে সব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তার অনেকগুলিই আসলে ইউরোপে তৈরি৷ তাছাড়া সে দেশের এই সব আগ্নেয়াস্ত্রের অবাধ বিক্রি চালু রাখতে যে ‘লবি' সংগঠন রয়েছে, সেই ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের একটা বড় অংশ আসে ইউরোপ থেকেই৷ তবে এই বাস্তব সত্য নিয়ে প্রকাশ্যে তেমন আলোচনা করা হয় না৷

Waffe Glock
২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে কানেকটিকাট রাজ্যে নিউটাউন শহরে যে আততায়ী ২০ জন শিশু ও ৮ জন প্রাপ্তবয়স্ককে হত্যা করেছিল, তার কাছে ছিল অস্ট্রিয়ার গ্লক ও জার্মানির সিগ সাউয়ার পিস্তলছবি: Tim Sloan/AFP/Getty Images

দৃষ্টান্তের অভাব নেই৷ যেমন ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে কানেকটিকাট রাজ্যে নিউটাউন শহরে যে আততায়ী ২০ জন শিশু ও ৮ জন প্রাপ্তবয়স্ককে হত্যা করেছিল, তার কাছে ছিল অস্ট্রিয়ার গ্লক ও জার্মানির সিগ সাউয়ার পিস্তল৷ কলোরাডো রাজ্যের অরোরায় সিনেমা হলে হামলায় ১১ জনের হত্যাকাণ্ডের পেছনেও ছিল গ্লক পিস্তলের অবদান৷ ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে মার্কিন রাজনীতিক গ্যাব্রিয়েল গিফোর্ডস-এর উপর হামলায়ও অস্ট্রিয়ার গ্লক কোম্পানির সেমি-অটোম্যাটিক পিস্তল ব্যবহার করেছিল আততায়ী৷

এমন উদাহরণের শেষ নেই৷ ইটালির বেরেটা, জার্মানির ভাল্টার, অস্ট্রিয়ার গ্লক – ইউরোপের এই সব সংস্থার তৈরি আগ্নেয়াস্ত্রের যথেষ্ট কদর রয়েছে অ্যামেরিকায়৷ প্রায় সব কটি হত্যালীলার পর তদন্তে দেখা গেছে, আততায়ীরা আইনি পথে বৈধভাবেই সে সব অস্ত্র সংগ্রহ করেছিল৷

রপ্তানিকারকদের শীর্ষে ইউরোপ

অ্যামেরিকার বেসামরিক আগ্নেয়াস্ত্রের বাজারের তথ্য-পরিসংখ্যান একই চিত্র তুলে ধরে৷ যেমন ২০১০ সালে প্রায় ২৬ শতাংশ পিস্তলই এসেছিল ইউরোপ থেকে৷ অর্থাৎ সে দেশে বেসামরিক মালিকানায় যে প্রায় ৮০ লক্ষ বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ২০ লক্ষই ইউরোপে তৈরি৷ নরওয়ের আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা কেন্দ্র এ সংক্রান্ত নানা তথ্য সংগ্রহ করে থাকে৷ তাদের হিসাব অনুযায়ী অ্যামেরিকার আগ্নেয়াস্ত্রের বাজারে ইউরোপই সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারী অঞ্চল৷ ১২টিরও বেশি ইউরোপীয় দেশ সেই সব অস্ত্র রপ্তানি করে৷ তালিকার শীর্ষে অস্ট্রিয়া – তারপর ইটালি, জার্মানি ও ক্রোয়েশিয়ার স্থান৷ তাছাড়া ইটালির বেরেটা, জার্মানির সিগ সাউয়ার ও অস্ট্রিয়ার গ্লক-এর মতো কিছু কোম্পানি প্রয়োজনীয় লাইসেন্স নিয়ে খোদ অ্যামেরিকায়ই প্রচুর অস্ত্র তৈরি করে, যা আমদানি-রপ্তানির তালিকায় স্থান পায় না৷

Barack Obama Waffengesetze in den USA
অ্যামেরিকায় বেসামরিক মালিকানায় যে প্রায় ৮০ লক্ষ বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ২০ লক্ষই ইউরোপে তৈরিছবি: Reuters

বিশাল অঙ্কের লেনদেন

আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসার ক্ষেত্রে অ্যামেরিকার বাজার বিশ্বের বৃহত্তম৷ সে দেশের ন্যাশানাল শুটিং স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের অনুমান অনুযায়ী বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার মূল্যের আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচা হয়৷ এমন বাজার ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন৷ ক্রোয়েশিয়ার অস্ত্র রপ্তানির প্রায় ৯৮ শতাংশের গন্তব্যই অ্যামেরিকা৷ আগ্নেয়াস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি সব যে বেসরকারি, তা নয়৷ যেমন গত প্রায় ১৫ বছর ধরে বেলজিয়ামের হ্যার্স্টাল গ্রুপের মালিক সে দেশের ওয়ালোনিয়া অঞ্চলের সরকার৷

মোটকথা অ্যামেরিকার বেসামরিক আগ্নেয়াস্ত্র বাজারে কড়াকড়ি বেড়ে গেলে ইউরোপের অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের বেশ ক্ষতির মুখ দেখতে হবে বলে ধরে নেওয়া যায়৷ তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সামান্য সংস্কারের যেটুকু পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তাতে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই৷ অ্যামেরিকা ও ইউরোপের অস্ত্র প্রস্তুতকারকরা অবশ্য একযোগে ওবামা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের প্রতিরোধ করে চলেছে৷

ইউরোপের দু-মুখো নীতি

খোলা বাজারে নিয়ম মেনে বৈধভাবে পণ্য বিক্রি নিয়ে কিছু বলার থাকতে পারে না৷ কিন্তু পর্যবেক্ষকদের মতে, আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে ইউরোপে যে দু-মুখো নীতি দেখা যাচ্ছে, সেটাই আপত্তিকর৷ একদিকে ব্যক্তিগত মালিকানায় অস্ত্র রাখার সহজ নিয়মের জন্য অ্যামেরিকার সমালোচনা করা, অন্যদিকে নিজেরাই নিঃশব্দে সেই অস্ত্রের যোগান দিয়ে চললে ইউরোপের নৈতিকতার মুখোশ খসে পড়ে বৈকি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য