অ্যামেরিকায় জার্মান খাবার
২ এপ্রিল ২০১৩কয়েক দশক আগেও জার্মানিতে ভিন দেশি খাবারের তেমন প্রচলন ছিল না৷ ইদানীং চারিদিকেই দেখা যায় নানা দেশের রেস্তোঁরা৷ তুর্কি, চীনা, থাই, জাপানি, ইটালিয়ান, ভারতীয়, বাংলাদেশি, মঙ্গোলিয়ান, আর্জেন্টেনিয়ান কি নেই৷ বিশেষ করে অল্পবয়সীরা বাইরে কোথাও খেতে চাইলে সাধারণত কোনো বিদেশি রেস্টুরেন্টকেই বেছে নেয়৷
জার্মান খাবারের ‘কামব্যাক'
এখন দেখা যাক জার্মান খাবার অন্যান্য দেশে কতটা জনপ্রিয়৷ চলুন আপনাদের নিউ ইয়র্কে নিয়ে যাওয়া যাক৷ অস্ট্রিয়ান তারকা-রাধুনি কুর্ট গুটেনব্রুনার অ্যামেরিকানদের খাদ্যাভ্যাসে নতুন একটা প্রবণতা লক্ষ্য করছেন৷ তাঁর মতে, আমরা জার্মান ও অস্ট্রিয়ানরা এখন অ্যামেরিকানদের রসনাকে আবার জাগিয়ে তুলতে পারছি৷ কুর্ট গুটেনব্রুনার পাঁচটি রেস্তোঁরা ও কফি হাউসের মালিক৷ তাঁর লেখা রান্নার বইটিও হট কেকের মতো বিক্রি হচ্ছে বাজারে৷ অন্যদিকে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে জন্ম নেয়া মিমি শেরাটন ৫০ বছর আগে জার্মান রান্নার ওপর একটি বই লিখে নাম করেছেন৷ জার্মান খাবার রান্না করতে চাইলে আজও এই বইটি হাতে তুলে নেন বহু অ্যামেরিকান৷ তবে ৭০ ও ৮০-এর দশকে কিছুটা ভাটা পড়েছিল জার্মান খাবারের জনপ্রিয়তায়৷ বহু জার্মান রেস্তোঁরা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল৷ জানান ৮৫ বছরের প্রাণবন্ত প্রবীণা মিমি শেরাটন৷ মনে করা হতো জার্মান রান্নাবান্না অত্যন্তগুরুপাক ও তৈলাক্ত৷ এই ইমেজটাকে এখন পর্যন্তও পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলা যায়নি৷
জনপ্রিয়তায় ভাটা
‘‘আমি রাইনিশে সাওয়ারব্রাটেন বা সাওয়ার রোস্ট ভালবাসি'' বলেন শেরাটন৷ সেই ছেলেবেলা থেকেই এই জার্মান খাবারটির ভক্ত এই নারী৷ স্মৃতি হাতড়ে বলেন মিমি, নিউইয়র্কের ইয়র্কভিলে অনেক জার্মান রেস্টুরেন্ট ছিল, যেমন, ইয়্যাগার হাউস, কাফে গাইগার, ব্রেমেনহাউস ইত্যাদি৷ ৬০-এর দেশের শেষ নাগাদ ইয়র্কভিল থেকে জার্মান অভিবাসীরা আশে পাশের শহরতলীতে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে৷ আর সেই সাথে শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে জার্মান দোকানপাট ও রেস্তোঁরাগুলিও বন্ধ হতে থাকে৷
তবে জার্মান খাবার বলতে লোকে তখন মনে করতো তৈলাক্ত শুয়োরের মাংস ও ময়দা বা আলু দিয়ে তৈরি গোল গোল বল বা ডাম্পলিং৷ ৮০-এর দশকের শেষ নাগাদ পর্যন্ত অ্যামেরিকায় এই ধরনের খাবার দাবারের খুব একটা জনপ্রিয়তা ছিল না৷
চাকা ঘুরেছে
ইদানীং মনে হয় চাকাটা ঘুরেছে৷ শেরাটনের ভাষায়, ‘‘বিশেষ করে জার্মান বংশোদ্ভূত দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের মধ্যেই জার্মান খাবার দাবারের ব্যাপারে আগ্রহটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ নানা, দাদার দেশে রান্না বান্নাটা কেমন হতো, সেটাই এখন তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে চান৷ তাঁর লেখা রান্নার বইটি ইংরেজি ভাষায় লেখা বলে বুঝতেও সুবিধা হয় তাদের৷''
ভ্রমণপ্রিয় নারী মিমি শেরাটন প্রায় ২০ বার জার্মানিতে এসেছেন৷ এই দেশের ভাষা শিখতে তাঁর খুব একটা অসুবিধা হয়নি৷ কেননা তাঁর মা-বাবা পূর্ব ইউরোপের ইহুদি সম্প্রদায়ের এমন একটা গোত্র থেকে এসেছেন, যেখানে ইডিশ ভাষায় কথা বলা হয়৷ জার্মান ভাষার সঙ্গে ভাষাটির বেশ মিল রয়েছে৷ তাই জার্মান ভাষা অনায়াসে রপ্ত করতে পেরেছেন তিনি৷
শেরাটনের শৈশবে জার্মানভাষী এক গৃহপরিচারিকা কাজ করতেন তাঁদের পরিবারে৷ এই মহিলা প্রায়ই জার্মান খাবার দাবার রান্না করতেন৷ সেই সুবাস এখনও তাঁর নাকে লেগে আছে, যা শৈশবের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে৷ আর তাই তো জার্মান খাবারের ওপর রান্নার বই লেখার কথাটা মাথায় আসে মিমি শেরাটনের৷
হবিটি পেশা হয়নি
তবে রান্না সম্পর্কে এত আগ্রহ থাকলেও হবিটিকে কখনও পেশা হিসাবে নিতে চাননি তিনি৷ একটু হেসে বলেন মিমি শেরাটন, ‘‘আমি আসলে ঠিকমতো রান্নাই করতে পারিনা৷ বিশেষ করে বেক করাটা আমার হয়না৷ এজন্য শৃঙ্খলা ও নিপুণতার প্রয়োজন৷ আর এই গুণগুলিই আমার নেই৷'' সৃজনশীল এই নারী আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে নানা ধরনের উপাদান রান্নার পাত্রে ফেলেন৷ হয়ত বা নিজস্ব আইডিয়া থাকার কারণেই তাঁর রান্নার বইটি এত জনপ্রিয় হয়েছে৷
সাংবাদিক, লেখক ও রেস্তোঁরা সমালোচক হিসাবে সুদীর্ঘ এক পেশাগত জীবনের দিকে দৃষ্টি দিতে পারেন মিমি৷ সবশেষে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার রিপোর্টের জন্য দৈনিক চারটি পর্যন্ত রেস্তোঁরায় যেতে হতো তাঁকে৷ মিমি বলেন, ‘‘আমি জন্মগত ভাবেই এক সমালোচক৷ আমি অন্যদের বলতে ভালোবাসি, কী তাঁরা সঠিকভাবে করছেন, কোথায়ই বা ভুল তাঁদের৷ জার্মান রান্নার ব্যাপারে মার্কিনিদের এই উত্সাহ সাময়িক কিনা জানতে চাইলে খানিকটা ভেবে জানান মিমি, জার্মান খাবারের একটি ‘কামব্যাক' এটি৷ জার্মানির বিশেষ বিশেষ খাবার অ্যামেরিকানদের রান্নাঘরে কতটা জায়গা করে নিতে পারবে, সময়ই তা বলে দেবে৷