1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অ্যামেরিকার কারচুপি আমাদের সঙ্গে কতটা মিলে

৬ নভেম্বর ২০২০

কারচুপির অভিযোগ উঠছে মার্কিন নির্বাচনে৷ কিন্তু আদৌ কি সেই অভিযোগের সঙ্গে ভারত বা বাংলাদেশের  ভোটের কোনো তুলনা চলে?

https://p.dw.com/p/3kwSi
US Wahl 2020 | Wahlen in Florida
ছবি: Olivier Doulier/AFP/Getty Images

আদালত কি ট্রাম্পের অভিযোগ মানবে? শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা পৃথিবীরই এখন অন্যতম প্রশ্ন এটি৷ কারণ, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন পদ্ধতিতে নজিরবিহীন কারচুপি হয়েছে৷ আদালতকেই সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে৷

কীসের কারচুপি? ভারত-বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভোটে কারচুপি কোনো নতুন শব্দ নয়৷ গণতন্ত্রের সব চেয়ে বড় উৎসবে একটু আধটু 'কারচুপি' হবে, দু'একটা গুলি চলবে, তিন-চারটে বুথ দখল হবে, পাঁচ-ছয়টা রিগিং হবে-- এতো জানা কথা! ভোট হচ্ছে অথচ বিরোধীরা কারচুপির কথা বলছেন না, বহু বছরের মধ্যে এমন নজির মনে করতে পারার অভিযোগ কারো বিরুদ্ধে নেই৷

২০১৮ সালের একেবারে শেষ দিকে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল৷ বিরোধীরা কারচুপির প্রসঙ্গ তুলতে শুরু করেছিলেন ভোটের অনেক আগে থেকেই৷ অভিযোগ ছিল, বিরোধীদের মনোনয়নই জমা দিতে দেয়া হচ্ছে না৷ যাঁরা করছেন, তাঁদের মনোনয়ন তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে অথবা বাতিল করা হচ্ছে৷ যা রটে তার সব ঘটে না৷ আবার এও সত্য, যা রটে তার অনেক কিছুই ঘটে৷ ২০১৮ সালের বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে শুধু দেশের ভিতর নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও বহু প্রশ্ন উঠেছিল৷ যে ভাবে ভোটের আগেই সেখানে কোনো কোনো বুথে ব্যালট ভর্তি বাক্স উদ্ধার হয়েছিল, পাশে দাঁড়িয়ে থেকে নেতারা ভোট করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল, ভোট গণনায় কারচুপির প্রসঙ্গ উঠেছিল-- তা নজিরবিহীন নয়৷ প্রতিবেশী দেশ ভারতে ওই একই বছরে আর একটি নির্বাচন হয়েছিল৷ পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ কারচুপির আরও বড় নজির তৈরি হয়েছিল সেখানে৷

পঞ্চায়েত নির্বাচন ভারতীয় যুক্তরাজ্য কাঠামোয় সব চেয়ে নীচের স্তরের ভোট৷ গ্রামীণ সরকার তৈরি হয় এর ভিত্তিতে৷ বিশেষজ্ঞরা বলেন, পঞ্চায়েত হলো বুনিয়াদি স্তর৷ সেখানে যে দল শক্ত ঘাঁটি গড়তে পারবে, বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনেও তাদের হারানো কঠিন৷ তো সেই ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করেছিল৷ তৃণমূল বলেছিল, বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে পারেনি, কারণ মনোনয়ন দেওয়ার মতো নেতাই তাদের নেই৷ বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, তৃণমূলের 'সন্ত্রাসে'র সামনে বিরোধীরা মনোনয়ন জমাই দিতে পারেনি৷ বিষয়টি পৌঁছেছিল আদালতেও৷ হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেলে মনোনয়ন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট৷ কিন্তু তাতেও শেষ পর্যন্ত বিশেষ লাভ হয়নি৷ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৪ শতাংশ আসন জিতে গিয়েছিল শাসক দল৷ খুন হয়েছিল অসংখ্য৷ যে কয়টি আসনে ভোট হয়েছিল, সেখানে ভোটের খবর করতে যাওয়া সাংবাদিকরা আইনশৃঙ্খলার খবর নিয়ে ফিরেছিলেন৷ বোমাবাজি, বুথ দখল, গ্রামের পর গ্রাম গুন্ডাবাহিনীর দাপাদাপি-- এ সবই ছিল গণতন্ত্রের সব চেয়ে বড় উৎসবের সব চেয়ে বড় খবর৷

জাতীয় নির্বাচনে অবশ্য ইদানীং অশান্তি খানিক কমেছে৷ বিশেষ করে টি এন সেশনের নির্বাচনী সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধির পরে ইদানীং কারচুপির আলোচনা সামান্য কমেছে৷ তবে একেবারে নেই, এমন নয়৷ ইভিএম নিয়ে বিস্তর অভিযোগ৷ জাতীয় বা বিধানসভা নির্বাচনেও সুযোগ মতো শাসক দল বুথ দখল, রিগিং, খুনখারাপিতে প্রশ্রয় দেয়৷ তবে তা পঞ্চায়েত ভোটের মতো নয়৷

মার্কিন বিশ্বে নির্বাচনে কারচুপির সঙ্গে এই বিষয়গুলি জড়িত নয়৷ সেখানে মানুষ বিনা বাধায় গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন৷ চাইলে বাড়ি বসে পোস্টাল ব্যালট ভোট দিতে পারেন৷ ভোটের আগেই ভোট দিয়ে দিতে পারেন লাখ লাখ জনতা৷ তাঁরা জানিয়ে দিতে পারেন কাকে ভোট দিয়েছেন৷ ভোটের লাইনে নিরাপত্তারক্ষীদের রক্তচক্ষু থাকে না৷ বুথ দখল হয়ে যেতে পারে, একজনের ভোট অন্যজন দিয়ে দিতে পারেন, ভোটের আগেই ব্যালট বাক্স ভরে যেতে পারে-- এ সব ভয় ও দেশে নেই৷ তারপরেও যে কারচুপির প্রসঙ্গ উঠছে, তা পদ্ধতিগত৷ গণতান্ত্রিক ভাবে সে প্রশ্ন উঠছে৷ গণতান্ত্রিক উপায়েই তার সমাধানের রাস্তা তৈরি হচ্ছে৷ পোস্টাল ব্যালট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প৷ আদালত জানাবে সেই অভিযোগ বৈধ না অবৈধ৷

ভারতের সংবিধান বিশেষজ্ঞ তথা বিশিষ্ট অধ্যাপক অভ্র ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''অ্যামেরিকার ভোট প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল৷ সে কারণেই সেখানে সাংবিধানিক প্রশ্ন উঠছে৷ করোনাকালে যেভাবে সেখানে ভোট হয়েছে, তা এ সব প্রশ্ন ওঠারই কথা৷ ট্রাম্প যে কায়দায় কথা বলছেন, তা নিয়ে আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু যে প্রসঙ্গ গুলি সামনে আসছে তা গণতান্ত্রিক৷'' অভ্রবাবুর বক্তব্য, অ্যামেরিকায় যে কারচুপির প্রসঙ্গ উঠছে, তার সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তানের নির্বাচন কারচুপির কোনো তুলনা চলে না৷ পদ্ধতিগত গণতান্ত্রিক প্রশ্ন আর বুথ দখলের কোনো তুলনা হয় না৷

বাংলাদেশের সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে আমাদের দেশে আইন আছে৷ কিন্তু আইনকে তো আমলে নিতে হবে! আমলে না নিলে কী করব? জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আদালতের কোনো এক্তিয়ার নেই৷ গত নির্বাচনে হাজার হাজার অভিযোগ পড়েছে৷ কিন্তু সেগুলিকে আমলই দেওয়া হয়নি৷ ইউরোপ-অ্যামেরিকা আইন দিয়ে চলে, আমাদের এখানে সব গায়ের জোরে চলে৷''

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দীপক ভট্টাচার্য অবশ্য মনে করেন, প্রকৃতিগত তফাত থাকলেও উপমহাদেশ এবং অ্যামেরিকার কারচুপির পদ্ধতিগত তফাত নেই৷ কারচুপি, কারচুপিই৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''অ্যামেরিকায় অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হয়৷ কিন্তু পদ্ধতিটিকে ফুলপ্রুফ বলা যায় না৷ কারচুপি ও তার সমাধান আইনি পদ্ধতিতে হয়৷ এটা অ্য়ামেরিকা ও আমাদের দেশে এক৷ কিন্তু বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি দলের ছাপ থাকে তো পক্ষপাতহীন রায় পাওয়া আমার মতে কষ্টকর৷ বুশের সময় রিপাবলিকানদের ১২ জন বিচারপতি ছিলেন, ডেমোক্র্যাটদের ১১৷ বুশ জিতেছিলেন৷ এই নির্বাচনে ট্রাম্পও বারবার বলছেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টে যাবেন৷ এখন রিপাবলিকানদের ছয় জন বিচারপতি, ডেমোক্র্যাটদের তিনজন৷’’

কারচুপি, কারচুপিই৷ শুধু নির্বাচন নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসন যে কারচুপি করে থাকে, তা নিয়ে বিতর্ক কম নয়৷ এ বারের নির্বাচনেও বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে৷ প্রশ্ন উঠলে তা নিয়ে আলোচনা হবে, এটাই গণতন্ত্রে দস্তুর৷ মুশকিল হয়, যখন প্রশ্নগুলোকে গায়ের জোরে এড়িয়ে যাওয়া হয়৷ ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সঙ্গে অ্যামেরিকার তফাত সম্ভবত সেখানেই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য