অ্যাপোলো ১১: চন্দ্র জয়ের সাক্ষী
পেরিয়ে গেল ৫০ বছর৷ প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের বুকে পা রেখেছিলেন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং৷ যা মানব সভ্যতার অগ্রাযাত্রায় যোগ করেছিল ভিন্নমাত্রা৷ সেদিনের স্মৃতিচিহ্ন আজো বিস্ময় জাগায়৷
জুলাই ২০, ১৯৬৯: দৃপ্ত পদক্ষেপ
চাঁদের বুকে মানুষের প্রথম পায়ের ছাপ৷ চন্দ্রপৃষ্ঠে পা রাখার অভিজ্ঞতায় নীল আর্মস্ট্রং বলেছিলেন সেই বিখ্যাত কথাটি, ‘‘মানুষের জন্য এটি একটি ছোট্ট পদক্ষেপ, কিন্তু মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় এটি অনন্য সোপান৷’’ কিভাবে এবং কখন তিনি এই বাক্যটি বলেছেন আর কণ্ঠস্বর কিভাবে ভুলে গেছেন, তার আলোচনা আজও চলছে৷
জুলাই ১৬, ১৯৬৯: চাঁদের দিকে যাত্রা
এবার আরেকটু পেছনে যাওয়া যাক৷ যাত্রা শুরুর আগে, কেনেডি স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে একরাশ উত্তেজনা৷ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে শেষ মূহূর্তের সবকিছু দেখভাল করছিলেন অ্যাপোলো প্রোগ্রামের পরিচালক স্যামুলেয় সি ফিলিপস৷ তারপর চন্দ্র জয়ের আকুলতায় ছুটতে থাকে অ্যাপোলো ১১৷ সঙ্গে ছিলো তিন যাত্রী: নীল আর্মস্ট্রং, এডউইন আলড্রিন এবং মাইকেল কলিন্স৷
জুলাই ১৬, ১৯৬৯: স্পেস টিভি
অ্যাপোলোর উড়ান দিনের কথা৷ অসংখ্য মানুষ ভিড় করেছে নাসা স্পেসপোর্টের কেনেডির স্পেস সেন্টারের আশেপাশে৷ তাদের কেউ সমুদ্র পাড়ে আবার কেউ রাস্তায় তাঁবু খাটিয়ে কোনোরকম সময় পার করছে৷ লক্ষ্য অ্যাপোলোকে বিদায় দেয়া, আর ইতিহাসের স্বাক্ষী হওয়া৷ উড়ান দেখতে সেদিন জড়ো হয়েছিলেন প্রায় লাখ দশেক মানুষ৷
জুলাই ১৬, ১৯৬৯: লাইটস, ক্যামেরা, অ্যাকশন
সেদিন শুধু লাখো মানুষ জড়ো হয়েছে, তা কিন্তু নয়৷ হাজারো সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন অ্যাপোলো মিশনের সংবাদ সংগ্রহে৷ সেদিন তিন হাজার ৪৯৭ জন সাংবাদিক কেনেডি স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের প্রেস এরিয়াতে সমবেত৷ এটা হলো অফিসিয়ালি নিবন্ধিত সাংবাদিকদের সংখ্যা৷ ধারণা করা হয়, সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি৷
জুলাই ২১, ১৯৬৯: খুব কাছে
চাঁদ প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসছে লুনার মডিউল ঈগল৷ ছবিটি তুলেছিলেন মাইকেল কলিন্স৷ ঈগল যখন আসছিল তখন তার পেছনে চাঁদ৷ আর সামনে দিগন্ত বিস্তৃত পৃথিবী৷ আর্মস্ট্রং এবং আলড্রিন যখন চাঁদে পা রাখছিলেন, তখন নির্দেশনা অনুযায়ী কলম্বিয়া কমান্ড মডুলে অবস্থান করছিলেন কলিন্স৷ সাড়ে একুশ ঘণ্টা সে চাঁদকে একা প্রদক্ষিণ করেন৷
জুলাই ২০, ১৯৬৯: টিমওয়ার্ক
২০০৯ সালে নাসার পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়৷ সেখানে কলিন্স বলেন, ‘‘চন্দ্র পৃষ্ঠে যা ঘটতে যাচ্ছে, তা নিয়ে আমি বেশ উৎসাহী ছিলাম৷ আমি জানি, যদি আমি দাবি করি অ্যাপোলোরর তিনজনের মধ্যে আমি সেরা ছিলাম, তাহে এটা খুব বোকামি হবে না হয় আমি মিথ্যেবাদী৷ কিন্তু চন্দ্রাভিযানের একজন হতে পেরে আমি খু্বই সন্তুষ্ট৷’’
জুলাই ২০, ১৯৬৯: ‘ঈগল অবতরণ করেছে!’ কিন্তু...
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই, সময়ের ঘড়িতে তখন রাত ৮টা ১৭ বেজে ৫৮ সেকেন্ড৷ নীল আর্মস্ট্রং ক্ষুদ্র বার্তায় জানালেন, ‘‘ঈগল অবতরণ করেছে!’’ কিন্তু তারা দুজন চাঁদের মাটিতে পা রাখতে আরো সময় নিয়েছিলেন৷ অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ৷ ২১ জুলাই, রাত ২টা ৫৬ মিনিট ২ সেকেন্ডে প্রথম মানব হিসেবে চাঁদের বুকে পা রাখেন নীল আর্মস্ট্রং৷
জুলাই ২৭, ১৯৬৯: নমুনা নং ১০০০৩
আড়াই ঘণ্টার চন্দ্রপৃষ্ঠে হাঁটাহাঁটি করেন আর্মস্ট্রং আর আলড্রিন৷ এই সময়ের মধ্যে তাঁরা ৪৭ পাউন্ডের সমপরিমাণ নানা বস্তু যোগাড় করেন৷ যা ফেরার সময় পৃথিবীতে নিয়ে আসেন৷ ১০০০৩ নম্বর নমুনাটিও সেই সংগ্রহের ছোট্ট একটি উপাদান৷ অ্যাপোলো থেকে দুই হাজার ৪১৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷ যার ওজন প্রায় চারশো কেজি৷ ‘লুনার স্যাম্পল আর ফটো ক্যাটালগে’ চন্দ্র উপাদানের সংগ্রহ আর বর্ণনা আছে৷
জলপাই গাছের ডাল
চাঁদ থেকে নিয়ে আসা নমুনা সংগ্রহ করে ক্ষান্ত হয়নি কর্তৃপক্ষ৷ নভোচারীদের ব্যবহার্য সব উপকরণও সংগ্রহে রেখেছে তারা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি ব্রোচ৷ নীল আর্মস্ট্রংয়ের এই ব্রোচটি যেন চন্দ্রবিজয়ের প্রতীক হয়ে আছে৷ জলপাই গাছের ডাল যেন বলছে শান্তির কথা৷
জুলাই ২৪, ১৯৬৯: পৃথিবীর বুকে ফেরা
নভোচারীরা অবতরণ করলেন প্রশান্ত মহাসাগরে৷ হাওয়াই থেকে ৮১২ নটিক্যাল মাইল আর ইউএসএস হর্নেট থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল তাঁদের অবতরণের জায়গাটি৷ ফেরার পর, তাঁদের কিন্তু কাস্টমসের ফরম পূরণ করতে হয়েছে৷ এমনকি তাদের ঘোষণা দিতে হয়েছে যে, তাঁদের কাছে চাঁদের পাথর আছে৷ শরীরের রোগ বালাইয়ের সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘টু বি ডিটারমাইন্ড৷’ তারপর তাদের কোয়ারান্টাইন ট্রেলারে করে ২১দিন বিচ্ছিন্ন রাখা হয়৷
সেপ্টেম্বর ২৩, ১৯৬৯: নভোচারীর সাজে মহাতারকারা
৪৫ দিনের বিশ্বসফরে বের হন মহাকাশচারীরা৷ এই সময়ে ২৪টি দেশ আর ২৭টি নগর যান তাঁরা৷ যুক্তরাষ্ট্র সরকারও চেয়েছে তাদের নভোমণ্ডলীয় অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে শেয়ার করতে৷ যেখানে মহাকাশচারীরা গিয়েছেন, সেখানেই পেয়েছেন উষ্ণ অভ্যর্থনা৷ মেক্সিকো সিটিতেও পেয়েছেন সংবর্ধনা৷