1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অস্তিত্ত্ব রক্ষার লড়াইয়ে হুয়াওয়ে 

ইনেস পোল
১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

হুয়াওয়েকে চীনের সরকার কখনও তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দেয়নি বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান লিয়াং হুয়া এর৷ ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং ব্যবসা পরিকল্পনাও তুলে ধরেছেন৷

https://p.dw.com/p/3V1UT
ছবি: DW

সারিবদ্ধ গাছ, জলাধার আর দৃষ্টিনন্দন সব ভবন নিয়ে দক্ষিণ চীনের শেনজেন শহরে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ক্যাম্পাস৷ বৈশ্বিক ডেটা নেটওয়ার্কের দুনিয়ায় আধিপত্যের প্রতিযোগিতায় লড়ছে প্রতিষ্ঠানটি, সেটি এখানকার কর্মপরিবেশ দেখে বোঝা কঠিন৷

হুয়াওয়ে এরইমধ্যে পঞ্চম প্রজন্মের ডেটা প্রযুক্তি বা ফাইভজির নেতৃত্ব দিচ্ছে৷ যার উপর ভর করে বিকাশ ঘটছে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, কারখানা থেকে শুরু করে স্মার্ট শহর কিংবা ইন্টারনেট অব থিংসের৷ এজন্য যে নেটওয়ার্ক অবকাঠামো দরকার হচ্ছে সেই ব্যবসার নেতৃত্বেও হুয়াওয়ে৷

অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চীনা কোম্পানিটিকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন৷ ওয়াশিংটনের দাবি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি কোম্পানিটিকে গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করতে পারে৷ যার প্রেক্ষিতে বিশেষ লাইসেন্স বা অনুমোদন ছাড়া অ্যামেরিকান কোম্পানিগুলোকে হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন৷

এই চ্যালেঞ্জ হুয়াওয়ে কিভাবে মোকাবেলা করছে এ নিয়ে ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোলের সঙ্গে কথা বলেছেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান লিয়াং হুয়া৷ তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করার পর আমাদের অবস্থা হয়েছে গুলিবিদ্ধ অসংখ্য ছিদ্র নিয়ে চলা একটি বিমানের মতো৷ তারপরও আমরা ঠিকঠিক উড়ে ঘরে ফিরতে পেরেছি৷'' তিনি মনে করেন হুয়াওয়েকে এখন অনেকগুলো সমস্যার সমাধান করতে হবে৷ একে একে ছিদ্রগুলো সারতে হবে৷ এজন্য নিজেদের পণ্যগুলোকে নতুন করে সাজাতে চান তিনি৷ বলেন, ‘‘পরিস্থিতির বিবেচনায় এটি আমাদের জন্য অস্তিত্ব রক্ষার এক বছর৷''

তারপরও এই ধাক্কায় হুয়াওয়ের আয় আগামী দুই বছরে তিন হাজার কোটি ডলার কমে যেতে পারে৷ কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই নিজেই গত জুনে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন৷

এই প্রসঙ্গে লিয়াং বলেন আপাতত যেসব দেশ তাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছে সেখানেই তারা ব্যবসায় মনযোগ দিচ্ছেন৷ ‘‘যেসব দেশ এবং অঞ্চলে এখন হুয়াওয়ের কার্যক্রম রয়েছে সেখানে আমরা আরো বেশি দৃষ্টি দিচ্ছি৷ এসব দেশে আমরা ব্যবসার প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর বিষয়ে সচেষ্ট হয়েছি৷''

নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতি দুই পক্ষেরই

সমস্যা হল এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখাটাও তাদের জন্য এখন চ্যালেঞ্জিং৷ যেমন স্মার্টফোনের সফটওয়্যার আর সেমিকন্ডাক্টরের জন্য হুয়াওয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেল বা কোয়ালকমের মত প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল৷ বিশেষজ্ঞদের মতে হুওয়ায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা শুধু যে চীনা কোম্পানিটিরই ক্ষতি করছে তা নয় বিপাকে পড়েছে এই মার্কিন কোম্পানিগুলোও৷

আবার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক নেটওয়ার্ক অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে হুয়াওয়ের প্রযুক্তিতে৷ সেসব জায়গায় সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে অবশ্য দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা সাময়িক প্রত্যাহারও করেছে৷

ফাইভ জি: মেইড ইন চায়না

বিশ্বে খুব কম প্রতিষ্ঠানই আছে যারা হুয়াওয়ের মতো এত কম খরচে নির্ভরযোগ্য ফাইভজি অবকাঠামো আর হার্ডওয়্যার সরবরাহ করতে পারে৷ ফাইভজি প্রযুক্তির সবচেয়ে বেশি পেটেন্টও এখন হুয়াওয়ের দখলে৷ পশ্চিমের সমালোচকদের ধারণা গোটা এই প্রযুক্তিটিই সামনে হুয়াওয়ে আর বেইজিং নিয়ন্ত্রণ করবে৷

তবে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন লিয়াং৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সঙ্কীর্ণ মনের পরিচয় দিতে চাই না৷ এমন কিছু করতে চাই না যেখানে সব কিছু নিজেরাই করব৷ আমরা যদি সব পণ্য নিজেরাই তৈরি করি তাহলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব৷ আপনি যদি হুয়াওয়ের সরবরাহ চেইনের দিকে তাকান তাহলে পরিস্কার হবে যে, আমরা অব্যাহতভাবে বিশ্বায়নের উপর নির্ভর করে আসছি৷''

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কারণে এখন অনেক যন্ত্রাংশ নিজেরাই উদ্ভাবন করতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও জানান তিনি৷ বলেন, ‘‘যক্তরাষ্ট্রের সরকার যদি অ্যামেরিকান কোম্পানিগুলোকে হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা চালুর অনুমতি দেয়, তাহলে এখনও আমরা নিজেদের সরবরাহ চেইনের জন্য ইউএস যন্ত্রাংশ কিনব৷''

হুয়াওয়ে কি হুমকি?

চীন ফাইভজি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবিষ্যতে বৈশ্বিক ড্যাটা নেটওয়ার্ক আর সার্ভারে বিপর্যয় ঘটাতে  পারে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা৷ জনগণের উপর নজরদারির প্রযুক্তি, সেন্সরশিপের নানা ব্যবস্থা আর জনজীবনে দেশটির সরকারের নিয়ন্ত্রণের উদাহরণ টেনে এর স্বপক্ষে যুক্তি দেন অনেকেই৷ ট্রাম্পের মতে হুয়াওয়ে এজন্য ‘ভীষণ ভয়ানক' এক কোম্পানি৷

এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে লিয়াং দাবি করেছেন তাদের নেটওয়ার্ক যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য৷ তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্র থেকে হুয়াওয়েকে অতীতে কখনই তথ্য সরবরাহের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়নি৷ এমনকি ভবিষ্যতে এমন কোনো নির্দেশনা আসলেও, আমরা তা অনুসরণ করব না৷''

লিয়াং জানান, হুয়াওয়ে শুধু যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে, কোন নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করে না৷ ডেটা সরবরাহ ব্যবস্থায় তাদের প্রবেশাধিকারও নেই৷