অসময়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দেশব্যাপী বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ যার মধ্যে অধিকাংশই রোগীই ঢাকার৷
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো
সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর মূল মৌসুম শেষ হলেও অক্টোবর ও নভেম্বরে উল্লেখযোগ্যহারে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে৷ গত অক্টোবরে ১৬৩ জন এবং চলতি মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত ২৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে৷ ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা মশারী ব্যবহারের নির্দেশনা দেন যাতে তা আর সুস্থ মানুষের মাঝে সংক্রমিত না হয়৷ দিনের বেলা মশার কামড় থেকে বাঁচতে বিভিন্ন ধরণের ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ ও দেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা৷
অসময়ে বৃষ্টি
বিএসএমএমইউ এর সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বর্ষা মৌসুমের শেষে কয়েকদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়াতে এডিস মশার লার্ভা বংশবিস্তার ও বৃদ্ধিতে সুযোগ পেয়েছে৷ তবে গত বছরের তুলনায় এবারের ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুহারের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম৷’’
হাসপাতালে পৃথক ওয়ার্ড
রাজধানী ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য তাঁরা ডেডিকেটেড ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করেছেন৷ এক্ষেত্রে যাদের করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু ও রয়েছে তাঁদের ঢামেক কর্তৃপক্ষ ভর্তি করলেও নন-কোভিড রোগীদের সলিমুল্লাহ মেডিকেল ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা৷
সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ
২০১৯ সালে ডেঙ্গু রোগে ব্যাপক প্রাণহানি ও লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর এ বছরের শুরু থেকেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ডেঙ্গুবিরোধী অভিযান লক্ষ্য করা যায়৷ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পরিচালিত এসব অভিযানে বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা করা ছিল চোখে পড়ার মতো৷
পাওয়া গেল লার্ভা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সেগুনবাগিচার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিত্যক্ত জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তাতে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া যায়৷ পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিষ্ঠানটিকে অতিসত্ত্বর এসব জায়গা পরিষ্কারের নির্দেশ দেন৷
অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বাড়িতেই
চিকিৎসকের দেওয়া তথ্যমতে, ডেঙ্গু আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীরা বাড়িতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করেই সুস্থ হয়ে থাকে৷ এক্ষেত্রে মাত্র ৫ শতাংশ রোগীদের কেবল অবস্থার অবনতি হয় এবং তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়৷
প্রয়োজন সচেতনতা
সরকারের একার পক্ষে ডেঙ্গু নির্মুল করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷ এজন্য প্রয়োজন সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ৷ সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়ে বাড়ির চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পানি জমতে পারে এমন জায়গাগুলোতে দুইদিনের বেশি পানি জমতে না দেওয়ার মতো ব্যবস্থা নিলেই ডেঙ্গু থেকে বাঁচা সম্ভব বলে মনে করেন তাঁরা৷
ধোঁয়ায় কাজ হয় না
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একদল গবেষকের গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, মাত্র দুই মিলি পানিতে এডিস মশার লার্ভা বংশবিস্তার করতে সক্ষম৷ তাই ধোঁয়া ছিটিয়ে খুব একটা লাভ নেই, এর চেয়ে বরং অধিকতর বৈজ্ঞানিক উপায়ে এডিস মশা বন্ধ্যাকরণের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার কার্যকর উপায়ে রোধ করা সম্ভব৷
ডেঙ্গু বিস্তারে উপযুক্ত পরিবেশ
বৃষ্টির পানিতে ডেঙ্গু মশার বিস্তার ঘটে সবচেয়ে বেশি৷ বসতবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এয়ারকন্ডিশনার, ডাবের খোসা, ফুলের টব, পরিত্যক্ত মাটির পাত্র, নির্মাণাধীন ভবন এসব জায়গাগুলোতে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটে সবচেয়ে বেশি৷ তাই ডেঙ্গু মশার বিস্তাররোধে সম্ভাব্য আবাসস্থল ধ্বংসের কোন বিকল্প নেই৷