অর্থ-বাণিজ্য-সমরে বন্ধু চীন-পাকিস্তান
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যত শীতল হোক না কেন, চীনের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক বরাবরই বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ৷ কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সূত্রপাতটা, বলা ভাল কূটনৈতিক বন্ধুত্বের শুরুটা কবে?
রাজনৈতিক সম্পর্ক
আলাপের সূত্রপাত ১৯৫১ সাল নাগাদ হলেও ১৯৬০-১৯৭০ সালের মাঝামাঝি দুই দেশের সম্পর্ক ভাল হতে শুরু করে ৷ চীন-পাকিস্তান পরস্পরের স্থায়ী সহযোগী হয় ঠিক সেই সময়৷
ঐতিহাসিক চুক্তি
১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের কিছুটা অংশ চীনের মানচিত্রে দেখা যায়৷ ১৯৬৩ সালে সীমানা সংক্রান্ত একটি চুক্তিও হয় তাদের মধ্যে ৷
ভারত-পাকিস্তান বিবাদ
১৯৬৫ সালে ভারত-পাক বিবাদে চীন পাকিস্তানের পক্ষ নেয় ৷ ১৯৬৫ সালে দুই দেশের পাঠ্যবইয়ে দুই দেশের নানা ঘটনা জায়গা পায়৷ সিনেমা প্রদর্শন ছাড়াও সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল অন্য ৷ পাকিস্তানই একমাত্র দেশ, যাদের বিমান সোজা বেইজিংয়ে যাতায়াত শুরু করে ৷
প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ
রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের সময় বিরোধিতা করেছিল চীন৷ ১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্টের আগে বাংলাদেশকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা দেওয়ারও বিরোধী ছিল চীন ৷ পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রধান উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার পাকিস্তানের সহায়তায় চীন সফরে যান বললে ভুল হবে না ৷
নিরাপত্তা সহায়তা
নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে পাকিস্তানকে সহায়তা করতে থাকে চীন ৷ অন্যদিকে তাইওয়ান, তিব্বত, শিজিয়াং ও অন্য ইস্যুতে চীনকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করতে থাকে পাকিস্তান৷
অর্থনৈতিক সম্পর্ক
দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কও জোরদার হয় ৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে পাকিস্তানেই৷ দু দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল্য প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকারও বেশি৷ ২০০০-২০১৫ সালে বাণিজ্যিক চুক্তির পরিমাণ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে৷
সামরিক সম্পর্ক
সামরিক ক্ষেত্রেও যুযুধান দুই পক্ষের বন্ধুত্ব চোখে পড়ার মতো৷ যৌথ মহড়া, অস্ত্র নির্মাণ, অফিসারদের প্রশিক্ষণ, সন্ত্রাসদমনে পারস্পরিক সহায়তা সর্বত্র পাশে থেকেছে তারা ৷
ক্ষেপণাস্ত্র সহায়তা
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পাকিস্তানের শাহিন ক্ষেপণাস্ত্রের পিছনেও চীনের অবদান রয়েছে ৷ পাকিস্তানে বিমান বাহিনীতে চীনা প্রশিক্ষণ বিমান, চীনা রাডার সিস্টেমের ব্যবহার তো রয়েছে ৷ দুই দেশ একত্রে জেএফ-১৭-এর মতো যুদ্ধবিমান তৈরি করছে বলেও বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন৷
পারমাণবিক প্রকল্প
পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্পকে সমর্থন জানিয়ে এসেছে চীন৷ পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পারমাণবিক কারখানা নির্মাণে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) ছাড়াও চীনের জাতীয় নিউক্লিয়ার কর্পোরেশনও সহায়তা করেছে ৷
অর্থনৈতিক করিডোর
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) তৈরিতে চীনের তরফে প্রায় ৫০ লাখ কোটি টাকা সহায়তার প্রস্তাব রাখা হয়েছে ৷ এই প্রকল্পের অধীনে সড়ক, বিদ্যুৎ কারখানা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, বন্দর তৈরি হবে পাকিস্তানে ৷ বাড়বে কর্মসংস্থান ৷
সাংস্কৃতিক সমঝোতা
ইসলামাবাদে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজের তরফে মিশবাখ রশিদ ডয়েচে ভেলেকে জানিয়েছিলেন চীনা ভাষা শেখার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ৷ ২০০ থেকে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০০-এ ৷
কাশ্মীর সংকট
কাশ্মীর ইস্যু নিয়েও বারবার পাকিস্তানের পাশেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে থেকেছে চীন ৷ আকসাই চীন ইস্যুতেও চীনকে সমর্থন জানিয়েছে পাকিস্তান ৷