1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভিযোগে ডুবেও মন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন না এম জে আকবর

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
১৬ অক্টোবর ২০১৮

অভিযোগকারীদের যেন লাইন লেগেছে৷ সবারই এক কথা– যৌন নিপীড়ন করেছেন কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক এম জে আকবর৷ অভিযোগ অস্বীকার কর মানহানির মামলা করেছেন তিনি৷ কিন্তু আলোচনা-সমালোচনা তাতে থামছে না৷

https://p.dw.com/p/36dNb
M J Akbar - Vom Journalist zum Politiker
ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক এম জে আকবরছবি: IANS

ইতিমধ্যে উঠেছে পদত্যাগের দাবি৷ কিন্তু সে দাবি অগ্রাহ্য করে এম জে আকবর দাবি করছেন, এসবই সাজানো এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ৷ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত৷ ইতিমধ্যে মানহানির ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছেন মি-টু আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা মহিলা সাংবাদিক প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে৷ আকবর ইস্তফা না দেওয়ায় ক্ষূব্ধ মহিলা সাংবাদিক মহল৷ বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে সর্বস্তরে৷ প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপর চাপ বাড়ছে আকবরকে মন্ত্রীসভা থেকে সরাবার৷ কিন্তু সরকার এবং বিজেপির তরফে এ বিষয়ে কোনো উচ্চবাচ্য নেই৷ দলের তরফে শুধু বলা হয়েছে, আকবর তাঁর নিজের বক্তব্য সাফ জানিয়েছেন, অভিযোগকারী মহিলারা সেটা মানুন বা না মানুন৷ কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ এবং স্বশক্তিকরণ মন্ত্রী আটওয়াল সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘দোষী প্রমাণিত হলেই মন্ত্রীর ইস্তফার প্রশ্ন আসবে৷ তার আগে নয়৷ দেখতে হবে সোশ্যাল মিডিয়া মি-টু আন্দোলন মহিলাদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগ জানাবার একটা মঞ্চে যেন পরিণত না হয়৷ কারোর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন যৌন নিগ্রহের অভিযোগ এনে ব্যক্তিগত রোষ যেন মেটানো না হয়৷ অভিযোগের বেশিরভাগই অশালীন স্পর্শ বা অভব্যতার৷ তাই আগে দরকার সত্যতা প্রমাণ করার৷ সরকার এ বিষয়ে নির্বিকার নয়৷ এইসব অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারকের নেতৃত্বে এক তদন্ত কমিটি গঠন করবেন৷ ১০-১৫ বছর পরে আনা এইসব অভিযোগের সত্যতা আগে প্রমাণ হোক, তারপর ব্যবস্থা৷''

‘সোশ্যাল মিডিয়া মহিলাদের প্রতিবাদের দরজা খুলে দিয়েছে, খুবই গুরুত্বপূর্ণ ’

মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী মনে করেন, কর্মস্থলে অশালীন আচরণের অভিযোগের তদন্তে কোনো সময়সীমা থাকবে না৷ চারজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং একজন বিশিষ্ট আইনজীবী নিয়ে এই একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে৷ নির্ভয়া গণধর্ষণকাণ্ডের পর যেমন বার্মা কমিশন গঠিত হয়েছিল, এটা হবে তারই অনুরূপ৷ তদন্তের পর রিপোর্ট পেশ করবেন সরকারের কাছে৷ অফিসে বা কর্মস্থলে মহিলাদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সুপারিশ থাকবে তাতে৷ 

বিশিষ্ট মহিলা সাংবাদিক ইন্দ্রানী বাগচী ডয়চে ভেলেকে বিলম্বে অভিযোগ আনার প্রসঙ্গে বললেন,‘‘মহিলাদের প্রতি যখন অন্যায় আচরণ করা হয়েছিল, তখন তাঁরা মুখ বুঁজে সহ্য করেছিলেন৷ এখন তাঁরা সরব হয়েছেন৷ সোশ্যাল মিডিয়া তাঁদের প্রতিবাদের দরজা খুলে দিয়েছে৷ আমি মনে করি, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ হতে পারে দু-একটি ক্ষেত্রে হয়ত ব্যতিক্রম আছে৷ কিন্তু সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে এটা সত্যি৷ এর বিহিত করা জরুরি৷ কারণ, ২০১৮ সালে এসেও এই ধরনের অভিযোগের সঙ্গে একটা কলঙ্কের দাগ লেগে যায় মহিলা চরিত্রে৷ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কর্মস্থলে সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য একটালিঙ্গ সংবেদনশীলতা গড়ে তোলা একান্ত দরকার৷ এটা শুধু ভারতেই নয়, গোটা বিশ্বেই লিঙ্গ সংবেদনশীলতার অভাব আছে৷ শুধু অফিসেই নয়, লিঙ্গ সংবেদনশীলতা গড়ে তুলতে হবে গোড়া থেকে৷ হ্যাঁ, স্কুল স্তর থেকে, পারিবারিক স্তর থেকে৷ ভারতীয় পরিবারে সাধারণত কী হয়? ছেলের সাত খুন মাপ৷ কিন্তু মেয়েকে নিয়মের বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে৷''

অভিযোগকারী মহিলা সাংবাদিক রামানি এর জবাবে বলেছেন, আইনের ভয় দেখিয়ে তাঁকে বা তাঁদেরকে চুপ করানো যাবে না৷ সত্য একদিন উঠে আসবেই৷ সেজন্য তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন৷ তিনি মনে করেন, আকবর এবং অন্যান্য পেশাদার মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে মহিলাদের যৌন হয়রানি নিয়ে প্রতিবাদ এবং আন্দোলন ক্রমশইবাড়ছে এবং সেটা ঝড়ের আকার নিচ্ছে৷ এক বিস্তারিত বিবৃতিতে মহিলা সাংবাদিক রামানি বলেন, প্রশ্ন উঠেছে এত বছর পর কেন এই অভিযোগ ? সব মহিলাই জানেন, এরমধ্যে জড়িয়ে আছে কলঙ্ক ও লজ্জা৷ কাজেই বিলম্বের কারণ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সমাজের উচিত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিভাবে অফিসে কাজের পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখা যায়৷ এম জে আকবরের মতো রাজনৈতিক চক্রান্ত তকমা দিয়ে অভিযোগ নাকচ করা যায় না৷ মিডিয়া সংগঠন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে. প্রশ্নটা মানা বা না মানার নয়৷ একজন মন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে পারেননি৷

এম জে আকবর প্রথম রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সানডে এবং দুটি সংবাদপত্র টেলিগ্রাফ এবং এশিয়ান এজ-এর সম্পাদক ছিলেন৷ ইন্ডিয়া টুডে'র সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য  মোদী মন্ত্রীসভার অন্তর্ভূক্ত হন ২০১৬ সালে৷ মধ্যপ্রদেশ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ তিনি৷ তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলায়৷