অভিনব পণ্য ডিজাইন করে চলেছেন জার্মান ডিজাইনার
১২ মার্চ ২০২১মিউনিখের ডিজাইনার স্টেফান ডিৎসের ডিজাইন বেশ রংচংয়ে, বাহুল্যবর্জিত এবং বুদ্ধিমত্তার ছাপে ভরা৷ আলোকসজ্জা, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে বাসনপত্রের মতো অবেক ক্ষেত্রেই তাঁর সৃষ্টির ছাপ দেখা যায়৷ স্টেফান বলেন, ‘‘ভালো ডিজাইনের সঙ্গে অ্যাক্রোব্যাটিক্সের অনেক মিল রয়েছে৷ ভালো অ্যাক্রোব্যাট শিল্পী বেশ সাবলীলভাবে জটিল কেরামতি তুলে ধরতে পারেন৷''
তার সর্বশেষ ডিজাইন অনুযায়ী একটি অভিনব ফ্লোর ল্যাম্প তৈরি করা হয়েছে৷ সেটির দৌলতে স্টেফান ২০২১ সালে জার্মানির টেকসই ডিজাইন পুরস্কার পেয়েছেন৷ ফাইবার গ্লাসের তৈরি সেই বাতি বিদ্যুতের তার ও ক্লিপের সাহায্যে যে কোনো অবস্থানে বসানো যায়৷ পুনর্বব্যবহারযোগ্য উপকরণ দিয়ে সেটি তৈরি৷ স্টেফান ডিৎস বলেন, ‘‘আইনো নামের এই ল্যাম্পটিকে আমরা পাঁচ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় রেখেছি৷ এ ক্ষেত্রে আমরা একটি বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করেছি৷ নমনীয় এই রডের সামনে অত্যন্ত হালকা এক শেড রয়েছে, যেটি অত্যন্ত উঁচু অবস্থায়ও রাখা যায়৷ ঘরের কোণায় এই ল্যাম্প রাখলেও তিন মিটার দূরে ডাইনিং টেবিলও আলোকিত করা যায়৷''
জার্মানির মিডগার্ড কোম্পানির জন্য ১৯২৬ সালে যে ল্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল, এটিও সেই ডিজাইন অবলম্বনেই তৈরি করা হয়েছে৷ ‘টাইপ ১১৩' নম্বর হুইপ লাইট বিশ্বের প্রথম কারখানায় তৈরি বহুল ব্যবহৃত বাতিগুলির অন্যতম৷ এই উদ্যোগের গুরুত্ব সম্পর্কে স্টেফান বলেন, ‘‘এই কোম্পানির জন্য তৈরি পণ্যগুলি বাউহাউস শৈলি অনুযায়ী অত্যন্ত যান্ত্রিকভাবে ভাবা হয়েছিল৷ আমার মনে হলো, এমন প্রেক্ষাপটে এবার ঠিক তার বিপরীতটাই করা উচিত৷ এমন কিছু করতে হবে, যা বিশের দশকের যান্ত্রিকতার একেবারে বিপরীত মেরুর হয়৷''
স্টেফান ডিৎস চিরায়ত ডিজাইনকে সমসাময়িক রূপ দিচ্ছেন৷ ২০০৭ সালে তিনি এক বেন্টউড চেয়ার ডিজাইন করেন, যেটির কাঠ গরম বাষ্পের সাহায্যে বাঁকানো হয়েছে৷ জার্মানির টোনেট কোম্পানি ‘কফি হাউস চেয়ার'-এর মাধ্যমে ডিজাইনের জগতে ইতিহাস রচনা করেছিল৷ ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি তারা এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিল৷ স্টেফান তাঁর চেয়ারের আধুনিক সংস্করণের জন্য সেই ‘বেন্ডিং' কৌশলের আরও উন্নতি ঘটিয়েছেন৷
এমনকি শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের মধ্যেও তিনি ডিজাইনকে গুরুত্ব দেন৷ ২০১১ সালে তিনি জার্মানির ভিল্কহান কোম্পানির জন্য ‘চ্যাসিস' নামের চেয়ার ডিজাইন করেন৷ গাড়ির খাঁচা তৈরির কাজে যে উপকরণ ব্যবহার করা হয়, সেগুলি দিয়ে তৈরি এই চেয়ার রেড ডট ডিজাইন পুরস্কার পেয়েছে৷ সেটি গড়ে তুলতে তিন বছর সময় লেগেছে৷ এমন উদ্যোগ যে মোটেই সহজ নয়, সে বিষয়ে স্টেফান ডিৎস যথেষ্ট সচেতন৷ তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই বিএমডাব্লিউ বা মার্সিডিজ কোম্পানিতে গিয়ে চেয়ার তৈরির আবদার করা যায় না৷ কোনো অচেনা ডিজাইনার এসে খোঁজখবর করলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মনে হবে, এমন প্রকল্পে কি বিনিয়োগ করা উচিত? গবেষণার জন্য অনেক সময় লাগে৷ তারপর এমন কাজে শামিল হতে রাজি সহযোগী পাওয়াও সহজ নয়৷''
স্টেফান নিজে কাজে হাত লাগাতে মোটেই দ্বিধা করেন না৷ ডিজাইন নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আগে তিনি ছুতার মিস্ত্রী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন৷ আজ তিনি মিউনিখে নিজের স্টুডিওতে চার জন্য প্রোডাক্ট ডিজাইনারের সঙ্গে মোরোসো বা ইফিফটিনের মতো বিখ্যাত ইউরোপীয় লেবেলের জন্য পণ্যের নক্সা করছেন৷ স্টেফান বলেন, ‘‘আমার মতে ডিজাইনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, উচ্চ মানের প্রকল্প বা পণ্যের জন্য বিশাল চাপ থাকলেও ভারাক্রান্ত হয়ে পড়লে চলবে না৷ হাস্যরস ও হালকা মেজাজ নিয়ে আইডিয়া রূপান্তর করাও জরুরি৷''
স্টেফান ডিৎস এখনো পর্যন্ত প্রায় ৫০টি পণ্য ডিজাইন করেছেন৷ জার্মানির সবচেয়ে নামী সমসাময়িক ডিজাইনারদের মধ্যে তার নাম উঠে আসে৷ আপাতত তিনি এক মডিউলার সোফা সিস্টেম নিয়ে কাজ করছেন, যেটির আবরণ দ্রুত ও সহজেই বদলানো যায়৷ নমনীয় ও টেকসই এমন পণ্যের ডিজাইন স্টেফান ডিৎস-এর বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে৷
ক্রিস্টিয়ান ভাইবেসান/এসবি