অবিস্মরণীয় জর্জ হ্যারিসন
ভারত-বাংলাদেশের মানুষের মনে এখনো তিনি চিরতরুণ৷ বাংলাদেশ তাকে ভুলতে পারবে না ১৯৭১ সালে রবিশংকরের সঙ্গে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করার জন্য৷
অনবদ্য গিটার
জর্জ হ্যারিসন শুধু ‘বিটলস’ ব্যান্ডের একজন শিল্পী নন৷ এককভাবেও তিনি অনন্য৷ পৃথিবী বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘রোলিং স্টোন’-এর মতে পৃথিবীর সেরা ১০০ জন গিটারিস্টের মধ্যে জর্জের স্থান ১১ নম্বরে৷ সারা জীবন স্পিরিচুয়ালিটি বা আধ্যাত্মিকতার মধ্যে নিমজ্জিত থেকেছেন জর্জ৷ একসময় ভারতে এসে ওশোর সংস্পর্শে এসেছিলেন৷ তাঁর সংগীতেও আধ্যাত্মিকতা জায়গা পেয়েছে প্রবলভাবে৷
তীর্থের বাড়ি
১৯৪৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন জর্জ হ্যারিসন৷ ব্রিটেনের ওয়েভারট্রি অঞ্চলে তাঁর বাড়ি৷ লিভারপুল অঞ্চলের বিখ্যাত জায়গা এটি৷ এখন সে বাড়িতে অন্য লোকেরা থাকলেও হ্যারিসনের পুরনো বাড়ি দেখতে প্রচুর পর্যটক ভিড় জমান সেখানে৷ এই অঞ্চলের প্রাইমারি স্কুলেই আলাপ হয় জন লেনন, পল ম্যাকার্টনি এবং জর্জ হ্যারিসনের৷
লিভারপুলের জর্জ
বাবার এক বন্ধুর কাছে জর্জের প্রথম গিটারের হাতেখড়ি৷ ১৩ বছর বয়সে প্রথম গিটার হাতে পান তিনি৷ এখনো সেই গিটারটি আছে৷ হাইস্কুলে পড়ার সময়েই জর্জ ঠিক করে ফেলেন তিনি সংগীত নিয়েই থাকবেন৷ রক অ্যান্ড রোল-ই হবে তাঁর জীবন৷ ১৯৫৬ সালে বন্ধু ম্যাকার্টনির সঙ্গে লেননের প্রথম ব্যান্ড ‘কোয়ারিমেন’-এ যোগ দেন তিনি৷
বিটলস পর্ব
১৯৬০ সালে ‘কোয়ারিমেন’ই নাম বদলে হয়ে যায় ‘বিটলস’৷ ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসন৷ ম্যাকার্টনি আর লেনন গায়ক৷ জর্জও অবশ্য বেশ কয়েকটি গান গেয়েছেন বিটলসে৷
জার্মানিতে বিটলস উন্মাদনা
সারা পৃথিবীতেই শো করেছে বিটলস৷ মাতিয়ে দিয়েছে সকলকে৷ জার্মানিও সেই বিটলস হাওয়ার বাইরে ছিল না৷ ১৯৬৬ সালে জার্মানিতে শো করতে আসে বিটলস৷ তরুণ-তরুণীদের উল্লাসে ফেটে পড়েছিল জার্মানির রাজপথ৷ ওই একবারই জার্মানিতে এসেছিল বিটলস৷
লেখক জর্জ
বিটলসে থাকাকালীন জর্জ বেশ কিছু গানও লিখেছিলেন৷ কিন্তু তাঁর অভিযোগ ছিল, তাঁর লেখা অধিকাংশ সময়েই বাতিল করে দিতেন লেনন এবং ম্যাকার্টনি৷ তবুও তাঁর লেখা সাড়া জাগিয়েছিল৷ ‘হোয়াইল মাই গিটার জেন্টলি উইপস’, ‘সামথিং’ এখনো বিটলসের সেরা গানগুলির মধ্যে রয়েছে৷
জর্জ এবং রবি
১৯৬৫ সালে ‘হেল্প’ নামে একটি ছবির শ্যুটিংয়ের সময় জর্জ একটি অন্য ধরনের যন্ত্র হাতে নিয়ে আসেন৷ সেতারের সঙ্গে তখনো ইউরোপের পরিচয় হয়নি৷ জর্জ সেতারের তালিম নিয়েছেন রবিশংকরের কাছে৷ ‘নরওয়েজিয়ান উড’ গানে তিনি সেতার বাজিয়েওছেন৷
দর্শনের খোঁজে
ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে হ্যারিসনের ঝোঁক ছিল চিরকালই৷ ১৯৬৬ সালে বিটলস ভারতে আসে৷ মহাঋষি মহেশ যোগীর কাছে ধ্যান শিখতে যান সকলেই৷ ব্যান্ডের বাকি সদস্যরা দ্রুত আগ্রহ হারালেও হ্যারিসন বুঁদ হয়ে যান ধ্যানে৷ পরবর্তী জীবনে ‘হরে কৃষ্ণ’ আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন হ্যারিসন৷
বিয়ে এবং বিপর্যয়
১৯৬৬ সালের ২১ জানুয়ারি প্যাটি বয়েডকে বিয়ে করেন জর্জ৷ একটি শ্যুটিংয়ে ওই মডেল প্যাটির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁর৷ উপরের ছবিটি বার্বাডোজে তোলা৷ বিয়ের ঠিক পরপর৷ তখনো জানা ছিল না, ছ’বছর পর ওই প্যাটিই পালাবেন জর্জের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এরিক ক্ল্যাপটনের সঙ্গে৷
বিটলসে ভাঙন
ব্যান্ডের ওপর রাগ করে ১৯৬৮ সালে প্রথম সোলো অ্যালবাম বের করেন জর্জ৷ ‘ওয়ান্ডারওয়াল মিউজিক’৷ এর দু’বছর পর ভেঙে যাবে বিটলস৷ হ্যারিসনও একের পর এক সোলো অ্যালবাম বের করতে থাকেন৷ পরবর্তীকালে তাঁর প্রোডিউসার বলেছিলেন, বিটলসে থাকাকালীন অন্তত ৮০টি গান লিখেছিলেন জর্জ, যার একটিও তিনি সে সময় রেকর্ড করার সুযোগ পাননি৷
কনসার্ট ফর বাংলাদেশ
বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জর্জ হ্যারিসনের নাম৷ ১৯৭১ সালে রবিশংকরের সঙ্গে জর্জ আয়োজন করেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’৷ পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিকামী বাঙালিদের বিরুদ্ধে যে গণহত্যা চালাচ্ছিল তা বিশ্ববাসীকে জানাতে এবং ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে ওই কনসার্টের আয়োজন হয়েছিল৷ বব ডিলান, রিঙ্গো স্টার, রবিশংকর, এরিক ক্ল্যাপটন সকলেই অংশ নিয়েছিলেন ওই কনসার্টে৷
এবং মৃত্যু
২০০১ সালের ২৯ নভেম্বর মৃত্যু হয় হ্যারিসনের৷ মাত্র ৫৮ বছর বয়সে৷ মৃত্যুর আট বছর পর হলিউড তাঁকে ‘স্টার অন দ্য ওয়াক অফ ফেম’ সম্মান দেয়৷ তাঁর পুরনো বিটলস সঙ্গীরা সেই অনুষ্ঠানে অংশও নিয়েছিলেন৷ লেননেরও অবশ্য ততদিনে মৃত্যু হয়েছে৷