1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অপূর্ণ মূর্তির মাধ্যমে চমক সৃষ্টি করেন ফরাসি ভাস্কর

২৪ নভেম্বর ২০২২

শরণার্থীই যদি শিল্পী হয়ে ওঠেন, তার কাজের মধ্যে ভিটেমাটি ছাড়ার যন্ত্রণা ও যাত্রার ঝক্কি ফুটে উঠতে বাধ্য৷ মরোক্কো থেকে আসা এক ফরাসি শিল্পী তার কাজের মধ্যে অপূর্ণতা বজায় রেখে মানুষের সেই অনুভূতি ফুটিয়ে তুলছেন৷

https://p.dw.com/p/4Jyvh
ব্রুনো কাটালানো ও তার একটি সৃষ্টি
ব্রুনো কাটালানো ও তার একটি সৃষ্টিছবি: DW

অনেক শিল্পী নিজেদের কাজ চূড়ান্ত করতে ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বে ক্রেস্ট শহরের এই ফাউন্ড্রির শরণাপন্ন হন৷ ফরাসি ভাস্কর তাঁদেরই একজন৷ ভাস্কর্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অংশের অভাবই তার বৈশিষ্ট্য৷ ‘দ্য ভয়েজার' নামে তাঁর ভাস্কর্যের সিরিজ অনেক শহরে চোখে পড়ে৷ সেগুলি কীভাবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, দর্শকদের মনে সেই প্রশ্ন জাগে৷ সেই রহস্য উন্মোচন করে কাটালানো বলেন, ‘‘সবক'টি অংশ জোড়া দিলেই সেটা সম্ভব৷ একটা ব্যালেন্সিং পয়েন্ট রয়েছে, যেটা সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে৷ এ ক্ষেত্রে পা সেই কাজ করছে৷ এই বিন্দুকে কেন্দ্র করে পা ও হাতের গায়ে সুটকেস ওয়েল্ডিং করে দিলে সবকিছুর ভারসাম্য বজায় থাকবে৷''

২০০৪ সাল থেকে কাটালানো প্রায় ৪০০ ব্যক্তির ভাস্কর্য সৃষ্টি করেছেন৷ আশেপাশের মানুষও  তাঁর মডেল হন৷ যেমন বাংলাদেশের এক প্রাক্তন শরণার্থী৷

ভাস্কর্যের জন্য আগে থেকে প্রস্তুত করা ছাঁচে তরল ব্রোঞ্জ ঢালা হয়৷ ছাঁচে ঢেলে চূড়ান্ত রূপ পাবার পর ভাস্কর্যের অংশগুলি ওয়েল্ডিং করে জোড়া দেওয়া হয়৷ এ ক্ষেত্রে সঠিক ফোকাস অত্যন্ত জরুরি৷ আলাদা করে এমন কাজ করানো ব্রুনো কাটালানোর জন্য কিছুটা প্রতীকিও বটে৷ ব্রুনো কাটালানো বলেন, ‘‘মূর্তিটি ভঙ্গুর হলে আমার ভালোই লাগে৷ কিন্তু সেটি অটল৷ আমার ব্যক্তিত্বরাও একই রকমের৷ তারা একদিকে ভঙ্গুর, অন্যদিকে অবিচল থেকে এগিয়ে যেতে চায়৷''

যে ভাস্করের মূর্তি শেষ না হয়েও হয় শেষ

তার ভ্রামণিকদের কাছে সব সময়ে একটা ব্যাগ বা সুটকেস থাকে৷ মনে হয় তারা যেন অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছে৷ ঠিক তার পরিবার যেমনটা একবার করেছিল৷ ভাস্কর হিসেবে ব্রুনো নিজের অতীতের উপর আলোকপাত করে বলেন, ‘‘এটা আমার নিজের কাহিনিও বটে৷ আমি আসলে মরোক্কোর মানুষ, আমিও একটা সুটকেস নিয়ে এখানে এসেছিলাম৷ বর্তমানে ইউক্রেনের মানুষেরও একই অবস্থা৷ অথবা আফ্রিকা থেকে শরণার্থীর ঢলের কথাও ভোলা যায় না৷ তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে৷ এটা থামানো যায় না৷ এই সব মানুষ আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় রওয়ানা হয়৷ আমার মতে, সেটা মেনে নিতে হবে৷''

তাঁর কাছে শিল্প মূলত নিজস্ব ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তির একটা পথ৷ তার ভাস্কর্যে সব সময়ে একটা ছিদ্র থাকে৷ পূর্ণতার সেই অভাব তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতারই প্রতিফলন ঘটায়৷ ব্রুনো কাটালানো মনে করেন, ‘‘ভাস্কর্যগুলির সঙ্গে যা ঘটেছে, সেটা আমার নিজস্ব জীবনেরও অভিজ্ঞতা৷ এর দুটি দিক রয়েছে৷ প্রথমটি আমার অন্তরের অনুভূতি৷ আমার কিছু সমস্যা রয়েছে, যেগুলি আমি দূর করতে চাই৷ আমি সেগুলি আমার ভাস্কর্য থেকে বার করে নেই৷ বৃহত্তর অর্থে আমার জীবনের কাহিনির জন্য সেটা জরুরি৷ নির্দিষ্ট এক সময়ে আমাকে সুটকেস গুছিয়ে একটি দেশ ছেড়ে অন্য একটি দেশে চলে যেতে হয়েছিল৷''

ব্রুনো তাঁর ‘দ্য ট্রাভেলার' সিরিজের জন্য যত বেশি সম্ভব মানুষের প্রতিকৃতি গড়তে চান৷ একই সঙ্গে তিনি ‘মিরর' বা আয়না নামের নতুন সিরিজ নিয়েও কাজ করছেন৷ কিন্তু সেখানেও মূল মোটিফ হিসেবে সুটকেস থেকে গেছে৷ এর কারণ ব্যাখ্যা করে কাটালানো বলেন, ‘‘সুটকেস আমার অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ সেটি মানুষের জিনিস৷ মানুষ তার সুটকেস নিয়ে যাত্রা শুরু করে৷ এ যেনো টিলার পেছনে নতুন কিছুর খোঁজে বেরিয়ে পড়া৷''

নিজের সুটকেসের মতো ব্রুনো কাটালানোও এক ভ্রামণিক৷ তিনি এখনো গন্তব্যে পৌঁছান নি৷ এখনো তিনি নতুন দিগন্তের সন্ধান করে চলেছেন৷

কাই হর্স্টমায়ার/এসবি