অন্যের সেবায় ঈদের আনন্দ
করোনা মহামারির মধ্যে সারা বছরই তারা কোনো না কোনোভাবে অসহায় মানুষদের পাশে ছিলেন৷ বাদ যায়নি ঈদের দিনটিও৷ ঢাকায় এমনই কয়েকজন ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
নাফিসার উদ্যোগ
নাফিসা আনজুম খান বাংলাদেশের অনেকের কাছেই এখন পরিচিত নাম৷ গোটা করোনার সময় তিনি খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায়৷ সামর্থ্য নেই এমন মানুষদের নিয়মিত খাবার জোগান দিয়েছেন৷ শুরুর দিকে নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে খাবারের সংস্থান করেছেন৷ পরে তার সাথে বন্ধু, শুভাকাঙ্খী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও হাত বাড়িয়ে দেয়৷
করোনায় নাফিসার ঈদ
নাফিসা আনজুম খান তার এই উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘একজন বাংলাদেশ’৷ ঈদের দিন প্রায় ২৫০ জন ছিন্নমূল মানুষের জন্য নিজের হাতে রান্না করে খাবার বিতরণ করেন তিনি৷ ‘ঈদ মোবারক’ লেখা তার খাবারের প্যাকেটে এবার ছিল পোলাও, গরুর মাংস আর মুরগির রোস্ট৷ সারাদিন খাবার নিয়ে নাফিসা ছুটে বেড়িয়েছেন ঢাকার হাতিরঝিল ও রমনা এলাকায়৷
ফুলেল ভালোবাসা
নাফিসার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী প্রভা। প্রতিদিন যাদেরকে খাবার দিতে যান, আজ তারাই নাফিসাকে অবাক করে দেন৷ রমনার ছিন্নমূল কয়েকজন নিজেদের পয়সা খরচ করে ভালোবাসার প্রতিদান ফুলের তোড়া নিয়ে আসেন তার জন্য৷ আবেগাপ্লুত হন নাফিসাও৷
সৈকতের সহায়তা
করোনা পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের রোজগার যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন সেইসব মানুষকে দুই বেলা খাবার তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-র তৎকালীন সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত। এজন্য তিনি জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’র স্বীকৃতিও পেয়েছেন৷
ঈদের দিনে সৈকতের ব্যস্ততা
ঈদের দিনও সৈকত খাবার পৌঁছে দেন ছিন্নমূল মানুষদের কাছে। প্রায় ৫০০ জনের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। সৈকতের খাবারের তালিকায় ছিল খাসির মাংস ও পোলাও৷ বিকালে তিনি গরুর মাংসও বিতরণ করেন৷
মেহমানখানা
স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে হাজারো মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলছে একদল তরুণ। করোনা অতিমারির মধ্যে কর্ম হারিয়ে অনেকে চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেক রিকশাচালক, নিম্ন আয়ের মানুষ আহার জুটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কিছু মানুষের জন্য একবেলার খাবারের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা থেকে মেহমানখানা নামের এই উদ্যোগ।
পাঁচ হাজার অতিথি
মেহমানখানার একজন উদ্যোক্তা আসমা আকতার লিজা। তিনি জানান, ইদ উপলক্ষে দুপুর থেকে প্রায় ৫ হাজার মানুষের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তারা৷
দিনব্যাপী রান্না
একের পর এক আসা মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করতে সকালে থেকেই শুরু হয়েছে রান্না৷ এক দলের খাবার শেষ হতে না হতেই অন্য দল চলে আসছেন৷ রান্না হলেই ধোঁয়া ওঠা গরম খাবার খাবেন তারা৷
অতিথি শাহীন
রিকশাচালক শাহীন রহমান থাকেন মোহাম্মদপুরে৷ গত দুইমাস ধরে তিনি ‘মেহমানখানার’ অতিথি৷ খেতে এসেছেন ঈদের দিন দুপুরেও৷ তবে আজকের খাবারের স্বাদ অন্যদিনের চেয়েও ভালো হয়েছে বলে জানান শাহীন৷
তাদের মেহমানরা
আসমা আকতার লিজা বলেন, যারা খেতে আসেন তারা সবাই তাদের মেহমান৷ দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর লালমাটিয়া ডি ব্লকের অলিগলি তাদের মেহমানে ভরপুর হয়ে যায়। ‘মেহমানখানা’র বেশিরভাগ ‘মেহমানই’ রিকশাচালক, আছেন আশপাশের ভবনগুলোর নিরাপত্তাকর্মীসহ, ভাসমান মানুষ, পথশিশু ও সাধারণ পথচারীরাও৷