1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘অনেক পোশাকশ্রমিক রাস্তায় ঘুরতাছে’

তায়েব মিল্লাত হোসেন ঢাকা
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ইউরোপ-অ্যামেরিকা থেকে ফরমায়েশ আসে৷ পোশাক হয় বাংলাদেশে৷ করোনাময় সময়ে সেই ধারায় ধাক্কা লেগেছে৷ সেই ধাক্কায় পোশাক শ্রমিকদের কী অবস্থা ডয়চে ভেলেকে তা-ই জানিয়েছেন জাহানারা বেগম৷

https://p.dw.com/p/3py6i
ছবি: Mortuza Rashed/DW

ইউরোপ-অ্যামেরিকা থেকে ফরমায়েশ আসে৷ পোশাক হয় বাংলাদেশে৷ করোনাময় সময়ে সেই ধারায় ধাক্কা লেগেছে৷ সেই ধাক্কায় পোশাক শ্রমিকদের কী অবস্থা ডয়চে ভেলেকে তা-ই জানিয়েছেন জাহানারা বেগম৷

করোনাকালে লোকসানে পোশাক রপ্তানিকারকরা৷ তারও বেশি বিপাকে কর্মীরা৷ কেউ চাকরিহারা৷ কারওবা কমেছে আয়৷

প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতোই রাজধানী ঢাকার অভিজাত উত্তরার অদূরে অনভিজাত এক এলাকা দক্ষিণখান৷ অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে মিশ্র পরিস্থিতি৷ এলোমেলো বাড়ি, সড়ক, বাজারের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাও রয়েছে এখানে৷ এরমধ্যে অন্যতম চৈতী গ্রুপের প্রতিষ্ঠান৷ এখানে সিনিয়র অপারেটর হিসেবে কর্মরত জাহানারা বেগম৷ তার স্বামী অন্য এক পোশাক কারখানার কর্মী৷ দুজনের আয়ে স্কুলপড়ুয়া একমাত্র কন্যাকে নিয়ে ভালোই চলে যাচ্ছিল তাদের সংসার৷ কিন্তু করোনা ভাইরাস সব হিসেব এলেমেলো করে দিলো৷ সেই কথাই ডয়চে ভেলেকে বললেন জাহানারা৷ ‘‘আমাদের ফ্যাক্টরি থেকে ৯০ জনের চাকরি গেছে৷ এখন যারা আছে, তাদের ডিউটি কম৷ ওভারটাইম নাই, তাই বেতন কম৷ সবদিক দিয়েই তাদের খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে৷ অনেক শ্রমিক রাস্তায় ঘুরতাছে৷ চাকরি-বাকরি নাই৷ অনেকের যে চাকরি চলে গেছে নেক্সট টাইম তারা আর চাকরি পাইতাছে না৷ শ্রমিকদের খুব দুর্দশা৷’’

‘কেউ দিনমজুরি করতাছে, কেউ রাজমিস্ত্রির জুগালোর কাজ করতেছে’

শ্রমিক ছাঁটাই বা বেতন বঞ্চনা- এ ধরনের বিষয়ে কারখানা মালিকদের দিকেই সাধারণত অভিযোগের আঙুল তোলা হয়৷ তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন৷ তাই তো জাহানারা জানালেন, ‘‘মালিকরা বলে- আমরা তো কাজ আনতে পারতাছি না৷ বায়াররা আমাদের অর্ডার দিতাছে না৷ কী করে চালাবো? বায়াররা যদি অর্ডার দিতো, মাল যদি আবার এক্সপোর্ট করতে পারতাম, তাহলে আমরা শ্রমিকদের সন্তুষ্ট করতে পারতাম৷’’

এই ভাষ্য থেকে ধরে নিতে হয়, ভিনদেশি ক্রেতার সংকট দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের পোশাকখাতে৷ বন্ধ হয়েছে কিছু রপ্তানিমুখী কারখানা৷ কোথাও কমানো হয়েছে লোকবল৷ যার কারণে চাকরি হারাতে হয়েছে পোশাক শ্রমিকদের৷ সিপিডির হিসেবে যেটা অন্তত সাড়ে তিন লাখ৷ নিশ্চিত করেই তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান করতে হচ্ছে৷ চাকরি হারানো কিছু সহকর্মীর বিষয় জানালেন জাহানারা৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘‘কেউ দিনমজুরি করতাছে৷ কেউ রাজমিস্ত্রীর জুগালোর কাজ করতেছে৷ কেউ রিকশা চালাইতাছে৷ এইভাবেই দিনগুলো চালাইতাছে৷’’

তারা কী আবার পোশাক কারখানায় ফিরতে চায়? এমন প্রশ্নে জাহানারা জানান, ‘‘হ্যা, তারা এখনো চেষ্টা করতেছে৷ কিন্তু কোনোখানে লোক নিতাছে না৷ নতুন নিয়োগ খুব কম৷ যাদের চাকরি গেছে তারা আর চাকরি ফেরত পায় নাই৷’’

চাকরিদাতাদের অবস্থানও জানালেন তিনি৷ ‘‘তারা বলে দেশের যে পরিস্থিতি, আমরা সেই পরিস্থিতির শিকার৷ আমগোর কাছে কিছু করার নাই৷’’

করোনাভাইরাস আসার পর মালিকপক্ষ, সরকার বা বিজিএমইএ কোনোভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে পোশাক শ্রমিকদের? এ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিলেন জাহানারা, ‘‘গার্মেন্টস লেভেলে কোনো শ্রমিক বিজিএমইএ বা সরকার থেকে কোনো সহায়তা পায় নাই৷ যখন এক মাস বন্ধ ছিল তখন ফুল বেতনটাও পাই নাই৷ শুধু ৬০ শতাংশ বেতন পাইছিলাম৷ আমাদের উত্তরা এলাকায় যতগুলো গার্মেন্টস আছে সবগুলোতে একই অবস্থা৷’’

অবস্থার ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে কিনা, জানতে চাইলে জাহানারা জানান, ‘‘পরিবর্তন আসবে যদি বায়াররা অর্ডার দেয়৷ আর যদি অর্ডার না দেয় তাহলে মালিকদের পক্ষে ফ্যাক্টরি চালানো সম্ভব না৷ আগের যে অর্ডারগুলো ছিল ওইগুলোর কাজ চলতাছে৷ নতুন করে কোনো অর্ডার পাইতাছে না মালিকরা৷’’

এদিকে করোনা আসায় পিপিই ও মাস্কের মতো স্বাস্থ্য উপকরণের বাজার প্রসারিত হয়েছে৷ এ ধরনের কাজে সম্ভাবনা কতটুকু- এমন প্রশ্নে এই পোশাককর্মী বললেন, ‘‘না, আমরা এ ধরনের কাজ পাচ্ছি না৷ পিপিই বা মাস্কের কোনো কাজ আমাদের গার্মেন্টস পায় নাই৷ হয়ত ছোটখাটো কোনো ফ্যাক্টরি পাইছে৷ কিন্তু আমাদের ফ্যাক্টরি পায় নাই৷ বড় গার্মেন্টস আমাদের এলাকায় একটাও পায় নাই৷ অন্য এলাকায়, আশুলিয়ার দিকে পাইতে পারে, কিন্তু আমাদের উত্তরার দিকে কেউ পায় নাই৷’’

তিনি আরো বললেন, ‘‘আমাদের এলাকায় তিন-চারটা ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে৷ যেমন- শান্তা গ্রুপ বন্ধ হয়ে গেছে৷ ভার্সেটাইল বন্ধ হয়ে গেছে৷ একই মালিকের দুইটা গার্মেন্টস৷ একটা থেকে ৩০০-৪০০ লোক বাহির করছে৷ আর একটা টোটালি বন্ধ করে দিছে৷’’

আপাতত পোশাকখাতে সুদিন দেখতে পাচ্ছেন না জাহানারা৷ তিনি বলছিলেন, ‘‘যারা বেকার ছিল তারা এখনো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাছে চাকরির জন্য৷ অন্য ফ্যাক্টরিতেও ঢুকতে পারতাছে না৷ নতুন লোক না নিলে তারা ঢুকবো কেমনে?’’

নিজের সাবেক সহকর্মীদের নিয়ে ভাবছেন জাহানারা৷ ভাবছেন নিজের ঘর নিয়েও৷ ভবনের নীচতলার বাসায় এক কক্ষ সাবলেট দিয়ে হলেও আছেন এই শহরে৷ কিন্তু ওভারটাইমের কাজ না ফিরলে আরো কম ভাড়ার বাসা খুঁজতে হয় কিনা সেই দুশ্চিন্তার কথাও জানালেন জাহানারা৷