1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এ+/বি+ বলে কিছু নেই

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাসের যুগ এখন গত৷ যুগটা এখন বি+, এ+ তথা কিউমিলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ বা সিজিপি এর৷ এ+ এখন বহুল আকাঙ্ক্ষিত৷ সাধারণত ৮০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেলে একজন শিক্ষার্থী এ+ পেয়ে থাকেন৷

https://p.dw.com/p/3pFrr
প্রতীকী ছবি
ছবি: Imago Images/Panthermedia/A. Popov

ধরুন, গণিতে সমপূর্ণমানের ১০টি অংকের মধ্যে কোন শিক্ষার্থী যদি আট বা তার বেশি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেন তাহলে তিনি এ+ পান৷ অর্থাৎ দুটি প্রশ্নের উত্তর ভুল দিয়েও তিনি সফল৷ একেবারে ২২ ক্যারেট সোনার গয়নার মতো, তবে খাঁটি সোনা নয়৷ কিন্তু ভাবুন তো, একটি প্রতিবেদনে ১০টি তথ্যের মধ্যে আট বা নয়টি তথ্য ঠিক আছে, এক বা দুটি তথ্য ভুল দেয়া আছে৷ আবার ভুল না দিলেও প্রতিবেদনে উত্থাপিত ১০টি অভিযোগের মধ্যে ২/১টির জবাব যথাযথ ও নির্ভুল তথ্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়নি৷ তাহলে এটি কি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা? সাংবাদিকতা শাস্ত্রের উত্তর হলো, ‘না’৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সৌন্দর্য এখানেই৷ এটি খাঁটি সোনার মত নির্ভেজাল, কিন্তু নরম নয়৷ এ ধরনের সাংবাদিকতায় আপনাকে দশে দশ পেতে হবে৷ নয় দশমিক নয় নয় পাওয়ার কোন অবকাশ নেই৷ একটি ভুল তথ্য কিংবা অভিযোগের জবাব দিতে না পারলে পুরো প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে৷ সে কারণে অভিযোগ, দাবি, সন্দেহ, গুজব ইত্যকার শব্দ যে খবরের মধ্যে থাকে সে খবরটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট হতে পারে না৷ তাই সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদনই ভাল প্রতিবেদন; কিন্তু সব প্রতিবেদন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নয়৷ শতভাগ সততা, নিরপেক্ষতা আর বস্তুনিষ্ঠতার জন্যই বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে থিওডর রুজভেল্ট যেমনটা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের গালমন্দ করতেন তেমনি আজও বিশ্বের নানাপ্রান্তে রাজনীতিবিদরা সত্যিকারের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জাতপাত উদ্ধার করেন৷ ১৯০৪ সালে ‘দ্য শেম অব দ্য সিটিস’র মাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার যে আবেদন তৈরি হয়েছিল শতাব্দী পরে এসে তার আবেদন তাই বেড়েছে বৈকি কমেনি৷

সাংবাদিক মাত্রই মনে করতে পারেন, সব রিপোর্টিংই অনুসন্ধানমূলক৷ কারণ সাদামাটা খবরেও তথ্য থাকে, এখানেও কৌশল ব্যবহার করা হয়৷ প্রকৃতপক্ষে সাদামাটা বা ‘দিনে আনি দিনে খাই' সাংবাদিকতার সাথে এর বিস্তর ফারাক আছে৷ কারণ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে পুরোপুরি যুক্তিনির্ভর একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়া৷ এ ধরনের সাংবাদিকতার এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলোর মাধ্যমে একজন আম পাঠকের কাছেও সাদামাটা প্রতিবেদনের সাথে পার্থক্য এর স্পষ্ট হয়ে উঠে৷

প্রথমত, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন শুধু কোন ঘটনা নয় বরং সুনির্দিষ্ট প্রণালী অনুসরণ করে পাঠকের সামনে পুরো প্রক্রিয়াকে তুলে ধরে৷ এখানে অনুমিতি বা হাইপোথেসিস থেকে শুরু করে প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত একে কতগুলো ধাপ বা স্তর পার করতে হয়৷ এ স্তরগুলো পার না করলে প্রতিবেদনের স্বপক্ষে প্রমাণ যেমন মেলে না তেমনি এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয়৷ দ্বিতীয়ত, এই প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য প্রতিবেদনের হাইপোথেসিস বা প্রশ্ন নির্ধারণ করতে হয়, যা প্রতিবেদনের পথনির্দেশনা৷ এই প্রশ্নমালা প্রতিবেদনের পরিধি বা স্কোপ নির্ধারণ করে দেয়৷ অর্থাৎ প্রতিবেদক কোন কোন প্রশ্নের উত্তর যথাযথ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে নির্ভুলভাবে তুলে ধরতে পারবেন তা নির্ধারণ করতে হয়৷ পৃথিবীর তাবৎ বিখ্যাত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলোর সাফল্য এর ভেতর নিহিত৷ কারণ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অনুমান ও কটাক্ষ করে দাবি করার চেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ তুলে ধরতে হয়৷ অনেক বিখ্যাত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতিবেদক কয়েকটি অনুমিতি বা প্রশ্ন নিয়ে কাজে নেমেছেন কিন্তু পরে সেগুলো যথাযথ ত্যথ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করতে না পেরে সেসব প্রশ্ন বা অভিযোগ অব্যক্ত রেখে দিয়েছেন৷ এজন্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের একটি স্তর হলো লক্ষ্য নির্ধারণ করা৷ এখানে দুটি লক্ষ্য থাকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন লক্ষ্য৷ অনুমিতি বা প্রশ্নের সবটুকু প্রমাণ করতে পারাই হলো সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছা৷ কিন্তু সবসময় সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলেও ভাল অনুসন্ধানী রিপোর্ট করা সম্ভব৷ ২০০০ সালে ফিলিপাইন সেন্টার ফর ইনভেসটিগেটিভ জার্নালিজমের প্রতিবেদকরা দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসেফ এস্ত্রাদার একটি ভিডিও ক্লিপ পান যাতে দেখা যায়, তিনি একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক ব্রিফকেস টাকা নিচ্ছেন৷ একজন হুইসেলব্লোয়ার দাবি করেন, এটি ঘুষের টাকা৷ প্রতিবেদকরা বুঝতে পেরেছিলেন, ঘুষ নেয়ার ঘটনাটি তারা কোনভাবে প্রমাণ করতে পারবেন না৷ তাই তারা প্রমাণ করলেন প্রেসিডেন্টের অকল্পনীয় সম্পদ বা সম্পদের পাহাড় ছিল; যার মধ্যে তিনি তার চার স্ত্রীর জন্য চারটি প্রাসাদস্বর্গ বানিয়েছেন৷ তারা ১৯৯৮ সালে নির্বাচনের সময় এস্ত্রাদার জমা দেয়া আর্থিক হিসাবের বিবরণের সাথে নতুন হিসাবের বিবরণের তফাৎ তুলে ধরেন যেখানে প্রাসাদ স্বর্গগুলোর উল্লেখ ছিল না৷ অর্থাৎ তাদের প্রতিবেদনের মূল ফোকাস হয়ে যায় প্রেসিডেন্টের অবৈধ সম্পদ আছে৷ তারা এ অর্থের উৎস কি বা কোথা থেকে এ অর্থ এসেছে তা অনুসন্ধান করেননি৷ এটাই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা খুঁটি – যেটুকু প্রমাণ করা গেছে সেটুকু উপস্থাপন করা৷ ভাল তথ্য থাকা সত্ত্বেও শুধু নিজের অনুমিতি জোর করে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অনেক রিপোর্ট মুখ থুবড়ে পড়ে৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিরপরাধ মানুষ৷

কোনো অনুমিতি তৈরি করার অর্থ এই নয় যে, যেন তেন প্রকারে তাকে সঠিক প্রমাণ করতেই হবে৷ জোর করে তথ্য উপস্থাপনের অর্থ হলো প্রমাণিত তথ্যের চেয়ে মোটিভ প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেয়া৷ এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বহুল আলোচিত আল জাজিরার পরিবেশনা ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার'স মেন’ এর কথা টানা যায়৷ এক ঘন্টার পরিবেশনায় বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে: গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার একজন প্রধান ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার ভাইকে ছদ্ম নামে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র করে দেয়া; পলাতক দু আসামি গোপনে সংস্থার প্রধানের পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া; সংস্থাটির প্রধান ও তার ভাইরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন ও পাচ্ছেন; বিনিময়ে ২০১৪ ও ২০১৮ সনের নির্বাচনে দুটি বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে; এবং ইসরায়েলের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল টেলিফোনে আড়িপাতার যন্ত্র কেনার অভিযোগ৷ প্রত্যেকটি অভিযোগ নিয়ে আলাদা আলাদা রিপোর্ট করা যেতো৷ কিন্তু আল জাজিরা তাদের পরিবেশনায় ভুয়া পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র এবং ইসরাইলি কোম্পানির কাছ থেকে যন্ত্র কেনার অভিযোগ যেভাবে একাধিক সূত্রের মাধ্যমে যাচাই করে প্রমাণের চেষ্টা করেছে অন্যগুলোতে তা করেনি৷ ফলশ্রুতিতে পরিবেশনার পরিধি বড় হয়েছে, কিন্তু প্রত্যেকটি অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে পারেনি

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে একাধিক সূত্র ও হাতিয়ার (টুলস) ব্যবহার করে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে হয়৷ কোন তথ্য বা অভিযোগ যতক্ষণ পর্যন্ত কমপক্ষে দুটি সোর্স বা টুলসের মাধ্যমে প্রমাণ করা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তা রিপোর্টের মুখ দেখতে পারে না৷ সাক্ষাৎকার, নথি, পর্যবেক্ষণ ও জরিপ – এই চারটি টুলসের যে কোন দুটির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানী রিপোর্টে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে হয়৷ প্রধানমন্ত্রী একটি বাহিনীর প্রধান ও তার ভাইদের সহযোগিতা করছে, দুটি নির্বাচনে দুটি বাহিনীকে অবৈধভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এমন গুরুতর অভিযোগ শুধু একজনের ঘরোয়াভাবে প্রদত্ত বক্তব্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে যাওয়ার প্রয়াস শিক্ষানবিশ রিপোর্টাররাও করবেন না৷ এ ধরনের প্রয়াসে ধান ভাঙতে শিবের গীত এসে যায়৷ তাই আল জাজিরার পরিবেশনা অনাবশ্যক ঘন্টা ছাড়িয়েছে, ফোকাসগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে৷ তাদের মোটিভ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷

আল জাজিরার প্রতিবেদন সত্য, আংশিক সত্য, নাকি মিথ্যা?

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার আরেকটি বৈশিষ্ট্যটি হলো বস্তুনিষ্ঠতা এবং নিরপেক্ষতা৷ এ ধরনের সাংবাদিকতায়, সাংবাদিকতার মৌল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত ‘বস্তুনিষ্ঠতা’র বিষয়টি প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য জনস্বার্থ৷ জনস্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে অন্যের আইনি ও নৈতিক অধিকারের বারোটা বাজালে তখন বস্তুনিষ্ঠতা থাকে না৷ এজন্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মাননিয়ন্ত্রণের বিষয়টি খুব জরুরি৷ মান নিয়ন্ত্রণ বা শুধু যাচাইকৃত তথ্য উপস্থাপনের রীতি হলো পেশাগত নীতিমালার অংশ৷ আল জাজিরার ওয়েব সাইটে যে কোড অব কন্ডাক্ট দেয়া আছে সে অনুযায়ী তাদের এই পরিবেশনা এভাবে প্রচারিত হতে পারে না৷ নির্ভুল তথ্য উপস্থাপন না করে শুধু নিজের অনুমিতি ও মোটিভ জোর করে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় পুরস্কার পুলিৎজার হারানোর উদাহরণও আছে৷ ১৯৮০ সালে হেরোইন আসক্ত আট বছর বয়সি এক বালকের ওপর ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত ‘জিমি'স ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামে জ্যানেট কুকির প্রতিবেদনটি পরের বছর পুলিৎজার পেয়েছিল৷ কুকি রাতারাতি বনে যান তারকা রিপোর্টার৷ প্রতিবেদনে সবই ঠিক ছিল, কেবল বালক জিমির গল্পটির কোন সত্যতা ছিল না৷ পরে অবশ্য প্রমাণিত হয় কুকির শিক্ষাগত যোগ্যতাও ভুয়া ছিল৷ শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরির জন্য ২০০৩ সালে চাকরি হারান নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক জেসন ব্লেয়ার৷ পত্রিকাটি ভুল স্বীকার করে একই সাথে ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং নির্বাহী সম্পাদককে বিদায় দিয়ে বলেছিল, এ ধরনের প্রতিবেদন তাদের ১৫২ বছরের ইতিহাসে বিশ্বাসভঙ্গের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ৷ অপ্রমাণিত তথ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উপস্থাপন করায় ২০১৭ সালে সিএনএন তাদের অনুসন্ধানী দলের প্রধানসহ তিনজনকে চাকরিচ্যুত করেছিল৷

মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 
মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছবি: bdnews24.com

অনুসন্ধানী খবরের পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে হুইসেলব্লোয়াররা, যারা প্রতিষ্ঠান বা কর্মপ্রক্রিয়ার ভেতরে থেকে দুর্নীতি বা অনিয়মের খবর ফাঁস করে দেন৷ উইকিলিকসের চেলসি ম্যানিং, সাবেক এনএসএ কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেন বা পানামা পেপার্স অনুসন্ধানের পেছনে থাকা ‘জন ডো’ দেখিয়েছেন, তথ্য-ফাঁসের সাংবাদিকতা দিয়ে কত বড় পরিবর্তন আনা যায় সমাজে৷ কিন্তু হুইসেলব্লোয়ারদের উদ্দেশ্য বুঝে তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা সাংবাদিকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রমাণ না করা পর্যন্ত তাদের দেয়া তথ্যগুলো শুধুই অভিযোগ৷ এখানেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সাথে লিক সাংবাদিকতার পার্থক্য৷ প্রসঙ্গক্রমে গার্ডিয়ানের ভাষায় এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি সংক্রান্ত অনুসন্ধানী খবর লাতিন আমেরিকার ‘অপারেশন কার ওয়াশে'র সাংবাদিকদের কথা বলা যায়৷ ব্রাজিলসহ লাতিন আমেরিকার ১২টি দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তাদের প্রায় ৭৮ কোটি ডলার দুর্নীতির এই খবর নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে এখনও সংবাদ করে যাচ্ছেন৷ তাদের নীতি হলো প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোন অভিযোগ খবরের আলোর মুখ দেখতে পারে না৷

অল দ্য প্রেসিডেন্ট'স মেনের পর স্পটলাইট চলচ্চিত্রটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবেশনা৷ এই চলচ্চিত্রে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হাইলাইট করা হয়েছে৷ পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়া ক্যাথলিক চার্চে কয়েক হাজার শিশু যৌন নিপীড়ন নিয়ে করা বস্টন গ্লোবসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছিল এই চলচ্চিত্রের উপজীব্য৷ চলচ্চিত্রে বলা হয়, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হলো পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মত৷ অনুসন্ধানের শুরু হয় বড় কিছু দিয়ে, তারপর নজর ফেলা হয় ক্রমশ ছোট বিষয়ে৷ বড় পরিসর থেকে খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে প্রতিবেদক বের করে আনতে থাকেন ছোট ছোট সূত্র, যতক্ষণ না গল্পটা দাঁড়ায়৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে, কোন খোসা বা স্তর যদি পচা হয় আমরা পেঁয়াজের সে অংশটি খাই না, ফেলে দিই৷ তেমনি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কোন অভিযোগ বা তথ্য প্রমাণ করা না গেলে তা প্রকাশ করতে হয় না৷ করলে তা একমণ দুধের মধ্যে এক ফোটা লেবুর রসের মতই বিষক্রিয়া ঘটাতে বাধ্য৷

আল জাজিরার রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্নের মুখে সরকারের সততা

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য