অনশন ভাঙলেও ভিসির পদত্যাগের দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা
২৬ জানুয়ারি ২০২২ভোর রাতে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের আড়াই ঘন্টার আলোচনার পর শাহজালালের অনশনরত শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙেছেন। বুধবার সকাল ১০টার পর তার অনশন ভাঙার ঘোষণা দেন। কিন্তু তারা জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সহসাই তাদের নতুন কর্মসূচি দেয়ার কথা রয়েছে।
সাত দিন ধরে তারা অনশন করে আসছিলেন। ১৬৩ ঘণ্টা অনশনে তার প্রায় সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনশন ভাঙার পর ২৮ জন শিক্ষার্থী এখন হাসপাতালে রয়েছেন। তাদের এক মাস হাসপাতালে থেকে নিবিড় চিকিৎসা নিতে হবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একজন শিক্ষার্থী মেহনাজ মৌমিতা জানান,"অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছিলো তাই আমরা অনশন প্রত্যাহার করেছি। তবে ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা ক্যাম্পাস ছেড়ে যাচ্ছি না। ক্যাম্পাসে থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাবে।”
তিনি বলেন,"জাফর ইকবাল স্যার আসার পর যারা হাসপাতালে ছিলেন তারও চলে আসেন । এরপর আলোচনা করে আমরা অনশন ভাঙার সিদ্ধান্ত নিই। স্যার আমাদের দাবির সাথে একমত এবং সঙ্গে থাকার কথা বলেছেন।”
এদিকে অধ্যাপক ড. জাফর ইকলবাল সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন,"সরকারের লোকজন তাকে ছাত্রদের দাবি মেনে নেয়ার কথা বলার পরই আমি ছাত্রদের অনশন ভাঙাতে গেছি।”
তিনি অনশন ভাঙার পর সরকারে কাছে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন," আমি কোনো টাইম ফ্রেম বেধে দিতে চাই না। তবে আমাকে যেসব দাবি মেনে নেয়ার কথা বলা হয়েছে তা যেন নেয়া হয়। ছাত্ররা কোনো ভুল করেনি। তাদের আন্দোলন ঠিক আছে। তারা আহিংস আন্দোলনের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।”
তিনি ছাত্রদের বিরুদ্ধে দেয়া মামলা তুলে নেয়া এবং শাহজালালের সাবেক পাঁচজন শিক্ষার্থীকে আটকেরও সমালোচনা করে তাদের ছেড়ে দিতে বলেন।
এদিকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসি কুমার দাস বলেন,"শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে আলাপ আলোচনা করেনি সেটা অন্যায়। তারা অনশন ভেঙেছে তাতে আমরা খুশি। আমরা তো আমাদের ছাত্রদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙায় আমরা আংশিক দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়েছি। কিন্তু তাদের দাবি তো এখানো মেনে নেয়া হয়নি। তার জন্য আলাপ আলোচনা শুরু দরকার। শিক্ষার্থীরা অহিংস আন্দোলন করছিল সেখানে হামলা করা হয়েছে। এটা নিন্দনীয়। ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও আসলে তদন্ত কমিটি হয়নি।”
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হেসেন মনে করেন,"শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে উপাচার্যের পদত্যাগের কোনো বিকল্প নেই। ছাত্ররা তারা প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। ওই পদে থাকার নৈতিক অধিকার তিনি হারিয়েছেন। তাকে জোর করে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখে সমস্যার সমাধান করা যাবে না।
ফরিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এখনো পাইনি সত্য। কিন্তু তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে শিক্ষক বানালো সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আবার সরকার তাকে শাহজালালের ভিসিও নিয়োগ দিলো।”
আরেকজন শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন,"এটা শুধু শাহজালাল বিশ্ববিদ্যলয়ের সমস্যা নয়। আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সমস্যা আছে। দলীয় অযোগ্য লোকদের ভিসি পদে নিয়োগ দেয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। শাহজালালের ভিসিকে বিদায় করার মধ্য দিয়ে আপাতত সেখানকার সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু নতুন ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতাকেই মাপকাঠি বিবেচনা করতে হবে।”
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসি) এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান জানান,"সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের এখনো শিক্ষার্থীদের দাবি ও ঘটনা নিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়নি। বলা হলো আমরা তদন্ত করব, পদক্ষেপ নেব।”
প্রসঙ্গত, শাহজালল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হলের খবার মান নিয়ে ঘটনা শুরু হয়। আর তাতে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষাথীদের কর্মসূচির ওপর পুলিশি হামলায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। তার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীর উপাচার্যের পদত্যাগ দাবী করে আমরণ অনশন শুরু করেন।
শিক্ষার্থী মেহনাজ মৌমিতা বলেন,"উপাচর্যের আরো অনেক অনিয়ম এবং স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা অনেক আগে থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। পুলিশি হামলার ঘটনা সেই ক্ষোভের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে।”