1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অনন্ত জলিল, ভিডিও মুছে ফেললেই কি মানসিকতা বদলে যায়?

১২ অক্টোবর ২০২০

অনন্ত জলিল, বাংলাদেশের চিত্রনায়ক, ব্যবসায়ী, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তারকা৷তার মতো একজন ব্যক্তির কাছ থেকে এমন বক্তব্য আসা খুব দুর্ভাগ্যের৷

https://p.dw.com/p/3jo4y
Symbolbild Protest gegen Vergewaltigung
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মঙ্গলবার অধ্যাদেশ জারি হতে যাচ্ছে৷ কিন্তু এর মধ্যেও একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে৷ রবিবার রাতে রাজধানীতে ঘটেছে আরো একটি গণধর্ষণের ঘটনা৷ধর্ষণের শিকার ১৩ বছরের কিশোরী৷ দেশজুড়ে ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে৷

এর মধ্যে বাংলাদেশের চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল হাজির হলেন ‘ধর্ষণবিরোধী' একটি ভিডিও নিয়ে৷ ভিডিওটি পোস্ট করা হলো তার স্ত্রী বর্ষার ফেসবুক পেজ থেকে৷

অনন্ত জলিলের মূল বক্তব্য ধর্ষণ বন্ধ করতে হবে, কিন্তু নারীদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য শালীন পোশাক পরতে হবে৷ অন্তত জলিল কি আসলেই ধর্ষণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এই ভিডিওটি প্রচার করেছেন, নাকি সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য? কেননা এই উপমহাদেশে কিছু লোক মনে করেন, ধর্ষণের জন্য ধর্ষণের শিকার নারীই দায়ী৷ হয় তার পোশাক, মানসিকতা, চাল-চলন, শিক্ষা এসব উঠে আসে অভিযোগের তালিকায়৷ সেই নারীর ওপর দোষ চাপানোর পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার মানুষদের দলে নাম লেখালেন অনন্ত৷

তারপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হতেই বদলে ফেললেন বক্তব্য৷ ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেললেন আগের ভিডিওটি৷ নতুন ভিডিওতে বললেন, পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে৷ কিন্তু যে মানসিকতা থেকে তিনি প্রথম ভিডিওটি পোস্ট করেছিলেন, সমালোচনা না হলে কি তার মানসিকতায় বদল ঘটতো? অবশ্য ভিডিও সরিয়ে নিলেও মানসিকতা আদৌ বদলেছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে৷

‘অনন্ত জলিলরা' ভুলে যান, তারা সাধারণ মানুষ নন, তাদের অনুসারী লাখ লাখ৷ সেই লাখ লাখ মানুষ তার প্রথম ভিডিওটার মর্মার্থ মস্তিষ্কে বসিয়ে নিয়েছে, সেটা আর বদল হওয়ার নয়৷ যারা মনে করতেন ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাকই দায়ী, তাদের ধারণা আরো বদ্ধমূল হয়েছে৷ আর এর দায় আপনাকে নিতে হবে মিস্টার অন্তত জলিল৷

HA Asien | Amrita Parvez
ছবি: DW/P. Böll

ফেসবুকে আপনার ১৪ লাখ ফলোয়ার৷ আর বর্ষার ১০ লাখেরও বেশি৷ কারখানার শ্রমিকদের কাছে আপনি প্রিয়, অনেক সময় দরিদ্র মানুষকে সহায়তার কারণে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘রিয়েল হিরো' হয়ে উঠেছিলেন৷ কিন্তু আপনার সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রমাণ করলো বাংলাদেশের একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের কাছেই হিরো হতে চান আপনি৷

আপনি ভুলে গেলেন, ধর্ষক বয়স দেখে না৷ ভুলে গেলেন,  গত তিন মাসে যেসব নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তাদের বয়স ৪ মাস থেকে ৭২ বছর পর্যন্ত৷ তাদের বেশিরভাগই অতি সাধারণ পরিবারের মানুষ, যারা আপনার ভাষ্যমতে ‘শালীন' পোশাক পরেই ছিলেন৷ আমার মনে হয়, শুধু ধর্ষণ নয়, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে যে-কোনো অপরাধ থেকেই মানুষ বিরত থাকবে৷ আপনি আপনার সন্তানকে শেখান যেন পুরুষ না হয়ে মানুষ হয়, সে যেন মেয়েদের সম্মান করে৷ দেশের প্রতিটি পরিবারে যদি এই শিক্ষা দেয়া হয়, তাহলে কোনো মেয়েই আর ধর্ষণের শিকার হবে না৷ মেয়েদের ‘শালীন পোশাক' পরতে না বলে ছেলেদেরই বরং ‘চোখের পর্দা' করার শিক্ষা দেয়া উচিত প্রতিটি পরিবারে৷