৯০ বছরের অধ্যাপক
১৩ মে ২০১৩গ্যুন্টার ব্যোম মনপ্রাণে একজন শিক্ষক৷ সুদূর অতীতের চিন্তাবিদ ও দার্শনিকদের সম্পর্কে তিনি এমনভাবে কথা বলেন, যেন তাঁরা তাঁর পরিচিত জন৷ গ্রিসের বিভিন্ন দ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান থেকে শুরু করে কান্টের দর্শন, সব বিষয়েই তাঁর স্বচ্ছন্দ গতিবিধি৷ মাঝে মাঝে গোয়েটের ‘ফাউস্ট' থেকেও উদ্ধৃতি দেন৷ কিংবা ছোটখাট রসিকতা করে ছাত্র-ছাত্রীদের হাসান৷
প্রবীণদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়
গ্যুন্টার ব্যোমের ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই তাঁর মতোই অবসরভোগী প্রবীণ৷ ফ্রাংকফুর্টের গ্যোটে ইউনিভার্সিটিতে প্রবীণদের জন্য খোলা বিশেষ একটি বিভাগে পড়তে আসেন তাঁরা৷ যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘জীবনের তৃতীয় অধ্যায়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়'৷
১৯৮২ সালে গ্যুন্টার ব্যোমের উদ্যোগে গড়ে ওঠে বিভাগটি৷ যখন অন্যরা অবসর জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে থাকে, তখন তিনি নতুন কিছু শুরু করার উদ্যোগ নেন৷ এই প্রসঙ্গে গ্যুন্টার ব্যোম জানান, ‘‘আমার শিক্ষক আমার সাথে জীবনের মূলমন্ত্র দিয়ে দিয়েছিলেন, আর তা হলো, জীবনের সময় মানে জীবনের কাজের সময়৷''
গ্যুন্টার ব্যোমের মতে এই কাজটা হলো, নিজের শিক্ষা ও জ্ঞান অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া৷
১৯২৩ সালে ড্রেসডেন শহরে জন্ম হয় গ্যুন্টার ব্যোমের৷ বাবা ছিলেন শ্রমিক৷ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ হয়নি তাঁর৷ কিন্তু ছেলেকে শিক্ষার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন৷ পাঠিয়েছিলেন হাইস্কুলে৷ তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় ১৮ বছর বয়সে যুদ্ধে যোগ দিতে হয় গ্যুন্টার ব্যোমকে৷ সে সময়ের কথা বলতে গেলে এখনও কণ্ঠ রোধ হয়ে আসে বর্ষীয়ান এই ব্যক্তির৷
৫০ বছর ধরে গ্যোটে ইউনিভার্সিটির প্রতি বিশ্বস্ত
যুদ্ধের পর এর্লাংগেন ও মিউনিখে দর্শন, মনস্তত্ত্ব ও শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা করেন গ্যুন্টার ব্যোম৷ কয়েক বছর এক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন৷ ১৯৬৪ সালে ফ্রাংকফুর্টের গ্যোটে ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষাদর্শন বিভাগে গবেষণা সহকারী হিসাবে কাজ শুরু করেন৷
মানবতাবাদী শিক্ষার মূলমন্ত্র
মানবতাবাদী শিক্ষার মূলমন্ত্র, ধৈর্য ও মানবতা তাঁর জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে৷ গ্যুন্টার ব্যোমের ভাষায়, ‘‘আমি মনে করি, নিজের ভাষাকে সংযত করা, ঐতিহাসিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও বিনয়ী হওয়া মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আজকের বিশ্ববিদ্যালয় জগতে এইসব মূল্যবোধের অভাব রয়েছে৷''
কিন্তু প্রবীণদের জন্য খোলা নিজস্ব বিভাগে তাঁর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে পারেন গ্যুন্টার ব্যোম৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার সেমিনারে অল্পবয়সীরাও যোগ দিতে পারেন৷ কিন্তু তারা এই সুযোগটা প্রায় নিতেই পারেন না৷ আঁটসাট পাঠ্যক্রমের বাইরে কিছু করার মতো সময় তাদের থাকে না৷''
দর্শনের প্রফেসর গ্যুন্টার ব্যোম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা কোর্স উঠিয়ে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি প্রবর্তন করাকে সমালোচনার চোখে দেখেন৷ এতে ছাত্র-ছাত্রীদের সময়ের চাপে মধ্যে থাকতে হয়৷ ফলে জ্ঞানের প্রসার ঠিকমত হয় না৷ ব্যক্তিত্বের বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়৷ জানান তিনি৷
যতদিন শক্তি থাকে
তাই প্রবীণরাই হলেন গ্যুন্টার ব্যোমের বিশ্বস্ত ছাত্রছাত্রী৷ যেমন ব্রিগিটে রেমি৷ ৬৭ বছরের ব্রিগিটে নিয়মিত ব্যোমের ক্লাসে দর্শনের লেকচার শুনতে আসেন৷ ‘‘কেননা তাঁর বক্তৃতা থেকে আমি অনেক কিছু জানতে পারি৷ বয়স, মৃত্যু ও নশ্বরতা সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে পারি৷'' জানান ব্রিগিটে রেমি৷
গ্যুন্টার ব্যোম তাঁর কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক পান না৷ ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসাই তাঁর কাছে অনেক৷ কাজটা তিনি চালিয়ে যেতে চান, যতদিন শক্তিতে কুলোয়৷