‘সব জেলায় সিনেপ্লেক্স থাকলে ভালো হতো'
৬ জুন ২০১৭১৯৯৮ সাল৷ দেশের চলচ্চিত্রে তখনো দুর্দিন৷ ঢালিউডে ‘ভালো ছবি'র আকালকে আরো প্রকট করে তুলেছে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি৷ মুম্বই ছবির সফল নির্মাতা বাসু চ্যাটার্জি তখনই নিয়ে এলেন বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘হঠাৎ বৃষ্টি'৷ ভারতে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া একটি তামিল ছবির রোমান্টিক গল্প, নচিকেতা চক্রবর্তীর সংগীত পরিচালনায় চমৎকার কিছু গান এবং সর্বোপরি দু' দেশের এক ঝাঁক অভিনেতা-অভিনেত্রীর সুঅভিনয়কে সার্থক করে তোলা ঝকঝকে রঙিন প্রিন্ট – সব মিলিয়ে ছবি সুপার-ডুপার হিট৷ শ্রেষ্ঠাংশে ছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, মনোজ মিত্র, শ্রীলেখা মিত্রসহ দু' দেশের বেশ কয়েকজন সুপরিচিত, স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পী৷ তবে বড় চমক ছিল দুই আনকোরা মুখ – বাংলাদেশের ফেরদৌস ও ভারতের প্রিয়াঙ্কা ত্রিবেদী৷
কিছুদিনের জন্য বাংলা চলচ্চিত্রে সুবাতাস নিয়ে এসেছিল হঠাৎ বৃষ্টি৷ কিন্তু সেই সুবাতাস একেবারেই স্থায়ী হয়নি৷ তবে ‘হঠাৎ বৃষ্টি' নিয়ে হঠাৎ এলেও নায়ক ফেরদৌস এখনো হারিয়ে যাননি৷ ১৯ বছর পরও দুই বাংলায় জনপ্রিয় তিনি৷
টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘হঠাৎ বৃষ্টি'-র প্রায় দু' দশক পর কলকাতার চলচ্চিত্র কিন্তু দুঃসময় অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কেন এখনো সেই তিমিরেই পড়ে আছে? ফেরদৌস প্রথমেই বললেন বাজেটের কথা৷ ‘‘৯৮-এ হঠাৎ বৃষ্টি'র সময় একটা ছবির বাজেট ছিল ৮/১০ লাখ, এখন কলকাতায় ছবি হয় ৮/১০ কোটি টাকার বাজেটে৷'' ফেরদৌসের মতে, ঢাকাই ছবিতে এখন খুব কম প্রযোজকই এত টাকা লগ্নি করতে রাজি৷
বড় বাজেটের ছবি হয় না কেন? ফেরদৌসের অনেক কথার সারকথা একটাই – ‘‘ ভালো ছবির আকাল৷''
ভালো ভালো ছবি নির্মিত হলে এবং সেসব ছবি ভালো পরিবেশে দেখার সুব্যবস্থা করা গেলে দর্শক যে আবার হলমুখী হবে সে বিষয়ে নায়ক ফেরদৌসের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই৷ চলচ্চিত্রের এই দুঃসময়কে পেছনে ফেলার শর্ত হিসেবে তাই তাঁর মুখে উঠে এসেছে ৬৪টা জেলাতে সিনেপ্লেক্স নির্মাণের দাবি৷
কিন্তুসিনেপ্লেক্সে গিয়ে চলচ্চিত্র উপভোগের আর্থিক সামর্থ্য কি সমাজের খুব বেশি মানুষের আছে? চারবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারজয়ী অভিনেতা জানালেন, কয়েকদিন আগে মুম্বই ছবি ‘বাহুবলী' দেখতে ঢাকা থেকে কয়েকশ' মানুষ প্লেনের টিকিট কেটে ভারতে গেছে৷ নিজে এমনটি হতে দেখেছেন বলে ফেরদৌসের ধারণা, বিনোদনের জন্য পয়সা খরচ করতে প্রস্তুত মানুষের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে৷
কিন্তু তাদের কথা মাথায় রেখে সিনেপ্লেক্স বানালেই বা কী লাভ! সিনেপ্লেক্সগুলোতে তো বিদেশি ছবিই বেশি চলে! ফলে সিনেপ্লেক্স হলেই দেশি ছবির সুদিন ফিরবে এমন নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারে? এক্ষেত্রে ফেরদৌস স্মরণ করালেন কলকাতার দৃষ্টান্ত, বললেন, ‘‘ কলকাতায় যখন সিনেপ্লেক্স হলো, তখন বাংলা সিনেমা সেখানে দেখানো হয়নি৷ এখন প্রথমেই বাংলা সিনেমা দেখায়৷ সুতরাং...''
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷