1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হয়রানিমূলক মামলা প্রসঙ্গ ও আইনমন্ত্রীর নতুন ‘ব্যাখ্যা’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ জুন ২০২৩

নির্বাচনের আগে সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক হয়রানিমূলক মামলা করা হবে না- এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এই সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো হয়রানিমূলক মামলা করেনি৷ বিএনপির আমলে করেছে৷’’

https://p.dw.com/p/4SOFz
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷
আইনমন্ত্রীর দাবি, বর্তমান সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো হয়রানিমূলক মামলা করেনি৷ছবি: DW

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, ‘‘পুলিশ কখনোই হয়রানিমূলক মামলা করে না৷’’ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এগুলো কোনো ব্যক্তি করে৷ এরকম হলে পুলিশ দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে৷’’

নির্বাচনের আগে হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তার করা হবে না- বৃহস্পতিবার সংসদকে এমন কথাই বলেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷ তিনি গণফোরামের এমপি মোকাব্বির খানের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ‘‘আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে  করাকে নির্বাচন কমিশন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে৷ কোনো ধরনের হয়রানিমূলক মামলা না করার ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ সব দলের জন্য থাকবে সমান সুযোগ৷’’

তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কিছু সিদ্ধান্তের কথা জানান৷ তার মধ্যে রয়েছে, সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক হয়রানিমূলক মামলা না করা৷ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক দ্বারা প্রার্থী, সমর্থক, তাদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আক্রমণ না করা এবং এমন হলে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ৷ নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেয়া৷

এই সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো হয়রানিমূলক মামলা করেনি: আইনমন্ত্রী

হয়রানিমূলক মামলা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রীর ব্যাখ্যা

হয়রানিমূলক মামলা না হওয়া কীভাবে নিশ্চিত করবে সরকার? এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হয়রানিমূলক মামলা যাতে না হয়, তার মনিটরিং করবে নির্বাচন কমিশন৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আছে৷ সরকারের অ্যাপারেটাস আছে৷ সুতরাং এটা কোনো সমস্যা নয়৷ ২০১৪ সালে বিএনপি যখন অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, মানুষের বাড়ি-ঘর পুড়িয়েছে তখন তো আমরা প্রটেকটিভ মেজার নিয়েছি৷ এটা তো আর বিএনপির আমল না যে, বোমা মেরে জজ মিয়া নাটক সাজানো হবে৷ ২০০১ সালে সাতক্ষীরায় হিন্দুদের যারা নৌকায় ভোট দিয়েছে, তাদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে৷ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনই নিয়ন্ত্রণ করবে৷ আর আমরা যে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই এটা হলো তারই প্রতিচ্ছবি৷’’

তবে বিএনপির বলে আসছে হয়রানিমূলক মামলা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই করে৷ আইনমন্ত্রী তা মানেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘না, তারা দেখাতে পারবে না যে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে৷ যখন আইন-শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটেছে , যখন তারা অপরাধ করেছে, তখনই তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে৷ তাদের মামলা ছাড়া কখনোই গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ মানুষের ওপর আঘাত, হামলা, অগ্নিসন্ত্রাসের মামলা হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো হয়রানিমূলক মামলা হয়নি৷’’

তাহলে হয়রানিমূলক মামলার কথা এলো কেন? পুলিশ কি হয়রানিমূলক মামলা করে? এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘ব্যাপারটা হলো তাদের আমলে (বিএনপি) হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে৷ সেই হয়রানিমূলক মামলারও যে ডেফিনেশন তাদের আছে, সেই ডেফিনেশন অনুযায়ী যাতে হয়রানিমূলক মামলাও না হয়, তার ব্যবস্থা করা হবে৷’’

পুলিশ কখনোই হয়রানিমূলক মামলা করে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন

একই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হয়রানিমূলক মামলা পুলিশের কেউ করে না৷ আমরা তো একদম নিশ্চিত না হয়ে কোনো মামলা করি না৷ আর কোনো ব্যক্তি যদি হয়রানিমূলক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে মামলা করে, তাহলে তো তা তদন্তে বাদ পড়ে যায়৷ হয়রানিমূলক মামলা পুলিশ করে না৷’’

হয়রানিমূলক গ্রেপ্তারের ব্যাপরে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করে না৷’’

নির্বাচনের আগে হয়রানিমূলক মামলা কীভাবে বন্ধ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো হয়রানিমূলক মামলা করি না৷ এখন অন্য কেউ যদি করে, আপনি যদি করেন, তাহলে এটা যাচাই করে দ্রুত তদন্ত করে শেষ করে দেয়া হবে- এটাই হয়ত বোঝানো হয়েছে৷’’

বিএনপি যা বলছে

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রী সংসদে যা বলেছেন তার সেই কথা তো বিশ্বাস করা যায় না৷ যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, নতুন কোনো রাজনৈতিক মামলা হবে না, যে রাজনৈতিক মামলা চলমান সেগুলো প্রত্যাহার করা হবে- সেই আশ্বাস তিনি জেনেশুনে ভঙ্গ করেছেন৷ আর আইনমন্ত্রীর কথা কী বলবো৷ তিনি সেদিন বললেন নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন৷ পরে আবার বললেন, না, তিনি পদত্যাগ করবেন না৷ আইনমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রী যা-ই বলুন না কেন, তারা জাতির সাথে তামাশা করছেন৷’’

তার দাবি, ‘‘সরকার গত ১৪ বছরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ মামলা দিয়েছে, বিশ্বের কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে এত মামলা নজীরবিহীন৷ তারা গায়েবি মামলা দিয়েছে৷ পুলিশকে ব্যবহার করে মামলা দিয়েছে৷ মামলার কোনো উপাদান নাই এমন মামলা দিয়েছে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ এখন উদ্যোগী হয়েই মামলা করে৷’’

এদিকে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু অভিযোগ করেন, ‘‘২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে যে সংলাপ হয়েছিল, তখন আমি নিজে দলের পক্ষ থেকে আড়াই হাজারের উপরে মামলার তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দিয়েছিলাম৷ ওই মামলাগুলো এক মাসে দায়ের করা হয়েছিল৷ ওই মামলা তখন প্রত্যাহার তো দূরের কথা উল্টো ওই তালিকা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চলানো সরকারের জন্য সহজ হয়৷’’

তিনি বিএনপির দপ্তর থেকে ডয়চে ভেলেকে যে তালিকা দিয়েছেন তাতে বলা হচ্ছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এক লাখ ১১ হাজার ৭০টি মামলা হয়েছে৷ এসব মামলায় এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাত মিলিয়ে মোট আসামি ৪৯ লাখ ৭৪ হাজার ৪৮১ জন৷

এছাড়া চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচির দিন আট জেলায় আটটি মামলা হয়েছে৷ এতে সব মিলিয়ে আসামি ৯৩৭ জন৷ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫৩ জনকে৷ বিএনপির ইউনিয়ন পদযাত্রা কর্মসূচিতে সারাদেশে মামলা হয়েছে ৪৫টি৷ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৯২ জনকে৷ মোট আসামি করা হয়েছে  ছয় হাজার ২২৩ জনকে৷ তাদের মধ্যে অজ্ঞাত আসামি চার হাজার ৫১৭ জন৷
গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে মোট মামলা হয়েছে ৩৩৬টি৷ গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক হাজার ৫০ জনকে৷ মোট আসামি ৩৬ হাজার ৪৯০ জন৷ তাদের মধ্যে অজ্ঞাত আসামি ২৫ হাজার ১৭৩ জন৷

তাইফুর রহমান টিপু বলেন, ‘‘এখন সরকার একটি সেল বানিয়ে সেখান থেকে বাছাই করে বেশ কিছু মামলা আদালতে বিচারের ব্যবস্থা করছে৷’’

২০২১ সালের আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

নির্বাচন কমিশন কার্যালয় (ফাইল ফটো)
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ
প্রথম পাতায় যান