হেফাজতের বিরুদ্ধে শিগগিরই চার্জশিট
৫ মে ২০২১শুধু তদন্তই নয়, পুরোনো মামলাগুলোর চার্জশিটও দ্রুতই হবে বলে জানা গেছে। তবে হেফাজতে ইসলাম মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি ছাড়া মামলার তদন্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করছে না।
২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার পর হেফাজত ভেবেছিল তারা পরিস্থিতি সামলাতে পারবে। কিন্তু মামুনুল হকের রিসোর্ট কাণ্ডের পর চাপে পড়ে যায় হেফাজত। আর মামুমুল হককে গ্রেপ্তারের পর তারা আরো দুর্বল হয়ে যায়। কারণ মামুনুল হক হেফাজতের বিভিন্ন কর্মসূচি ঘেষণা ও বাস্তবায়নে মধ্যমনি হিসেবে কাজ করতেন। শুধু মামুনুল হক নয় এপর্যন্ত হেফাজতের ছোট বড় ৪৫ জন নেতাসহ ৯০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা হেফাজতকে চূড়ান্তভাবে দুর্বল করেছে।
হেফাজতের আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী তাই ২৫ এপ্রিল হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত করে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সরকারের কাছে তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় তাতে কাজ হয়নি। থামেনি গ্রেপ্তার অভিযান। সর্বশেষ বিলুপ্ত কমিটির প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফায়েজীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বুধবার।
হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৬ মার্চ এবং পরবর্তী দুই দিনের ঘটনায়, ঢাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মোট মামলা হয়েছে ১৫১ টি। এইসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি তিন হাজার ২৪৩ জন। অজ্ঞাত আসামি আরো ৮০ হাজার।
এছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় ঢাকাসহ সারাদেশে মামলা হয়েছিল ৮৩টি। ওই সব মামলায়ও ৮০ হাজারের মত আসামি বলে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে। এর বাইরে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আরো ২০টি মামলা হয়েছে হেফাজতের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাশকতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ১২ টি। নতুন আর পুরানো মিলিয়ে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মোট মামলা হয়েছে ২৫৪টি । আর এই সব মামলায় মোট আসামি এক লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি।
শাপলা চত্বরসহ পুরনো মামলার ২৯টিতে এখন পর্যন্ত চার্জশিট দেয়া হয়েছে । তিনটি মামলায় দেয়া হয়েছে ফাইনাল রিপোর্ট। জানা গেছে আরো ৭০টি মামলার চার্জশিট দুই-এক মাসের মধ্যে দেয়া হবে। মামলাগুলোর তদন্ত করছে সিআইডি, পিবিআই, ডিবি ও স্থানীয় থানা পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সব বিভাগকে মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আর ২৬ মার্চ ও তার পরে যে মামলা হয়েছে সেগুলোর তদন্তও দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের(পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন," আমরা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুতই শেষ করতে চাই। আশা করি দ্রুতই শেষ করতে পারব।”
অন্য সাধারণ মামলার চেয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তে এত সময় লাগে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন," একেকটি মামলায় শত শত আসামি। এর সাক্ষী প্রমাণ জোগাড় করতে সময় লাগে। অনেক ভিডিও ফুটেজ দেখতে হয়। আবার একজনকে গ্রেপ্তার করলে নতুন তথ্য জানা যায়, নতুন নাম আসে, তাদের ব্যাপারে আবার তথ্য নিতে হয় বলে সময় লাগে।”
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি মামলায় দুইজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা সেখানে নতুন কয়েকজনের নাম বলেছেন। তাদের বক্তব্য অনুসরণ করে একটি ল্যাপটপ, একটি ডেক্সটপ ও কালার টিভি উদ্ধার করতে হয়েছে। এরকম আরো অনেক ঘটনা আছে। একটার সাথে আরেকটার লিংক তৈরি হয়, সেটাও তদন্ত করে দেখতে হয়।
গোয়েন্দা বিভাগের কয়েকজন তদন্তকারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার তাদের মামলাগুলোর তদন্ত গুছিয়ে আনতে সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। তদন্তকারীদের নিয়মিত আপডেট জানাতে হচেছ।
মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় হেফাজত নেতারা বৈঠক করে চার দফা লিখিত দাবি জানালেও তাদের অলিখিত দাবি ছিল ‘যাদের দোষ কম” তাদের যেন আর ধরা না হয়। তারা এখন তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় ‘সরকারের সুদৃষ্টি চাইছে। হেফাজতের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিাহাদী। তিনি বলেন," আমরা প্রধানত গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি।”
তাহলে মামলাগুলো কি ঠিক নেই? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," এটাতো উকিলরা বলতে পারবেন । আমি কী করে বলব। আর সারাদেশের খবর তো আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন," মামলার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আবার কী হবে! সরকার যা করার করছে। আমরা শুধু দাবি করছি। আগেও করেছি। আরো করব।”