হাইকোর্টে মুখ পুড়লো পুলিশের, জামিন নয় জন ছাত্রের
১১ অক্টোবর ২০২৪বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতার ত্রিধারা সম্মিলনী পুজো মণ্ডপের সামনে থেকে আন্দোলনকারীদের আটক করা হয়। পরে লালবাজারে নিয়ে গিয়ে তাদের নয় জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হলে পুলিশ ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায়। বিচারক তাদের সাতদিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে ধৃতদের আইনজীবীরা হাইকোর্টে আপিল করেন। শুক্রবার পুজোর মধ্যেই হাইকোর্ট এই মামলা শুনতে রাজি হয়।
বিচারপতি শম্পা সরকারের এজলাসে মামলাটি শোনা হয় এদিন। দীর্ঘ শুনানিতে রাজ্য সরকার অভিযোগ করে, বড় চক্রান্তের চেষ্টা করেছিল ধৃত ছাত্ররা। তাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় শান্তি নষ্ট, শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের পাশাপাশি অস্ত্র রাখার অভিযোগও তোলা হয়।
পুলিশ হাইকোর্টকে জানায়, ধৃতদের ফোন ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো দরকার। তাহলেই বোঝা যাবে, তারা বড় চক্রান্ত করতে সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। তাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে পরিষ্কার যে তাদের সহিংসতার পরিকল্পনা ছিল।
দীর্ঘ শুনানির পর ধৃতদের অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্তি দেওয়ার কথা জানান বিচারপতি। ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয়। তবে ধৃতদের প্রতিদিন থানায় গিয়ে হাজিরা দিতে হবে। আর কোনো মণ্ডপে গিয়ে তারা আন্দোলন করতে পারবেন না। পাশাপাশি পুজো মণ্ডপের ২০০ মিটারের মধ্যে প্রতিবাদ জানানো যাবে না বলেও জানিয়েছেন বিচারপতি। বলেছেন, রাজ্য সরকারের কার্নিভালে কোনোরকম সমস্যা তৈরি করা যাবে না। এক হাজার টাকার বন্ডে দ্রুত এই ছাত্রদের জামিনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন বিচারপতি।
শুনানি চলাকালীন এদিন বিচারপতি বলেছেন, ধৃতদের কাছ থেকে পুলিশ কেবলমাত্র কিছু হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট এবং প্ল্য়াকার্ড উদ্ধার করেছে। তারা যে স্লোগান দিয়েছে তা ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করেনি। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে অনেকেই এই স্লোগান দিচ্ছে। ধৃতরা নেহাতই কম বয়সি এবং অতি উৎসাহে তারা এই কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি। পাশাপাশি বিচারপতি বলেছেন, যে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট পুলিশ দেখাচ্ছে, তাতে সহিংসতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে পুলিশ যে অভিযোগ করছে, তা ধোপে টিকছে না। বস্তুত, বিচারপতি সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
রাজ্যের তরফে হাইকোর্টকে বলা হয়েছিল, ধৃতরা পুলিশের উপর আক্রমণ করেছিল। তিনজন পুলিশের প্রেসক্রিপশনও আদালতকে দেওয়া হয়। কিন্তু আদালত জানিয়েছে, তিনজন পুলিশের প্রেসক্রিপশনই একরকম। এবং তা দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে, তাদের আঘাত করা হয়েছে।
এদিন এই নয় ছাত্রের জামিনের খবর পেয়ে কেঁদে ফেলেন ধর্মতলায় অনশনরত ডাক্তারেরা। ওই নয় ছাত্রকে 'সহযোদ্ধা' বলে সম্বোধন করেন। পাশাপাশি এদিন সন্ধ্যায় ধর্মতলায় অনশন মঞ্চে মহা সমাবেশের ডাক দিয়েছেন তারা।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই)