1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বপ্নের সেতুর সূচনা

২৫ জুন ২০২২

বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের অবকাঠামো পদ্মা বহুমুখী সেতুর যাত্রা শুরু হলো৷ শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উৎসবমুখর আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেতুটি উদ্বোধন করেন৷

https://p.dw.com/p/4DEIh
Bangladesch | Eröffnung der längste Brücke in Bangladesch
ছবি: Press Information Department of Bangladesh/PID

মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে দেশের বৃহত্তম এ সেতুর উদ্বোধনে জাতির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আসুন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এই ঐতিহাসিক দিনে যে যার অবস্থান থেকে দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার শপথ নিই, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব৷’’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-কনক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক৷ এ সেতু বাংলোদেশের জনগণের৷ এর সঙ্গে জড়িত আছে আমাদের আবেগ, সৃজনশীলতা, সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং আমাদের প্রত্যয়, জেদ৷ যে জেদের কারণে আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণে সক্ষম হয়েছি৷’’

বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, মানুষের সমর্থন আর সাহসেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কঠিন কাজ সম্ভব হয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনারা সবাই জানেন, এ সেতু নির্মাণ করতে যখন আমরা যাই, অনেক ষড়যন্ত্র শুরু হয়, মিথ্যা অপবাদ, দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে একেকটি মানুষ, একেকটি পরিবারকে যে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে, আমার ছোট বোন শেখ রেহানা, আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আমার মেয়ে সায়মা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, আমার অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা, পদ্মাসেতু নির্মাণে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলাম ড. মসিউর রহমানকে, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া… যারা এর সাথে জড়িত ছিল, তাদের ওপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়, তাদের পরিবারসহ যে যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে, আমি তাদের প্রতি সহমর্মিমতা জানাই৷’’

পাশাপাশি পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত সব প্রকৌশলী, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, দেশি-বিদেশি পরামর্শক, ঠিকাদার, প্রযুক্তবিদ, শ্রমিক, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি৷

অপমানের প্রতিশোধ: ওবায়দুল কাদের

উদ্বোধনী আয়োজনে সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই সেতু বঙ্গবন্ধু পরিবার ও বাঙালিদের অপমানের প্রতিশোধ৷

কাদের বলেন,  ‘‘গোটা জাতি আপনাকে স্যালুট করে৷ সারা বিশ্বে আজ আপনি প্রশংসিত৷ আপনি প্রমাণ করেছেন ইয়েস উই ক্যান৷ নিজের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছি৷ বঙ্গবন্ধু কন্যা মাথা নত করেনি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘অপবাদ দিয়েছে দুর্নীতির৷ আজকে বঙ্গবন্ধু পরিবার, সাবেক উপদেষ্টা, মন্ত্রী, সচিব অনেককে অপমান করা হয়েছে৷ বঙ্গবন্ধু কন্যা আমি মনে করি সক্ষমতার প্রতীক, এটা সত্য৷ তার চেয়ে বড় সত্য আমরা আমাদের প্রতিশোধ নিয়েছি৷’’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন,  ‘‘সেতু নির্মাণে অন্য কারও কোনো কৃতিত্ব নেই৷ একমাত্র কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার৷ তার নামে পদ্মা সেতুর নাম হওয়ার কথা ছিল৷ সারাবাংলার দাবি ছিল এটা৷ কিন্তু তিনি নাকচ করে দিয়েছেন৷”

বাংলাদেশ সময় বেলা ১২ টার দিকে মাওয়া প্রান্ত থেকে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের পর প্রথম যাত্রী হসিবে টোল পরশিোধ কর গাড়ি বহর নিয়ে সেতু পার হন প্রধানমন্ত্রী৷ 

বাংলাদেশের বিশাল অর্জন: বিশ্ব ব্যাংক প্রতিনিধি

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী আয়োজন অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি মার্সি টেম্বন৷

 বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার৷ আমরা এই সেতুর গুরুত্ব বুঝতে পারি৷ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ ‍ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘পদ্মা সেতুর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে৷ ভ্রমণের সময় কমে আসবে৷ কম সময়ে কৃষক তার খামারে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ করতে পারবেন৷ সবমিলে পদ্মা সেতু এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি বয়ে আনবে, দারিদ্র্যও কমিয়ে আনবে৷”

উল্লেখ্য, শুরুতে পদ্মা সেতুতে  অর্থায়নে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক৷ এই সেতু নির্মাণে প্রাক্কলিত খরচের বড় অংশই তাদের দেয়ার কথা ছিল৷ পরবর্তীতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে প্রকল্পটি থেকে সরে আসে তারা৷ পরে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়৷

৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার নির্মিত সেতুর উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণে মার্সি টেম্বন বলেন,  ‘‘আমরা খুবই খুশি, এই সেতুর নির্মাণ শেষে উদ্বোধন করা হচ্ছে৷ দীর্ঘ দিনের উন্নয়নের বন্ধু হিসেবে আমরা উচ্ছ্বসিত৷”

 গৌরবান্বিত বোধ করছি: জাফরুল্লাহ

‘পদ্মা সেতুর'  নাম নিজের নামের করার দাবি নাকচ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী৷ এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো তিনি ‘প্রজ্ঞার' পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন৷

শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তি হিসেবে বলি, ইতিহাসে অনেক কিছু দেখেছি, শুধু একটা জিনিস ছাড়া, সাতই মার্চে দেশে ছিলাম না৷ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে৷ আজকে এটা উদযাপনের অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে৷”

পদ্মা সেতুর জন্য দেশের মানুষ ‘গর্বিত’ মন্তব্য করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা৷ তিনি  বলেন, ‘‘উনার প্রজ্ঞাটা অন্য কারণে, সবাই উনাকে বলছিল- এটার নাম হাসিনা ব্রিজ করা হোক৷ উনি করেননি, উনি করেছেন পদ্মা ব্রিজ৷”

‘‘এটা ভবিষ্যৎ সুদূরপ্রসারী..., প্রমাণ করেছেন উনি, সাহসী৷ উনি জাতিকে যে উপহার দিয়েছেন, আমরা তাকে মাথায় উঠিয়ে রাখব৷ আমরা গৌরবান্বিত বোধ করছি৷”

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘উনি বড় কাজগুলো করেই ফেলেছেন৷ এখন উনাকে নজর দিতে হবে দেশের ছোট মানুষগুলোর দিকে৷ উনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি, উনার সুস্থতা কামনা করছি৷ আমরা একত্রে মিলে সুন্দর বাংলাদেশের অব্যাহত স্বপ্ন দেখছি৷”

এফএস/আরকেসি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)