নিউজিল্যান্ডের পর এবার স্পেন। ইচ্ছামৃত্যুর বিল পাশ হয়ে গিয়েছে দেশের সংসদের নিম্নকক্ষে। উচ্চকক্ষ বা সেনেটে তা পাশ হয়ে গেলেই আইন বলবৎ হয়ে যাবে। তবে স্পেনে ইচ্ছামৃত্যুর বিল পাশ করানো খুব সহজে হয়নি। রোমান ক্যাথোলিকদের দেশে বাধা এসেছে অনেক।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে ব্যাখ্যা করেছেন। এ দিন দেশের সংসদের নিম্নকক্ষে ইচ্ছামৃত্যু সংক্রান্ত বিলের উপর ভোটাভুটি হয়। ১৯৮-১৩৮ ভোটে জয় হয় ইচ্ছামৃত্যু বা ইউথেনেশিয়ার। অর্থাৎ, গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগী ইচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানাতে পারবেন। চিকিৎসকেরা সম্মত হলে ইচ্ছামৃত্যুর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
-
কিশোরদের আত্মহনন ঠেকানোর সাত দাওয়াই
মৃত্যু নিয়ে আলাপ
‘‘আমি তোমার ঝামেলা হয়ে থাকতে চাই না’’ বা ‘‘আমি আত্মহত্যা করবো’’--মজার ছলেও যদি কোনো কিশোর এসব কথা বলে, সেটা গুরুত্ব দিয়ে নিতে হবে৷ তাঁর ওপর কৌশলে দৃষ্টি রাখতে হবে৷ অনেক সময় মুখে না বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এমন কথা লিখতে পারে কিশোররা৷ সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে৷
-
কিশোরদের আত্মহনন ঠেকানোর সাত দাওয়াই
বিধ্বংসী আচরণ
কিশোর বয়সে রাগ এক-আধটু হয়েই থাকে৷ কিন্তু রেগে গিয়ে নিজের ক্ষতি করতে চাওয়ার অর্থ হলো, আত্মহত্যা প্রবণতা দানা বাঁধতে শুরু করা৷ অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে৷ খেয়াল রাখতে হবে, অতিমাত্রায় ড্রাগ আর অ্যালকোহলে সেবনে কিশোরটি জড়িয়ে পড়ছে কি না৷
-
কিশোরদের আত্মহনন ঠেকানোর সাত দাওয়াই
সমাজবিমুখতা
একা থাকা পরিণত বয়সেও কষ্টের৷ তাই কৈশোরে পরিবার ও বন্ধু থেকে আলাদা হয়ে থাকার মানসিকতাকে আত্মহত্যার কারণ বলছেন বিশ্লেষকরা৷ বন্ধুবান্ধব, ভাই-বোন নিয়ে যারা সামাজিক সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে, মানসিক যন্ত্রণায় ভোগার সুযোগ তাঁদের কম৷ তাই বাবা-মাসহ পরিবার পরিজনদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা খুব জরুরি৷ কোনো কিশোর যাতে নিজেকে একা মনে না করে৷
-
কিশোরদের আত্মহনন ঠেকানোর সাত দাওয়াই
ফাঁদে পা অথবা একরাশ হতাশা
কৈশোরের উচ্ছ্বল দিনগুলোতে হতাশা কিংবা কোনো ভুলে পা দেয়া উস্কে দিতে পারে আত্মহত্যার চেষ্টাকে৷ তাই কিশোর মনের চিন্তাটা শুনতে হবে অভিভাবকদের৷ সন্তান কি বলতে চায় তা শুনতে হবে৷ কিছু বলতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে, তাহলে অভয় দিয়ে, ভালোবেসে সেই কথাটা শুনে নিন৷
-
কিশোরদের আত্মহনন ঠেকানোর সাত দাওয়াই
অভ্যাসে বদল
কিশোর বয়সে নিত্যদিনের জীবনে হুট করে পরিবর্তন দেখা গেলে তাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই৷ মনে রাখতে হবে, এটা হতাশার লক্ষণ৷ বাবা-মা-কে বুঝে নিতে হবে, তাঁদের আদরের সন্তান কোনো একটা সমস্যায় ভুগছে৷ দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা ঘুম মানে আত্মহত্যা প্রবণতা৷ আর ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ঘুমানো কিন্তু বিষণ্ণতা৷ সচেতন থাকুন৷
-
কিশোরদের আত্মহনন ঠেকানোর সাত দাওয়াই
প্রিয় জিনিসের প্রতি অনীহা
কোনো কারণ ছাড়া প্রিয় ক্রিকেট ব্যাট ছুঁড়ে ফেললো, আব্দারের পর আব্দার করে কেনা হাতঘড়িটার দিকে উদাসীন- আপনার সন্তানের মধ্যে এমন আচরণ দেখলে সতর্ক হয়ে যান৷ মনে রাখবেন, নিজের ব্যবহারের জিনিস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া মানে, তার মাথায় কিছু একটা চলছে৷
-
কিশোরদের আত্মহনন ঠেকানোর সাত দাওয়াই
অকারণ মেজাজ দেখানো
কৈশোরে ক্ষণে ক্ষণে মন পালটানো নতুন কিছু নয়৷ তারপরেও সতর্ক থাকতে হবে৷ পরিবারের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা আছে কিনা তা জানতে হবে৷ সবমিলিয়ে কৈশোরের উচ্ছ্বলতায় সন্তানও যেন উচ্ছ্বল থাকে, অভিভাবককে হতে হবে সবচেয়ে কাছের বন্ধু৷
স্পেনে ২০১৯ সালে ইচ্ছামৃত্যু নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছিল, দেশের সিংহভাগ মানুষ ইচ্ছামৃত্যুর পক্ষে। তবে বিরোধিতাও ছিল। দেশের কনসারভেটিভ পার্টি এবং অতি দক্ষিণপন্থী দল এই বিলের চরম বিরোধিতা করেছে। তাদের বক্তব্য, খ্রিস্টান ধর্মের প্রথা অনুযায়ী এমন আইন মেনে নেওয়া যায় না। ধর্ম আত্মহত্যাকে সমর্থন করে না। বামপন্থী এবং মধ্য দক্ষিণপন্থীরা অবশ্য এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, যে ব্যক্তির চিকিৎসা আর সম্ভব নয়, যিনি অসুখে তীব্র কষ্ট পাচ্ছেন, তাঁর ইচ্ছামৃত্যু বেছে নেওয়ার অধিকার থাকা উচিত।
এখন ইচ্ছামৃত্যু স্পেনে দণ্ডনীয় অপরাধ। ১০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী বছরের গোড়ায় উচ্চকক্ষ বা সেনেটেও পাশ হয়ে যাবে আইনটি।
এ দিন সংসদে যখন বিলটির উপর ভোট হচ্ছে, তখন কিছু মানুষ সংসদের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। খুলির ছবি দেওয়া ব্যানার হাতে তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এ ভাবে ধর্মকে অমান্য করে আত্মহত্যাকে বৈধতা দেওয়া অনুচিত।
ইচ্ছামৃত্যুরআইন অবশ্য যথেষ্ট জটিল। রোগীকে বিভিন্ন পর্যায়ে চারবার ইচ্ছামৃত্যুর আবেদন করতে হবে। প্রথম দুইবার লিখিত আবেদন করতে হবে। এরপর চিকিৎসকরা আবেদনের পর্যালোচনা করবেন। তারপর আরো দুইবার আবেদন জানাতে হবে। আবেদনের যে কোনো পর্বে চিকিৎসকেরা মত বদলাতে পারবেন। শুধু তাই নয়, কোনো চিকিৎসক যদি এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না চান, তা হলে তাঁকে বাধ্য করা যাবে না। ধর্মীয় ভাবাবেগে যাতে কোনোভাবেই আঘাত না লাগে, সে দিকে খেয়াল রাখা হয়েছে বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি আবেদনকারীকে স্পেনের নাগরিক হতে হবে। অন্য দেশের মানুষ স্পেনে গিয়ে ইচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানাতে পারবেন না।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ)