স্থাপত্যের নোবেল বিজয়ীরা
স্থাপত্য জগতে অনন্য সব উদাহরণ তৈরি করা স্থপতিদের কাজের প্রতি সম্মান জানাতে দেওয়া প্রিৎস্কার পুরস্কার ‘স্থাপত্যের নোবেল’ নামে পরিচিত পেয়েছে৷ ২০১৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই পুরস্কার জেতা বিজয়ীদের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
২০২৪: রিকেন ইয়ামামোতো
জাপানের আধুনিক শহরগুলো ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে বলে বেড়েছে উদ্বেগ৷ আর সেখানেই দেশটির স্থপতি রিকেন ইয়ামামোতো দেখালেন উঠোন আর ঝুল বারান্দাসহ বাড়ি তৈরির নকশা৷ বিচারক দল বলছেন, ‘এটি একটি নতুন স্থাপত্য ভাষা, যা শুধু পরিবার নিয়ে বসবাস নিশ্চিত করে না, বরং কমিউনিটিকে নিয়ে একত্রে বসবাসের সুযোগ তৈরি করে৷’ ৭৮ বছরে ইয়ামামোতো নবম জাপানি হিসাবে পেলেন এই স্বীকৃতি৷
২০২৩: ডেভিড চিপারফিল্ড
বছরের পর বছর ধরে সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে তার নাম আলোচনায় এলেও ২০২৩ সালে এসে স্বীকৃতি পান ব্রিটিশ এই স্থপতি৷ ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি এই স্থপতির সম্মানকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন জুরিরা৷ জার্মানির রাজধানী বার্লিনে মিউজিয়াম আইল্যান্ড নির্মাণ এবং মারবাখে আধুনিক সাহিত্যের জাদুঘরের নকশাও করেছেন তিনি৷ বিশ্বজুড়ে শতাধিক প্রকল্পের নকশা করেছেন চিপারফিল্ড৷
২০২২: ফ্রঁসিস কেরে
১৯৬৫ সালে বুরকিনা ফাসোতে জন্মেছিলেন ফ্রঁসিস কেরে৷ ১৯৮৫ সাল থেকে জার্মানিতেই থাকছেন তিনি৷ বার্লিনে কেরে আর্কিটেকচার নামে একটি অফিস চালান তিনি৷ কাজের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক উপকরণ এবং ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় কারুশিল্পের উপর নির্ভর করেন৷ নিজ শহর গান্ডোতে ২০০১ সালে নির্মিত এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টির নকশা করেছিলেন তিনি৷
২০২১: আন লাকাতঁ এবং জঁ-ফিলিপ ভাসাল
১৯৭০ সালে ফ্রান্সের বর্দুতে পড়াশোনার সময় আন লাকাতঁ ও জঁ-ফিলিপ ভাসালের দেখা হয়৷ পরে তারা নাইজারে কাজ করেছেন৷ তাদের নকশা এখনও দেশটির নির্মাণখাতে প্রভাব রেখে চলেছে৷ সামাজিক আবাসন ধ্বংসের বিরুদ্ধে তাদের তীব্র অবস্থান৷ ২০০২ সালে ফ্রান্সের রাজধানীতে খোলা হয়েছিল পালে দে টোকিও (ছবিতে থাকা ভবন)৷ তাদের বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম৷
২০২০ ইভন ফ্যারেল এবং শেলি ম্যাকনামারা
৪১ বছরের ইতিহাসে এই দুই আইরিশ স্থপতি হলেন চতুর্থ এবং পঞ্চম নারী, যারা এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি পেয়েছেন৷ তাদের ডাবলিনভিত্তিক ফার্ম গ্রাফটন আর্কিটেক্টস কংক্রিট এবং পাথরের নকশার জন্য বেশ সুপরিচিত৷ বিচারকেরা এই জুটি সম্পর্কে বলেন, তাদের কাজে মানবিক বিষয়গুলো যেমন ফুটিয়ে তোলা হয়, পরিবেশের দিকটিও তেমন গুরুত্ব পায়৷ মিলানের বোককোনি ইউনিভার্সিটি (ছবিতে থাকা নকশা) তাদের একটি প্রশংসিত কাজগুলোর একটি৷
২০১৯: আরাতা ইসোজাকি
১৯৬০ সাল থেকে ভবন নির্মাণের নকশা তৈরি করা শুরু করেন জাপানের প্রয়াত স্থপতি আরাতা ইসোজাকি৷ এই ক্ষেত্রে তাকে স্বপ্নদর্শী বলা হয়৷ কারণ, তার কাজগুলো ছিল ভবিষ্যতমুখী৷ কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারসহ (ছবিতে থাকা ভবন) প্রায় ১০০টি ভবনের নকশা করেছেন তিনি৷
২০১৮: বালকৃষ্ণ দোশি
ভারতের ইন্দোরে কম খরচে আবাসন নির্মাণ প্রকল্প অরণ্য (ছবিতে থাকা ভবন) এর নকশা করেছিলেন বালকৃষ্ণ দোশি৷ ঘর, উঠান এবং অভ্যন্তরীণ পথসহ মোট ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে প্রকল্পটিতে৷ ২০২৩ সালে মারা গেছেন এই ভারতীয় স্থপতি৷ তবে ২০১৮ সালে প্রিৎস্কার পুরস্কারের জুরিরা তার কাজের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন৷
২০১৭: রাফায়েল আরান্দা, কারমে পিখেম এবং রামন ভিলাল্টা
তাদের স্থাপত্য ‘শেকড়মুখী এবং বিশ্বের জন্য পরিণত৷’ এমন বিশেষণ দিয়েই ২০১৭ সালে এই স্প্যানিশ ত্রয়ীকে প্রিৎস্কার পুরস্কার দেন বিচারকেরা৷ এই তিন জন মূলত ছোটো শহরে বেশি কাজ করেন৷ তাদের সবচেয়ে পরিচিত কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে রিপোলে লা লিরা থিয়েটারের পাবলিক স্পেস এবং বেসালুতে এল পেটিট কমতে কিন্ডারগার্টেন (ছবির ভবনটি)৷
2016: Alejandro Aravena
২০১৬: আলেখান্দ্রো আরাভেনা চিলির স্থপতি আলেখান্দ্রো আরাভেনা চার অংশীদার নিয়ে তৈরি করেছে এলিমেন্টাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান৷ তাদের প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষ এবং পরিবেশকে একীভূত করেন তারা৷ সান্তিয়াগো ডি চিলি ক্যাম্পাসের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন সেন্টারটি একটি ১৪তলা ভবন৷ জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতিপূ্র্ণ ভবনটি সূর্য ও তাপ থেকে সুরক্ষা দেয়৷
২০১৫: ফ্রাই অটো
ফ্রাই অটোর সবচেয়ে বিখ্যাত সৃষ্টি হলো মিউনিখের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ফিলিগ্রি ছাদ (ছবিতে)৷ জার্মান এই স্থপতি মরণোত্তর প্রিৎস্কার পুরষ্কার পেয়েছিলেন৷ তবে ২০১৫ সালে মারা যাওয়ার আগে তিনি যে সম্মাননাটি পেতে যাচ্ছেন, এই কথাটি জানতে পেরেছিলেন৷ তখন তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি এই পুরস্কার পাওয়ার জন্য কখনো কিছু করিনি৷’’
2014: Shigeru Ban
২০১৪: শিগেরু বান টোকিওতে জন্ম নেয়া এই স্থপতি প্রকৌশল দক্ষতার সঙ্গে নান্দনিকতার সংযোগ ঘটান৷ আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট এবং উপাদান নিয়ে ফিনিশ স্থপতি আলভার আল্টোর কাজে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বান৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে ব্যবহারের জন্য কাগজের টিউব দিয়ে তৈরি একটি আশ্রয়কেন্দ্রসহ অস্থায়ী আবাসন সুবিধা তৈরির নকশা করেছেন তিনি৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে ফ্রান্সের মেটসে নির্মিত পপিদুঁ সেন্টার৷
২০১৩: টয়ো ইটো
২০০৯ সালে বার্সেলোনার পাসেজ দে গ্রাসিয়াতে এই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটি তৈরি করেছিলেন৷ ভবনটির বাইরের কাজ কাতালান শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থপতি আন্টোনি গাউডির কথা মনে করিয়ে দেয়৷ এই ধরনের বাঁকা আকৃতি হলো জাপানি স্থপতি টয়ো ইটোর ট্রেডমার্ক৷ এর মধ্য দিয়ে তিনি ভবনগুলোকে একটি জৈবিক এবং শারীরিক গুণমান দিতে পারেন৷