1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্ট্রিট পেইন্টিং আজ আঁধারের গলি-ঘুঁজি-রাজপথ ঘুরে গ্যালারিতে

১৭ অক্টোবর ২০১০

একসময় যা ছিলো অবৈধ আর চুরি করে করার বিষয়, একসময় যা পুলিশ আর নিরাপত্তারক্ষীর নজর এড়িয়ে, রাতের আঁধারে লুকোছাপা করে চটজলদি আর গোপনে সারতে হতো, আজ সেই স্ট্রিট পেইন্টিং এর কপাল ফিরেছে৷

https://p.dw.com/p/Pfvj
Messe Stroke.03 in Berlin
বার্লিনের স্ট্রিট আর্টছবি: DW

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৃষ্টিশীল, প্রতিবাদী আর অভাগা এই রাস্তার চারুশিল্পকে সময়ই যেন টেনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে অভিজাত গ্যালারির পাদ-প্রদীপের আলোর কেন্দ্রে৷

বহু বছর ধরেই স্প্রে-ক্যান, স্টেনসিল আর রঙ সেঁটে সেঁটে রাতের আঁধারে আঁকা এই বিশেষ চিত্রকর্মের আজ রমরমাই বলা চলে৷ এই স্ট্রিট আর্ট চিত্রশিল্পীদের আন্ডাগ্রাউন্ড আর্টিস্ট বলেও ডাকা হয়৷ গলি থেকে সটান গ্যালারি, এতো এতকাল রূপকথার গল্পেই সম্ভব ছিল কিন্তু আজ গলির আঁধার হটিয়ে কয়েকজন তারকা স্ট্রিট পেইন্টারের কল্যাণে তা বাস্তবেই সম্ভব হয়েছে৷ যুক্তরাজ্যের এমনই একজন বিখ্যাত শিল্পীর নাম - ব্যাঙ্কসে৷ ২০০৭ সালে তাঁর একটি স্ট্রিটপেইন্টিং এর দাম উঠেছিল চার লক্ষ ষাট হাজার ডলার৷ বা দুই লক্ষ অষ্টাশি হাজার পাউন্ড৷ সেসময় গ্যালারি মালিকদের তো চক্ষু তা দেখে চড়কগাছেই ঠেকেছিল৷

গত সপ্তাহের এক স্ট্রিট পেইন্টিং মেলার আয়োজনের কল্যাণে সম্প্রতি বার্লিনের গ্যালারিতে এমনই সব স্ট্রিট পেইন্টারদের কাজের নমুনা মানুষজনের চোখে পড়েছে৷ স্ট্রোক থ্রি'র প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মার্কো শোয়াল্বে ডয়চে ভেলেকে এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, এখানকার অধিকাংশ স্ট্রীট পেইন্টারের কেউই আর অবৈধভাবে কাজ করতে চান না, আর তারা কেউই এভাবে কাজ করতে আগ্রহী নন৷

Street Art, Sticker
লন্ডনের একটি স্ট্রিট আর্ট

তিনি আরো বলেন, গলি ছেড়ে গ্যালারিতে ঠাঁই নেওয়ার বিষয়টি খুব বাস্তবানুগ একটি পদক্ষেপই হয়েছে৷ শোয়াল্বে বার্লিনের ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকার ইনটক্সিকেটেড ডেমনস আরবান আর্ট গ্যালারিটিও চালান৷ গ্যালারি চালাতে গিয়ে তিনি দেখেছেন - এধরণের একটি চিত্রমেলার আয়োজন করার বিষয়টি আসলেই প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল৷ আর তা উঠতি চিত্রশালা বা আর্টগ্যালারিগুলোর সীমিত সাধ্যের নাগালেই৷

স্ট্রোক থ্রিতে ড্যানিশ স্ট্রিট আর্টিস্ট মর্টেন অ্যান্ডারসনের কাজও রাখা ছিল৷ তিনি তাঁর কৈশরে, সেই আশির দশকেই হিপ-হপের পাশাপাশি এই চিত্ররীতির প্রতি মজেছিলেন৷ এখনো তিনি স্ট্রিট পেইন্টিং করেন কিন্তু যেখানে অনুমতি থাকে কেবল সেখানেই৷ জানা গেছে, টানা দশ বছর লুকিয়ে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে স্প্রে ক্যানের রঙ ইতস্তত ছড়িয়ে এখন নাকি তিনি থিতু হতে চাইছেন ক্যানভাসে, এবং অবশ্যই তা বৈধভাবে৷ তাঁর বক্তব্য হচ্ছে- এর ফলে তিনি এখন স্ট্রিট পেইন্টিংয়ের বুনো উচ্ছ্বাসটি ক্যানভাসে টানতে পারবেন৷

তিনি আরো বলেন, ‘আর তাছাড়া ক্যানভাসে আঁকার ফলে এই ক্যানভাসটিকে চাইলে এখন লস অ্যাঞ্জলেসেও বয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে৷' তাঁর আঁকা ছবির রেখা, রঙ সবকিছুতেই স্ট্রিট পেইন্টিংয়ের উচ্ছাস থাকলেও তাঁর আঁকা ছবিটি এখন ক্যানভাসে হওয়ার কারণেই একধরণের নাগরিক বিমূর্ততা সেখানে ফুটে ওঠে৷

বার্লিনের ইমেস স্টেনসিলে আঁকেন, তিন অবশ্য স্টুডিওর চাইতে বাইরেই ছবি আঁকাকে প্রাধান্য দেন৷ তার মতে বাইরে আঁকলে উপস্থিতজনদের নানান মন্তব্য তাঁকে উৎসাহিতই করে৷ এতে এক অনির্বচনীয় আনন্দই পান তিনি৷

যাইহোক স্ট্রিট পেইন্টিংয়ের সুদিন এসেছে এটি স্পষ্ট৷ লুকিয়ে চুরিয়ে ছবি আঁকার দিন শেষ হয়েছে স্ট্রিট পেইন্টারদের৷ যদিও আজো অনেক রক্ষণশীল শহর রয়েছে৷ যেখানকার স্ট্রিট পেইন্টাররা এখনও পুলিশ আর নিরাপত্তারক্ষীদের এড়িয়ে ফাঁকি দিয়ে আঁধারেই ছবি আঁকেন৷ কিন্তু বার্লিন তেমন নয়৷ এশহরের কর্তৃপক্ষই বলুন আর মানুষ-জন, এব্যাপারে তাঁরা যথেষ্টই সহনীয়৷ হয়তো তাঁরা স্ট্রিট পেইন্টিংয়ের তীব্র, তীক্ষ, তমোহর রঙের বর্ণিল বিভায় মজেছেন৷

প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা

সম্পাদনা:আব্দুল্লাহ আল-ফারূক