স্কুল শিক্ষার্থীদের নির্বাচন কোন দেশে কেমন?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কুল পর্যায় থেকেই শিশুদের নেতৃত্ব চর্চায় উৎসাহ দেয়া হয়৷ কোথাও কাউন্সিল, কোথাও গভর্নমেন্ট, কোথাওবা কেবিনেট গঠনের মাধ্যমে এই সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে৷ কোনো কোনো দেশে এই চর্চা চলছে প্রায় শত বছর ধরে৷
কেন গুরুত্বপূর্ণ
নিজেদের জীবনে প্রভাব ফেলবে এমন সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিশুদেরও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত৷ জাতিসংঘের ‘কনভেনশন অন দি রাইটস অব দি চাইল্ড’ বা ইউএনসিআরসি এর ১২ ধারায় এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে৷ স্কুলে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচন তেমনই একটি ধারণা যার মাধ্যমে শিশুরা মত প্রকাশ করতে ও নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে শিখে৷
যুক্তরাষ্ট্রে ৯০ বছরের চর্চা
যক্তরাষ্ট্রে উচ্চমাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচন হয়৷ কোথাও স্টুডেন্ট কাউন্সিল, কোথাও স্টুডেন্ট গভর্নমেন্ট নামে তা পরিচিত৷ নির্বাচিতদের কেন্দ্রীয় সংগঠনও রয়েছে৷ তেমনই একটি ন্যাশনাল স্টুডেন্ট কাউন্সিল৷ ১৯৩১ সাল থেকে এটি স্টুডেন্ট কাউন্সিলগুলোকে সক্রিয় রাখতে ভূমিকা পালন করছে৷ কাউন্সিল বা গভর্নমেন্টের সদস্যদের দায়িত্ব, নির্বাচন পদ্ধতিতে অবশ্য প্রতিষ্ঠানভেদে পার্থক্য রয়েছে৷
যুক্তরাজ্যে সরকারি সহযোগিতা
স্কুলগুলোতে স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠনে উৎসাহ দিয়ে থাকে যুক্তরাজ্যের সরকার৷ এ নিয়ে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলাদা একটি প্রকল্প আছে, যার নাম ‘ডেমোক্রা স্কুল’৷ বিদ্যালয়গুলোতে স্কুল কাউন্সিল গঠনে এর মাধ্যমে সহযোগিতা দেয়া হয়৷ অন্যদিকে ওয়েলসের প্রতিটি স্কুলে স্টুডেন্ট কাউন্সিল থাকা আইনত বাধ্যতামূলক৷ কীভাবে নির্বাচন হবে, কাউন্সিলের কার্যক্রম কী হবে তা নিয়ে ২০০৫ সালে বিধিমালাও জারি করেছে সেখানকার সরকার৷
ইউরোপে শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্র চর্চা
ইউরোপের ব্যক্তিমালিকানাধীন স্কুলগুলোর নেটওয়ার্ক ‘ইউরোপিয়ান স্কুলস’৷ তাদের গঠনতন্ত্রে ক্লাস প্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কমিটির জন্য ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে৷ পাশাপাশি প্রতি বছর ৯ মে’র মধ্যে স্কুলে আলাদা একটি ছাত্র কমিটিও গঠন করতে হয়৷ যেখানে সভাপতি, সহসভাপতি, কোষাধ্যক্ষসহ কমপক্ষে ছয়টি পদে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে৷
ভারতে সহযোগিতা দেয় ইসি
ভারতে অনেকদিন ধরেই স্কুল শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রচলন রয়েছে৷ শিক্ষার্থীরা একজন প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন পদের প্রার্থীদের নির্বাচন করে৷ প্রতিযোগিতামূলক ও জাতীয় নির্বাচনের আবহ তৈরি করতে অনেক সময় এমনকি রাজ্যের নির্বাচন কমিশন ভোটিং মেশিনসহ তাদের অন্যান্য সহযোগিতাও দিয়ে থাকে৷
পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের আদলে
নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ছাত্রদের প্রতিনিধি বেছে নেয়া হয় পাকিস্তানের বিভিন্ন স্কুলে৷ কোনো কোনো স্কুলে জাতীয় নির্বাচনের আদলেই হয় এই আয়োজন৷ মনোনয়ন, প্রচার, ভোটগ্রহণ সবই চলে গুরুত্বের সাথে৷
বাংলাদেশে স্কুল শিক্ষার্থীদের মন্ত্রিসভা
বাংলাদেশে গত চার বছর ধরে স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে আয়োজিত হচ্ছে ছাত্রদের মন্ত্রিসভা বা স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন৷ প্রতিটি স্কুল থেকে মোট আটজন প্রতিনিধি নির্বাচন করে শিক্ষার্থীরা৷ এর মধ্যে প্রতিটি শ্রেণি থেকে এক জন এবং সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্তদের মধ্য থেকে তিনজনকে বাছাই করা হয়৷ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে কেবিনেটে একজন প্রধানমন্ত্রী এবং বাকিরা বিদ্যালয়ে মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত পায়৷