সুন্দরবনে সেঞ্চুরি রয়েল বেঙ্গলের
২৫ জুলাই ২০২৪সুন্দরবনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বিপন্ন প্রজাতির এই প্রাণীর সংখ্যা এক সময় কমে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছিলেন পরিবেশ কর্মীরা। পরিস্থিতি এখন ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে।
বুধবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বাঘের সংখ্যা সম্পর্কে তথ্য দেন। তিনি বলেন, ২০২২ সালের বাঘ শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০১।
প্রতি চার বছর অন্তর বাঘ গণনার কাজ করা হয়। সাম্প্রতিক অতীতে প্রতিবার শুমারিতে দেখা গিয়েছে, বাঘের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১০ সালে বাঘের সংখ্যা ছিল ৭৪। ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয় ৭৬। ২০১৮ সালে বাঘের সংখ্যা ছিল ৮৮। ২০২২ সালের হিসেবে এই সংখ্যা ১০০ পার করে গিয়েছে।
বাঘ শুমারির পদ্ধতি আগের থেকে বদলে গিয়েছে। এখন ট্র্যাপ ক্যামেরার মাধ্যমে বাঘের ছবি তোলা হয়। এর ফলে বাঘের সঠিক সংখ্যা প্রায় নির্ভুলভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে। অতীতে বাঘের পায়ের দাগ দেখে সংখ্যা নির্ধারণ করা হত।
সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ৭২০টি জায়গায় ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। মোট ক্যামেরার সংখ্যা দেড় হাজার। ৪০ জন বনকর্মী বাঘ গণনার কাজে নিযুক্ত ছিলেন।
সুন্দরবনের মোট ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ভারতীয় অংশে রয়েছে চার হাজার বর্গকিলোমিটার। বাকি অংশ বাংলাদেশে। পশ্চিমবঙ্গের সাবেক বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অতীতে বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে বাঘ ভারতে চলে আসছে খাবারের খোঁজে। তাতেই কি বাঘের সংখ্যা বাড়লো?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় অংশে থাকা বাঘেদের প্রজনন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সংখ্যা বৃদ্ধি করা গিয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন ডিডব্লিউকে বলেন, "যথেষ্ট সংখ্যায় বাঘ সুন্দরবনে রয়েছে। এখানে তাদের ভালো সুরক্ষা দেয়া হয়েছে বলে সংখ্যা বেড়েছে। আমরা প্রকল্প এলাকায় বেড়া দিয়েছি, যাতে বাঘ লোকালয়ে চলে না যায়।"
বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ রয়েছে সুন্দরবনে, ফলে এই সংখ্যা বিশ্বাসযোগ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের মোট এলাকায় একশ বাঘের বাস অসম্ভব কিছু নয়। ফলে ঠিকঠাক প্রজনন হলে, যদি শাবকরা বেঁচে যায়, তাহলে বাঘের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
ভারতের অন্যান্য জায়গার বাঘের তুলনায় সুন্দরবনের বাঘকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে হয়। জোয়ারের সময় বাদাবন জলে প্লাবিত হয়ে গেলে স্থলভাগের এলাকা কমে আসে। জল সরে গেলে আবার বসবাসের ডাঙা ফিরে পায় বাঘ। তাই ক্রমবর্ধমান সংখ্যাকে টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জও আছে।
ডবব্লিওডবব্লিওএফ-এর সুন্দরবন প্রোগ্রাম অধিকর্তা অনামিত্র অনুরাগ দণ্ড ডিডব্লিউকে বলেন, "বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি অবশ্যই একটা ইতিবাচক অগ্রগতি। তবে এর একটা নেতিবাচক দিক রয়েছে। সুন্দরবনের পরিসর সীমিত একদিকে সমুদ্র অন্যদিকে ঘন জনবসতির জন্য বাঘের সংখ্যা বাড়লে তাদের ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ নেই। এর ফলে জনবসতি এলাকায় মানুষের সঙ্গে বাঘের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হবে।"
শুধুই গবাদি পশু শিকার করার লক্ষ্যে বাঘ গ্রামে প্রবেশ করে, এমনটা নয়। এক একটা বাঘ গড়ে ১০ বর্গ কিলোমিটার জায়গায় বিচরণ করে। বাঘের সংখ্যা বেড়ে গেলে এই জায়গা নিয়ে সমস্যা হতে পারে। কোনো একটি এলাকায় অপেক্ষাকৃত বড় বাঘ ঢুকে পড়লে অন্য বাঘ নিরাপত্তার জন্য বনাঞ্চল ছাড়িয়ে জনপদে ঢুকে পড়তে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্তা শিবাজী ভট্টাচার্য বলেন, "আমরা যে হিসেব দেখছি তা ২০১৮ সালের পর থেকে। সেই সময় বাঘের সংখ্যা ছিল ৮৮। পাঁচ-ছয় বছরে ১৩টি বাঘ বেড়েছে, যা খুব বেশি নয়। তবে আগে বাঘের সংখ্যা যতটা কমেছিল, তার তুলনায় এই ছবি সন্তোষজনক। এই বাঘের টিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সুন্দরবনের বাঘ লড়াই করে টিকে থাকতে পারে।"