1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যেমন ইচ্ছে যায় না লেখা…

তায়েব মিল্লাত হোসেন ঢাকা
৩১ জানুয়ারি ২০২০

সাহিত্য শুধুই বিনোদন নয়। সৃজনে-মননে এগিয়ে দেয় মানবসভ্যতা। বিপরীতে বই হতে পারে বোমাও। তাই এতে নজর রাখে রাষ্ট্র। লেখক-প্রকাশকের জন্য তা কতটা স্বস্তিকর?

https://p.dw.com/p/3X5tk
Bangladesch Dhaka Bücherläden
ছবি: DW/Abdullah Al Momin

কবি শামসুর রাহমানের কাছে স্বাধীনতা মানে- ‘যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা’৷ যেমন ইচ্ছে কী আসলে লেখা যায়? এটা কথার কথা৷ প্রতীকি ব্যঞ্জনা৷ বাংলাদেশের প্রধান কবিও কিন্তু যেমন খুশি লিখে যাননি। তাকে একদিকে ভাবতে হয়েছে মানের দিক৷ অন্যদিকে মাথায় রাখতে হয়েছে সমাজবাস্তবতাও। তাই শামসুর রাহমানের যাপিত জীবনের সবটা মেলে ধরেননি বইয়ের পাতায়৷ কারণ একজনের বিশ্বাস প্রকাশিত হলে অন্যের বিশ্বাসে আঘাত আসতে পারে৷ অন্যকে বিক্ষুব্ধ করতে পারে। এসব বিষয় সামনে রেখে রাষ্ট্র বাড়াবাড়ি করতে পারে৷ সাংবাদিকতা শুধু নয়, নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে বই প্রকাশেও৷ যার প্রতিফলন পড়তে পারে সাহিত্যচর্চায়৷ এই বাস্তবতায় কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ? কতটা মুক্ত পরিবেশ পাচ্ছেন সাহিত্যিকরা? 

সেলিনা হোসেন

পরিস্থিতি অতোটা গুরুতর নয়- এমন ইঙ্গিত দিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন৷ ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগকে তিনি বলছেন, ‘‘আমি নিজেও জানতে চাচ্ছি- লেখালিখির জন্য কাউকে কী থ্রেট করা হয়েছে? কোনো গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না? কোনো বই নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে কি না৷ এগুলো কী হয়েছে?’’

কোনো মহল সংক্ষুব্ধ হতে পারে, লেখার সময় এ বিষয়টি ভাবতে হয় কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ''আমার তো মনে হয় না, এই লেখালেখির জায়গা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেছে চারপাশে- দেখতে তো পাচ্ছি না৷ পত্রিকা বা অন্য কোথাও৷ আমার ক্ষেত্রে এসব বিষয় মাথার ভেতর থাকে না। এগুলো কখনোই আমি মাথায় রাখি না৷ আমার যা মনে আসে তা চিন্তা করেই লিখি। কেউ প্রতিরোধও করেনি। কেউ বলেনি যে, এই লেখাটা করেছেন, এই জন্য আপনি দায়ী হতে পারেন এটাও কেউ বলেনি৷’’

বইমেলা সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসন বই যাচাই করার আগাম ঘোষণা দিয়ে রাখছে, এ বিষয়ে সেলিনা হোসেনের ভাষ্য, ''এটা নিয়ে ঢালাও কোনো মন্তব্য করতে পারব না৷ এখন যিনি লিখছেন, কোন পর্যায় সামনে রেখে লিখছেন। তবে অকারণে কাউকে ক্রদ্ধ করার কোনো যুক্তি আছে বলে আমি মনে করি না৷ লেখকদের প্রতি একটা আহ্বান আছে, উপন্যাস লিখলে তার জায়গা থেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবেন। কোনো বিতর্ক আনবেন না, যে বিতর্ক দিয়ে একটা দ্বিধাবিভক্তি তৈরি হয়৷’’

প্রকাশনায় কেন নিয়ন্ত্রণ?

বছরজুড়ে বইপাড়া থাকে ঢিমেতালে৷ ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে চাঙা হন লেখক-প্রকাশক-পরিবেশকরা৷ কারণ বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলা সামনে রেখেই ঢাকা থেকে বেশিরভাগ বই প্রকাশিত হয়৷ একাডেমির তথ্যমতে, ২০১৯ সালে মেলায় প্রকাশিত হয়েছে চার হাজার ৬৮৫টি বই৷ ২০১৮ সালে বইয়ের সংখ্যা চার হাজার ৫৯১, আর ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৬৬৬৷

বাংলা একাডেমির বইমেলা ঢাকায় লেখক-পাঠক-প্রকাশকের প্রধান মিলনমেলা৷ আবার একাডেমি গত কয়েক বছরে কিছু বই নিষিদ্ধ করেছে৷ সংশ্লিষ্ট প্রকাশকের স্টল পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। প্রায় সবার বিরুদ্ধেই আনা হয় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ৷ এরমধ্যে ২০১৫ সালে রোদেলা প্রকাশনীকে বইমেলায় নিষিদ্ধ করা হয়৷ ২০১৬ সালে একই পরিণতি বরণ করতে হয় বদ্বীপ প্রকাশনীকে৷ তখন লেখক ও প্রকাশক গ্রেপ্তারের শিকার হন৷ এই ঘটনার প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন শ্রাবণ প্রকাশনীর কর্ণধার রবিন আহসান৷ এই কারণে শ্রাবণকে বইমেলায় দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিলো একাডেমি৷ অবশ্য মেলা আসার আগেই সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় তারা৷

এসব ঘটনায় বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে৷ স্বেচ্ছা-শৃঙ্খলে আছেন প্রকাশকরা৷ তবে সতর্কতার মধ্যে ইতিবাচক দিকও দেখছেন শ্রাবণ প্রকাশনীর কর্ণধার রবিন আহসান৷ এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগকে তিনি বলেন, ''আমরা দেখছি এটা আমাদের সমাজের জন্য ক্ষতিকর কিনা৷ এমন একটা বই আমরা ছাপালাম যে কারণে হাজার হাজার মুসলমান আমাদের বিরুদ্ধে চলে গেল এবং দেখা গেল শ্রাবণ প্রকাশনী উৎখাত করার জন্য তারা রাস্তায় নামল৷ তখন ঘটনাটা কী ঘটবে? আমরা তো দেখেছি তসলিমা নাসরিন দেশের বাইরে চলে গেছে৷  দাউদ হায়দারকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই দেশ ছাড়তে হয়েছে৷’’

বই যাচাইয়ে বাংলা একাডেমির প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা বই প্রকাশ করছি তাদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি৷ যেমন একটা বই প্রকাশ হওয়ার পরে তা বাংলা একাডেমিতে যায়৷ তাদের বইমেলায় কখন তারা বইটাকে নিষিদ্ধ করে- যখন আমরা ছাপাই তারপর হঠাৎ করে ওইটার রিঅ্যাকশনে৷ বই নিজে পড়ে যে নিষিদ্ধ করবে, এমন ক্ষমতা কিন্তু বাংলা একাডেমির নেই৷ কারণ বই মেলায় হাজার হাজার বই ছাপা হবে৷ বাংলা একাডেমি সব বই পড়ে তো আর নিষিদ্ধ করতে পারছে না৷ তারা যেটা করছে, রাষ্ট্র যেটা করছে পুলিশি-ভীতি তৈরি করছে৷ পুলিশও কিন্তু সেটা দেখতে পারে না৷ এতো যে বই সেটাতো পুলিশের পক্ষেও দেখা সম্ভব নয়৷’’ 

রবিন আহসান

এবছর বইমেলায় অংশ নিচ্ছে না শ্রাবণ প্রকাশনী৷ কিন্তু বইমেলার অসঙ্গতি নিয়ে সোশ্য্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার রবিন আহসান৷ মেলার স্টল বরাদ্দ নিয়ে কথা বলছেন৷ প্যাভিলিয়নের নামে বই বিক্রির বাজারি আয়োজনের বিরোধিতা করছেন৷ এক মাসের বদলে মেলা ১৫ দিনে নামিয়ে আনার প্রস্তাব রাখছেন৷ এ বিষয়ে তার ভাষ্য, ''বইমেলা ১৫ দিন হলে অনেক গোছানো হবে৷ এখন এক মাসে রাষ্ট্রের কিন্তু অনেক বড় একটা ক্ষতি হচ্ছে৷ এখানে লেখক-প্রকাশক হত্যা হওয়ার ফলে রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ থাকে। বিদ্যুৎ সাপ্লাই থাকে। নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান এখানে জড়িত থাকে৷ তাই ১৫ দিন হলে তারাও বাঁচে৷ এটা হলে যেটা হবে আমরা আগে থেকে কিছু ভালো বই বের করে রাখতে পারবো৷ এক মাস হওয়ার ফলে এমন হয়েছে অনেক প্রকাশকের নতুন নতুন বই ১৫-২০ তারিখের পরে বের হওয়া শুরু হয়।এখানে আমাদের যেমন ভুল হয়, তেমন অন্যদেরও ভুল হয়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণ গত সাত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ
প্রথম পাতায় যান