1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংসদের কার্গো, ৩৪টি প্রাণ আর আমাদের বিবেক

৯ এপ্রিল ২০২১

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবিতে ৩৪ জন প্রাণ হারান৷ যে জাহাজটি ধাক্কা দিয়েছিল সেটি যাত্রীদের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেনি, বরং পরে রঙ বদলে পালানোরও চেষ্টা করেছে৷

https://p.dw.com/p/3rlSO
প্রতীকী ছবিছবি: picture alliance / NurPhoto

৪ঠা এপ্রিল সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাথরঘাট কয়লাঘাট এলাকায় বেপরোয়া কার্গোর ধাক্কায় ডুবে যায় এমএল সাবিত আল হাসান নামের যাত্রীবাহী লঞ্চটি৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, লঞ্চকে ধাক্কা দেওয়ার অনেক আগে থেকেই যাত্রীরা চিৎকার করে কার্গো জাহাজটির গতিরোধের অনুরোধ করেছিলেন৷ কিন্তু জাহাজের চালক তাতে সাড়া দেননি৷ এমনকি পুরো ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার সময়ে বা আগে কোনো ধরনের হর্নও বাজাননি জাহাজের চালক৷

যাত্রীবাহী লঞ্চটিকে ধাক্কা দেওয়ার পর দ্রুত কার্গো জাহাজটি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় চলে যায়৷ ঝড়ের মধ্যেও কার্গোটি থামেনি, দ্রুত গতিতে কার্গোটি পালাতে থাকে৷ এরপর আটক ঠেকাতে কার্গোটির রং দ্রুততম সময়ের মধ্যে বদলে ফেলা হয়৷ বদলে ফেলা কার্গোটি গজারিয়ার কোস্টগার্ড স্টেশনের কাছাকাছি নোঙর করে রাখা হয়৷ ৮ এপ্রিল সেখান থেকে কার্গো জাহাজ এসকেএল-৩ আটক করা হয়৷ এ সময় কার্গোর চালকসহ ১৪ জনকে আটক করা হয়৷

পুরো পরিস্থিতিটি দেখুন৷ কার্গোর্টি লঞ্চটিকে দেখতে পেয়েছে, হয়ত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গতিরোধ করতে পারেনি৷ ফল লঞ্চটিতে ধাক্কা৷ জাহাজে থাকা লোকজন যখন দেখলো লঞ্চটি ডুবে যাচ্ছে, ধরে নেয়া যায়, সাথে সাথে হয়ত মালিক পক্ষকে ফোন করেছিল৷ মালিকপক্ষ নিশ্চয়ই বললেন কী করণীয়৷ কিন্তু কার্গোতে একটা মানুষেরও কি মনে হলো না এতগুলো মানুষ ডুবে যাচ্ছে তাদের বাঁচাতে হবে! সবার বিবেক কি ঘুমিয়ে ছিল? এতগুলো মানুষের আর্তচিৎকার কারো কানে যায়নি৷

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ, লঞ্চ মালিক সমিতি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ধাক্কা দেওয়া কার্গোটির মালিক বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এসকে লজিস্টিকস৷ ডুবে যাওয়া লঞ্চটির মালিকপক্ষ বলছে, কার্গো জাহাজটির মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় তাদেরও মামলা করতে দেওয়া হচ্ছে না৷ সাংসদ শেখ তন্ময়ের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায় বলে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে৷

HA Asien | Amrita Parvez
অমৃতা পারভেজ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে- একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে শেখ তন্ময় কি জাহাজটিকে পালানোর এবং রঙ বদলানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন? বাংলাদেশের সর্বস্তরেই দুর্নীতি স্পষ্ট৷ মামলার ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের আধিপত্য প্রায়ই চোখে পড়ে৷ সেক্ষেত্রে মানুষগুলোর জীবন বাঁচিয়ে সেই প্রভাব খাটিয়ে এই সাংসদ ঠিকই হয়ত মামলার হাত থেকে বেঁচে যেতেন৷ আর যদি এই কথাটা প্রচার হতো যে, মালিকের পরামর্শে জাহাজটি না পালিয়ে ডুবে যাওয়া মানুষগুলোকে উদ্ধার করেছে, তাহলে তিনি সব মানুষের চোখে কতটা বড় হতেন একবার ভেবে দেখুন!

না, পরিবহণ বা নৌ কোনো মালিক পক্ষই কখনো এভাবে চিন্তা করেন না৷ তারা নিজেদের বাঁচানোর কথা ভাবেন৷

আমি খালি ভাবি, টিভি বা সংবাদপত্রে যখন স্বজন হারানোর এই সংবাদ দেখেন তখন ধাক্কা দেয়া কার্গোটিতে থাকা মানুষ এবং মালিকের মনের অবস্থা কী হয়? একজন মানুষ যখন স্ত্রী, দুই সন্তান হারিয়ে আহাজারি করছেন, সেই বুকফাটা আর্তনাদ কি তাদের কানে পৌঁছায়, তারা কি রাতে ঘুমাতে পারেন!

এই কার্গোর বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আছে৷ ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং ঢাকা সদরঘাট কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে,  হাজার টন ওজনের বিশাল এসকেএল-৩ কার্গো জাহাজটিকে চলতি বছরের ১৮ মার্চ রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়৷ তবে কার্গো জাহাজটিকে নৌপথে চলাচলের জন্য সার্ভে অনুমোদন দেওয়া হয়নি৷ কথা ছিল, সার্ভে অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত জাহাজটি ডকইয়ার্ডেই থাকবে৷ কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায় জাহাজটি৷ অর্থাৎ, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে জেনেও জাহাজের মালিক এটি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যার ফলে ৩৪টি মানুষের প্রাণ গেল৷

এ ঘটনায় ৬ এপ্রিল ধাক্কা দেওয়া অজ্ঞাত কার্গো জাহাজের চালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানায় মামলা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)৷ তবে মামলায় কার্গো জাহাজ বা এর চালক ও মালিক কারোরই নাম উল্লেখ করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ৷

ডয়চে ভেলের সাংবাদিক অমৃতা পারভেজ৷
অমৃতা পারভেজ ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক৷