সাংবাদিকতাকে ধরে ফেলা যাক
কী মামলা? অভিযোগ কী? কী মারাত্মক মিথ্যা বললেন জনাব শামসুজ্জামান?
আসুন, পাঠ অব্যাহত রাখি৷ তিনি, অর্থাৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য যে কেউ ক্ষুব্ধ হতে পারেন। স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন সাংবাদিক? কোনটা মিথ্যা তথ্য? জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বলে একজন দিনমজুরের আক্ষেপ মিথ্যা? স্বাধীনতা দিবসে ক্ষুধা আর দারিদ্র্য সব মিথ্যা হয়ে যায়? বিস্তারে পরে আসছি৷
আপাতত জানতে চেষ্টা করি কে ক্ষুব্ধ হলো, মামলা করলো কে৷ বাংলা ট্রিবিউনের বরাতে জানছি, স্বরাষ্টমন্ত্রী বলছেন, স্বাধীনতা দিনের মিথ্যায় ক্ষুব্ধদেরই একজন মামলা করেছেন সাভারে। তবে কে এই মামলা করেছেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি।
এবার আসুন একটু প্রথম আলো পড়ি৷ প্রথম আলো বলছে, সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে তার বাসা থেকে আজ বুধবার ভোর চারটার দিকে সিআইডির পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে। সিআইডির পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা সাধারণ পোশাকে ছিলেন। সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বাসা সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আমবাগান এলাকায়। তবে স্থানীয় পুলিশ ও সিআইডির ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না।
প্রথম আলো আরো বলছে, সিআইডি পরিচয়ধারী ব্যক্তিরা বাড়ির মালিককে বলেন, শামসুজ্জামানের করা একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে রাষ্ট্রের আপত্তি আছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নেওয়া হচ্ছে।
প্রথম আলোর দাবি তাদের সঙ্গে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানের দুবার কথা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শামসুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে- এমন কোনো তথ্য তার কাছে নেই।
সকাল ১০টার দিকে সিআইডির ঢাকা বিভাগের উপমহাপরিদর্শক মো. ইমাম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিআইডির ঢাকা বিভাগ তার দায়িত্বে। তার বিভাগের কেউ শামসুজ্জামানকে আটক করতে যায়নি৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য একটু কষ্ট করে মিলিয়ে পড়ুন৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মামলার কথা জানেন, কেন মামলা হয়েছে সেটাও জানেন, শুধু কে মামলা করেছেন তা জানেন না৷ তবে অন্য খবরে দেখলাম, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, শিগগির জেনেও যাবেন৷ আরেকটা বিষয় দেখেন, শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে কথিত সিআইডিরা (দায়িত্বপ্রাপ্তরা যেহেতু জানেন না উনারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্পেশাল সিআইডি হতে পারেন) রাষ্ট্রের আপত্তির কথা বলেছেন৷ এই রাষ্ট্র কে, তার আপত্তির বিষয়টাও বা আসলে কী, আপনারা কী বুঝতে পারলেন? নাকি আমি যা বুঝলাম আপনারাও তা-ই বুঝলেন?
সুভাষ সিংহ রায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত এবিনিউজ বুধবার বেলা দুইটা ২৭ মিনিটে জানিয়েছে, কোনো স্পর্শকাতর বিষয় যাতে অতিরঞ্জিত হয়ে বা মিথ্যা তথ্য হিসেবে গণমাধ্যমে প্রকাশ না হয়, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশে এত এত বিষয় থাকতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এসব নিউজ কেন করতে হবে? এটা তো সাংবাদিকতার নীতির সঙ্গে যায় না। এটি আরেকটি বাসন্তী উপাখ্যান তৈরি করার চেষ্টা কিনা– সে প্রশ্নও তোলেন সরকারপ্রধান।
গতকাল মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় সরকারপ্রধান এমন মন্তব্য করেছেন বলে জেনেছে এবিনিউজ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। রাষ্ট্রও আইন অনুযায়ী চলে। প্রথম আলো যে সংবাদটি প্রকাশ করেছে, সেটা যে মিথ্যা ছিল, তা ৭১ টিভির সংবাদে পরিষ্কার হয়ে উঠে এসেছে।
অবশ্য একজন সাংবাদিককে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যেতে হবে কেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
একটু খালি জানিয়ে রাখি, আলোচিত ওই সংবাদটি কিছুক্ষণ পরই প্রত্যাহার করে প্রথম আলো৷ সংশোধনীতে লিখে, ‘‘প্রথমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শিরোনাম এবং ব্যবহার করা ছবির মধ্যে অসঙ্গতি থাকায় ছবিটি তুলে নেওয়া হয়েছে এবং শিরোনাম সংশোধন করা হয়েছে। শিরোনামে উদ্ধৃত বক্তব্য ছবিতে থাকা সবুজ মিয়ার ছিল না, ছিল দিনমজুর জাকির হোসেনের। একই কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।''
আমার মনে হয়, স্পর্শকাতর বিষয়, সাংবাদিকতার নীতিমালা, স্বাধীনতা দিবসের ক্ষোভ এইসব বিষয়ে হয়ত সরকার খুব শিগগিরই সাংবাদিকদের একটা 'ডু অ্যান্ড ডোন্ট' ধরিয়ে দেবেন৷ সদাশয় সরকার কিছু সাংবাদিক আর গণমাধ্যমকে চিহ্নিত করে শুধু তাদেরই ফলো করতে বলতে পারে৷
শওকত ওসমান কাব্য করে আশির দশকেই লিখেছিলেন, খবর জানাতে আর ঘটনা লাগে না, করা যায় নির্মাণ, প্রয়োজন শুধু ফোরম্যান আর ফরমান৷