1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সন্দীপ ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

একটি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘিরে সামনে আসছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের নানা অনিয়ম। এই অভিযোগে আরজি করের সাবেক অধ্যক্ষ এখন জেলবন্দি। অভিযোগের আঙুল আরো কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।

https://p.dw.com/p/4kay5
আরজি কর হাসপাতাল।
আরজি করের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ অনেক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের হত্যা যেন হিমশৈলের শিখর। এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে আর্থিক ও অন্যান্য দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠে আসছে। তার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি ও সিবিআই। দেহ পাচার থেকে থ্রেট কালচার, নানা বিষয়ে সরব জুনিয়র চিকিৎসকরা।

দুর্নীতির সিন্ডিকেট

আরজি কর হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এই দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এসব অভিযোগের সূত্রে শুক্রবারও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ইডি। সন্দীপ একা নন, আরো কয়েকজন চিকিৎসকের ভূমিকা এখন আতসকাচের নিচে।

সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ ৫১ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে আরজি কর হাসপাতালের কলেজ কাউন্সিল। নিষিদ্ধের তালিকায় আছেন ২০ জন হাউসস্টাফ, ১১ জন ইন্টার্ন, ১৭ জন চিকিৎসক পড়ুয়াও। হাসপাতালের কাজকর্ম থেকে এদের সকলকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন অধ্যক্ষ মানস বন্দ্যোপাধ্যায় ও উপাধ্যক্ষ সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়।

অভিযুক্ত চিকিৎসকদের মধ্যে কয়েকটি নাম উল্লেখযোগ্য। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা নিয়েছে। অনিয়ম ও থ্রেট কালচারের অভিযোগে সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক সুশান্ত রায়, তাপস চক্রবর্তী, অভীক দে এবং বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত অভীক

কলকাতা ছাড়িয়ে জেলাতেও সিন্ডিকেটের জাল ছড়িয়েছে। নাম জড়িয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজেরও। অভিযোগ, ‘বর্ধমান শাখা' সিন্ডিকেটের মাথায় ছিলেন এসএসকেএমের পিজিটি অভীক। চিকিৎসকের খুনের পরে আরজি করের সেমিনার রুমে অভীকের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আরজি করের সঙ্গে যুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও তিনি কীভাবে সেখানে ছিলেন, প্রথম সন্দেহ জাগে এই কারণে।

অভীক কীভাবে এসএসকেএমের মতো শীর্ষ হাসপাতালে পিজিটিতে সুযোগ পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকী শাসক দলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তাকে সাসপেন্ড করেছে। এখন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের দরজা অভীকের জন্য বন্ধ।

প্রভাবশালী হয়ে সুবিধা নেয়ার অভিযোগ অভীকের স্ত্রী নূপুর ঘোষের বিরুদ্ধেও। এক্ষেত্রেও অভীকের 'দাদাগিরির' প্রভাব রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

এক বছর আগেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট পদে মেয়াদ শেষ হয় নূপুরের। ঝাড়গ্রামের হাসপাতালে যোগ দেয়ার নির্দেশ এলেও মানেননি তিনি। সেই নির্দেশ এবার কার্যকর হতে চলেছে বলে সূত্রের খবর। প্রশ্ন উঠেছে, কতটা প্রভাবশালী হলে খোদ স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ অমান্য করে পুরনো জায়গায় থাকা যায়?

বিরূপাক্ষর বিরুদ্ধে

চলতি পর্বে অপর যে চিকিৎসক তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন, তিনি বিরূপাক্ষ বিশ্বাস। বর্ধমান মে়ডিক্যাল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। হাসপাতালে চিকিত্‍সকদেরই অভিযোগ, বদলি হওয়া সত্ত্বেও কলেজ ছাড়েননি তিনি। বদলির নির্দেশ আসে ২০২৩ সালের ১ আগস্ট। এর পরও এক বছর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন বিরূপাক্ষ।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অডিও ভাইরাল হয়। অভিযোগকারীদের দাবি, সেই অডিওর কণ্ঠস্বর বিরূপাক্ষের। বিরূপাক্ষকে সেখানে এক পড়ুয়াকে ‘হুমকি' দিতে শোনা যায়। অভিযোগ, কলেজে বিরূপাক্ষের ‘দাদাগিরি' চলত। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য ভবন বিরূপাক্ষকে বদলির নির্দেশ দিয়েছে। যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করেছেন এই অভিযুক্ত চিকিৎসক।

আরো কিছু নাম

অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে যেমন রাজ্য প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে, তেমনই কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ। সংগঠনের মালদহ জেলার সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে চিকিৎসক তাপস চক্রবর্তীকে। অভীক দের মতো আরজি কর হাসপাতালে দেহ উদ্ধারের দিন তিনিও ছিলেন বলে অভিযোগ। আইএমএ আর এক চিকিৎসক সুশান্ত রায়কে সাসপেন্ড করেছে। জলপাইগুড়ির শাখার সম্পাদক পদে ছিলেন তিনি।

একটা সংগঠিত সিন্ডিকেট অপরাধ চরম পর্যায়ে পৌঁছতেই এই বিস্ফোরণ: ডা. প্রাজ্ঞ অনির্বাণ

রঞ্জিত সাহা, ঋতুরম্ভ সরকার, নীলাব্জ ঘোষ, মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিক নামে কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

দেশজুড়ে রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের আন্দোলনকে সংগঠিত করার জন্য তৈরি হয়েছে অল ইন্ডিয়া জয়েন্ট অ্যাকশন ফোরাম। এর সর্বভারতীয় সমন্বয়ক ডা. প্রাজ্ঞ অনির্বাণ ডিডাব্লিউকে বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে এসব সহ্য করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তারই স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ এই আন্দোলন। কতজনের থিসিস আটকে রাখা হয়েছে, কতজনকে ভয় দেখানো হয়েছে। একা একা এসব নিয়ে বলতে পারাটা খুব ভয়ের। ট্রান্সফার করিয়ে দেওয়া বা পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার ভয় তো ছিলই। আরজি করের ঘটনা একটা সংগঠিত সিন্ডিকেট অপরাধ, সেটা চরম পর্যায়ে পৌঁছতেই এই বিস্ফোরণ।"

চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম এর সম্পাদক ডাঃ সজল বিশ্বাস ডিডাব্লিউকে বলেন, "এই অভিযোগগুলো অনেক দিনই ছিল। আমাদের সংগঠনের তরফ থেকে স্বাস্থ্য ভবনে ডেপুটেশনও দিয়েছি।তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। স্বাস্থ্য ভবন কোন পদক্ষেপ নিলে হয়তো আজকে এই ঘটনা ঘটত না। বোঝাই যাচ্ছে, স্বাস্থ্য ভবনের মদত রয়েছে এসবের নেপথ্যে।"

মূল তদন্তকে ধামাচাপা দিতে হঠাৎ করে দুর্নীতি, থ্রেট কালচার নিয়ে এত শোরগোল হচ্ছে কেন? এই নিয়েও সংশয় চিকিৎসকদের একাংশের মধ্যে।চিকিৎসকদের সংগঠন মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের সম্পাদক ডা. নীলরতন নাইয়া বলেন, "আমরা আন্দোলন মঞ্চ থেকে এসব নিয়ে কিছু বলিনি, বরং যারা বলছে তারা পরিকল্পনামাফিক আন্দোলনকে বিপথে চালিত করতে চাইছে। এমনকি মূল অভিযুক্ত ডাঃ সন্দীপ ঘোষের দিকে দৃষ্টি সরাতে অন্যান্য ইস্যু আনছে।"