বিরোধী দলনেতা নিয়ে বিতর্ক
২৩ মে ২০১৪সফল সংসদীয় গণতন্ত্রের শর্তই হলো কার্যকর বিরোধী দল৷ কিন্তু ভারতের নব নির্বাচিত ষোড়শ সংসদে বিরোধী দলগুলির কোমর একেবারে ভেঙে গেছে৷ সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় মাত্র ৪৪টি আসন পেয়ে বিরোধী দলের মর্যাদা হারাতে বসেছে প্রধান জাতীয় দল কংগ্রেস৷
১৯৫২ সালের প্রথম লোকসভা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রচলিত বা প্রথাগত নিয়ম হলো, কোনো দলকে বিরোধী দলনেতার মান্যতা পেতে হলে তাকে লোকসভার মোট ৫৪৩টি আসনের এক-দশমাংশ, অর্থাৎ ৫৪টি আসন পেতে হবে৷ এক্ষেত্রে কংগ্রেসের তা নেই৷ অথচ সংসদে বিরোধী দলনেতা ছাড়া সংসদীয় কাজকর্ম চলতে পারে না৷ কারণ সংসদীয় আইনে এমন অনেক সংস্থান আছে, যেখানে বিরোধী দলনেতার অনুমোদন প্রয়োজন৷ এই যেমন কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন, কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর প্রধানের নিযুক্তি বা লোকপাল নিয়োগ৷ বিশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অবশ্য নির্ধারিত আইন সংশোধন করা চলতে পারে৷
এছাড়া আর বিকল্প কী হতে পারে? বিরোধী দলগুলির কোয়ালিশন? কংগ্রেসকে সরিয়ে রেখে প্রধান প্রধান আঞ্চলিক দলগুলি এক জোট হয়ে বিরোধী দলের স্থান নিতে চেষ্টা করছে৷ যেমন আসন সংখ্যার ভিত্তিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে তামিলনাড়ুতে জয়ললিতার এআইএডিএমকে-র হাতে আছে ৩৭ জন সাংসদ, তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূলের হাতে আছে ৩৪টি আসন এবং ওড়িষার নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দলের ঝুলিতে আছে ২০টি আসন৷ অর্থাৎ মোট ৯১টি আসনের জোট৷
বলা বাহুল্য, এদের মধ্যে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে ‘ফ্লোর কোঅর্ডনেশন'-এর আলোচনা৷ তৃণমূল চেষ্টা করছে বিরোধী দলনেতার পদ, ডেপুটি স্পিকার এবং পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির মতো ইস্যুগুলি নিয়ে একটা সমঝোতায় আসতে৷ যদি সার্থক সমন্বয়ের মাধ্যমে লোকসভায় যৌথভাবে বিরোধী দলের ভূমিকা নিতে পারে এই জোট, তাহলে সেটা হবে বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য বিকল্প৷
সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল সুভাষ কাশ্যপ অবশ্য মনে করেন, কোনো একটি দল যদি লোকসভার ১০ শতাংশ আসন পায় তাহলে সেই দলের নেতা বিরোধী দলনেতার স্বীকৃতি পেতে পারেন৷ প্রাক-নির্বাচনি কিংবা নির্বাচন-পরবর্তী কোনো জোটের নেতাকে এটা দেয়া যায় না৷ বড়জোর তাদের বিরোধী জোটের নেতা বলা যেতে পারে, কিন্তু বিরোধী দলনেতা বলা যাবে না৷
এই যুক্তি খণ্ডন করে কংগ্রেস তরফে বলা হয়েছে, এতে সেরকম কোনো আইনগত বাধা নেই৷ স্পিকার ইচ্ছা করলে তা করতে পারেন৷ ১০ শতাংশের শর্ত পালন বাধ্যতামূলক নয়৷ কংগ্রেসের বিদায়ী আইন মন্ত্রীর মতে, বৃহত্তম দলের নেতাকেই বিরোধী দলনেতার পদ দেয়া যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১৯৫২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত প্রথম পাঁচটি সংসদীয় নির্বাচনে কোনো বিরোধী দলনেতা ছিলেন না৷ আর চতুর্থ লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস দু'ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল৷