শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা উচিত?
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪জার্মানির একটি বিদ্যালয়ে ছোটখাট এক সাংস্কৃতিক বিপ্লব দানা বাঁধছে৷ এখানে সকলের প্রিয় আসক্তি মোবাইল ফোন সম্ভবত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা আর ব্যবহার করতে পারবেন না৷ তবে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কও চলছে৷
জার্মানিসহ নানা দেশে বিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ নিয়ে অনেক দিন ধরে বিতর্ক চলছে৷ অনেক বিদ্যালয় ইতোমধ্যে শ্রেণিকক্ষে মোবাইলের ব্যবহার সীমিত করেছে৷ কিন্তু বিরতির সময় কী হবে? নরটরফের এই বিদ্যালয়ে সেই চেষ্টাই হচ্ছে৷ সপ্তাহে দুদিন মোবাইল পুরোপুরি নিষিদ্ধ৷
বিদ্যালয়টির শিক্ষক সিল্কে উইপিশ বলেন, ‘‘তরুণ এবং মধ্যবয়সি সহকর্মীদের মাধ্যমে এটা শুরু হয়েছিল৷ তারা প্রতিবাদ করে বলেছিলেন কখন ফোন ব্যবহার করবেন তা কেউ নির্ধারণ করে দিতে পারবে না৷''
অভিভাবকদের প্রতিনিধি জানিন স্টল্ট বলেন, ‘‘বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোনো- না- কোনোভাবে খেয়াল রাখতে হয় যে সন্তান বিদ্যালয়ে পৌঁছেছে বা বাড়ি ফিরেছে৷ ফলে কোনো অবস্থাতেই ব্যবহার করা যাবে না বলা ঠিক নয়৷''
শিক্ষার্থী ম্যাক্সিমিলিয়ান ফরস্টার অবশ্য মনে করেন, ‘‘মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা ভালো৷ কারণ, বিরতির সময় আমি এটি অনেক ব্যবহার করি৷''
এখন শিক্ষার্থীরা বিরতিতে খেলাধুলা এবং আলাপচারিতায় বেশি মন দেয়৷ এতে মনোযোগ এবং জানার সক্ষমতা বাড়ে৷ বিশেষ করে যাদের এসব ব্যাপারে দুর্বলতা আছে৷ কিন্তু ডিজিটাল শিক্ষার কী হবে?
শিক্ষক এবং মিডিয়া পডকাস্টার ম্যাথিয়াস ডিয়র্কস বলেন, ‘‘আমি মনে করি, শিক্ষক হিসেবে মানুষকে শিক্ষিত করা আমার দায়িত্ব৷ তারা এটা তখনই করতে পারে, যখন তারা বিদ্যালয়ে এবং ভুল করার মতো জায়গা তাদের রয়েছে৷''
ম্যাথিয়াস ডিয়র্কস এই বিদ্যালয়ের দুই মিডিয়া হিরোর একজন৷ ডিজিটাল দক্ষতা উৎসাহিত করা তার কাজ৷ শ্লেসভিগ-হলস্টাইন রাজ্য এজন্য সপ্তাহে ছয় ঘণ্টা বরাদ্দ করেছে৷ কিন্তু এক হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ছয়টি ট্যাবলেট রয়েছে৷
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এমেলি হাইনেন বলেন, ‘‘আমরা ডিজিটাল স্কুলে পরিনত হতে চাই এবং ক্লাসে আরো ডিজিটাল উপায় চালু করতে চাই৷ অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, আইপ্যাড বা অন্য কোনো ট্যাবলেট পায় না৷ এর অর্থ হচ্ছে, তাদের সেলফোনই ক্লাসে সবচেয়ে সহজলভ্য ডিভাইস৷''
এর অর্থ কি স্কুলে স্মার্টফোন চালু রাখা? এক্ষেত্রে উদ্ভাবনী পন্থাও রয়েছে৷ শিক্ষার্থী টিম পিটারসন বলেন, ‘‘আমি এর আগে নয় ম্যুনস্টারে ছিলাম এবং সেখানে মাইনক্রাফ্টে তথ্যপ্রযুক্তি নামে একটি ক্লাস ছিল৷ আসলেই সেটার এমন নাম ছিল৷ এবং সপ্তাহে একদিন ৪৫ মিনিট মাইনক্রাফ্ট ভিডিও গেমে কিছু বানানো এবং শেখা যেতো৷ তারপর শিক্ষক সেগুলো দেখে নম্বর দিতো৷ এই পন্থা সৃজনশীলতা বাড়ায়৷''
নরটরফে এখনো সংস্কৃতি বিপ্লব হয়নি৷ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আবারো স্মার্টফোন আনতে পারে৷ কেউ কেউ বলেন, সাময়িক নিষেধাজ্ঞা তাদের স্মার্টফোন ব্যবহারের ধরন বদলে দিয়েছে৷ তবে পুরোপুরি নিষিদ্ধের পরিকল্পনা হয়নি৷ অর্থাৎ, নরটরফ জার্মানির বাকি অংশের মতোই রয়ে গেছে৷
প্রতিবেদন: ইওসেফিনে গ্যুন্টার/এআই