1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিশ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলেন মার্ক্সবাদী আনুরা

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মার্কসবাদী রাজনীতিবিদ আনুরা কুমারা দিশানায়েকে সোমবার শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নিয়েছেন৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির ভোটাররা৷

https://p.dw.com/p/4kyrF
শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আনুরা কুমারা দিশানায়েকে
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন মার্কসবাদী আনুরা কুমারা দিশানায়েকেছবি: Sri Lankan President's Office/AP Photo/picture alliance / ASSOCIATED PRESS

মার্কসবাদী জোট ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) এর প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৫৫ বছর বয়সি দিশানায়েকে শনিবারের নির্বাচনে আগের রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে, বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা ছাড়াও আরো ৩৫ জন প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন৷

এমন এক সময়ে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হলো, যখন শ্রীলঙ্কা একটি গুরুতর অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের পথে আছে৷ ২০২২ সালে খাদ্য, ওষুধ, রান্নার গ্যাস এবং জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি দেখা দেয় এবং ব্যাপক বিক্ষোভের ফলে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন৷

শপথ গ্রহণের পরে একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অন্যদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দিশানায়েকে৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরা গভীরভাবে বুঝতে পেরেছি যে আমরা একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে দেশ পেতে যাচ্ছি৷ আমরা বিশ্বাস করি না যে একটি সরকার, একটি একক দল বা ব্যক্তি এই গভীর সংকট সমাধান করতে সক্ষম হবে৷''

১৯৭৮ সালে নতুন সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির পর নবম ব্যক্তি হিসাবে শ্রীলঙ্কার শক্তিশালী নির্বাহী রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হলেন দিশানায়েকে৷

দিশানায়েকের জোটের নেতৃত্বে রয়েছে জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি), বা পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট৷ এই মার্কসবাদী দলটি ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের জন্য দুটি ব্যর্থ সশস্ত্র বিদ্রোহ করেছিল৷ বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর জেভিপি ১৯৯৪ সালে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে প্রবেশ করে এবং তখন থেকে বেশিরভাগ সময়ই বিরোধী দলে ছিল৷ তবে পূর্ববর্তী বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপতিকে দলটি সমর্থন করেছিল এবং সংক্ষিপ্তভাবে সরকারেরও অংশ ছিল৷

এনপিপি জোটে শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ, শিল্পী, আইনজীবী এবং ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে৷

দিশানায়েকে শপথ গ্রহণের ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী দিনেশ গুনাবর্ধনে পদত্যাগ করেন৷ এর মাধ্যমে নতুন রাষ্ট্রপতির জন্য নতুন প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভা নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়৷

২০০০ সালে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়েছিলেন দিশানায়েকে৷ চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার মন্ত্রিসভায় কৃষি ও সেচমন্ত্রীর দায়িত্বও পেয়েছিলেন তিনি৷ ২০১৯ সালে তিনি প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনে দাঁড়ালেও গোটাবায়া রাজাপাকসের কাছে হেরে যান৷

এরই মধ্যে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় দিশানায়েককে অভিনন্দন জানিয়েছে৷

পরিবারতন্ত্র ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোট

দিশানায়েকের বিজয়কে অনেকে দেখছেন পরিবারের রাজনীতির বিরুদ্ধে জনগণের রায় হিসাবে৷ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসার চেয়ে সোয়া বারো লাখ বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি৷ তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে৷

সাজিথ প্রেমাদাসার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা ১৯৯৩ সালে ক্ষমতায় থাকাকালীন তামিল গেরিলাদের আত্মঘাতী বোমায় নিহত হন৷ দিশানায়েকের দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) যখন ৮০ এর দশকে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত ছিল, তখন তাদের দমনে ভূমিকা রাখেন রানাসিংহে প্রেমাদাসা৷

অন্যদিকে, রনিল বিক্রমাসিংহের চাচা জেআর জয়াবর্ধনে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন৷ আরেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নামাল রাজাপাকসে ছিলেন দুইবারের প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের বড় ছেলে এবং অভ্যুত্থানের মুখে উৎখাত হওয়া প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের ভাতিজা৷

এই পরিবারতন্ত্রের বিরোধিতাকেই প্রচারের অন্যতম হাতিয়ারে পরিণত করেছিলেন দিশানায়েকে৷

দিশানায়েকের ইশতেহারে ঘোষিত পরিকল্পনার মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রায় তিনশ কোটি ডলার বেইলআউটে ঋণ পুনর্গঠন করা এবং কর কমানোর প্রতিশ্রুতি ছিল৷

কিন্তু প্রচারাভিযানের বক্তৃতার সময় তিনি অপেক্ষাকৃত মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছেন৷ বলেছেন, যে কোনও পরিবর্তন আইএমএফের সঙ্গে পরামর্শ করেই করা হবে এবং ঋণ পরিশোধ নিশ্চিত করতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷

দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর থামবুতেগামার একটি ছোট কৃষক পরিবারের সন্তান দিশানায়েকে শারীরিক বিজ্ঞানে স্নাতক করেছেন৷ প্রচারের সময় নিজেকে পরিবর্তনের প্রার্থী হিসাবে উপস্থাপন করে ক্ষমতায় আসার ৪৫ দিনের মধ্যে সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি৷ নিজের নীতির পক্ষে জনসমর্থন যাচাইয়ের জন্য সাধারণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি৷

এডিকে/জেডএইচ (এপি, রয়টার্স)