করোনা ভাইরাস সংক্রমণে অর্থনৈতিক আঘাত থেকে শ্রমিকদের বাঁচাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রপ্তানি খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য তিনি এ ঘোষণা দেন৷
ভাষণের শুরুতেই স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে প্রাণ দেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ নিজের পরিবারের যারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নিহত হয়েছেন, তাদেরও স্মরণ করেন৷
এরপরই করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন শেখ হাসিনা৷ তিনি বলেন, উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল সব দেশই আক্রান্ত হচ্ছে নভেল করোনা ভাইরাসে৷ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে বিশ্বের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়বে৷ বাংলাদেশের শিল্পবাণিজ্যেও করোনার আঘাত আসতে পারে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানিমুখী খাতের শ্রমিকদের বেতন দিতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হচ্ছে৷ বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরাই এই প্যাকেজের সুবিধা পাবেন।
করোনা সংক্রমণের কারণে যেসব নিম্নআয়ের মানুষ কাজ হারিয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামে ফেরা কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে ফিরলে নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা দেয়া হবে৷ এছাড়া গৃহহীনদের ছয় মাস খাবার দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ এছাড়া কেউ ভাসানচরে যেতে চাইলে সরকার সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী৷
এছাড়া জুন মাস পর্যন্ত ঋণ ফেরত না দিলেও কাউকে ঋণখেলাপী ঘোষণা না করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী৷
দেশবাসীকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানি, আপনারা আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন৷ যাদের স্বজনেরা বিদেশে রয়েছেন, তারাও উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমরা আপনাদের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি৷ কিন্তু এ পরিস্থিতি আমাদের ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে৷''
ভাষণে করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের হোম কোয়ারান্টিনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া সকল নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা৷ তিনি বলেন, ‘‘নিজের স্বজন, পরিবার ও দেশকে বাঁচাতে মাত্র ১৪ দিন আপনারা ঘরে থাকুন৷''
এ সময় প্রধানমন্ত্রী করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা, গণপরিবহন বন্ধসহ সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন৷ দেশবাসীকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি৷ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রতি ঘরে বসে নামাজ আদায়ের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী৷ অন্য ধর্মের অনুসারীদেরও অনুরোধ করেন আপাতত উপাসনালয়ে না যেতে৷
সরকার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সবার চিকিৎসার প্রযাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা৷ রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের হটলাইন এবং সোসাইটি অব ডক্টরস-এর ৫০০টি নম্বর চালু করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি৷ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস ভয়াবহ সংক্রামক হলেও এতটা প্রাণঘাতি নয়৷ তবে একই সঙ্গে আগে থেকেই অসুস্থ ও বযস্ক ব্যক্তিদের জন্য তা বিপদ ডেকে আনতে পারে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি৷ এ কারণে সবার প্রতি পরিবারের সবচেয়ে সংবেদনশীল সদস্যকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷
অযথা আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আতঙ্ক যৌক্তিক চিন্তাভাবনার বিলোপ ঘটায়৷'' সবাইকে গুজবের বিষয়ে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি৷
করোনা মোকাবিলায় সার্ক নেতাদের যৌথ উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী৷ যৌথ তহবিলে বাংলাদেশ ১৫ লাখ ডলার জমা দিয়েছে বলেও জানান তিনি৷
প্লেগ, গুটিবসন্তসহ অতীতের নানা মহামারির কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেসময় বিশ্ব এতটা সংযুক্ত ছিল না৷ এখন বিপুল মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করেন, ফলে ভাইরাস এত দ্রুত ছড়িয়েছে৷ তবে সেই সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরও উন্নয়ন হওয়ায় দ্রুত পরিত্রাণের আশাও ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা৷
এ পরিস্থিতিতে সবাইকে সহনশীল ও সংবেদনশীল আচরণ করা এবং পরিস্থিতির সুযোগ না নেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী৷ বাজারে কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঘাটতি নেই, ফলে অযথা ভোগ্যপণ্য কিনে মজুত না করার আহ্বান জানান তিনি৷ দাম বৃদ্ধি করে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ালে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি৷
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ চলছে' উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা, আমরা জয়ী হবোই৷'
এডিকে/এসিবি