এবার পোল্যান্ডের কাটোভিৎসে শহরে জাতিসংঘের আয়োজনে জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা কপ২৪ নামে পরিচিত৷ কপ মানে হচ্ছে ‘কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিজ'৷ এখানে পার্টি বলতে একেকটি দেশকে বোঝানো হচ্ছে৷ জাতিসংঘের আয়োজনে এবার ২৪তম বারের মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷
দুই সপ্তাহব্যাপী এই সম্মেলনের এবারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৫ সালে প্যারিসে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নের নীতিমালা তৈরি করা, যাকে ‘রুলবুক' বলছেন আলোচকরা৷ কিন্তু শুক্রবার আলোচনার শেষ দিনে এসেও আলোচকরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছেন না যে, একটি রুলবুক পাওয়া যাবে৷
সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী আশা করছেন, শেষ দিনে হয়ত একটি রুলবুক চূড়ান্ত হবে৷ কিন্তু সেটি ‘অত কমপ্রিহেন্সিভ' হবে না বলে তিনি মনে করছেন৷ ‘‘কিছু কাজ হয়ত আগামী কপে শেষ হবে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন পরিবেশ সচিব৷
তবে বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট'- এর পরিচালক সালিমুল হক আশা করছেন, শেষ দিনে রুলবুক চূড়ান্ত হবে৷ ‘কপ নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা বলছে, শেষ দিনে কিছু একটা হবে,'' বলেন তিনি৷ সালিমুল হক বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকজনের মধ্যে একজন, যিনি সবগুলো কপ-এ অংশ নিয়েছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘রুলবুকের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়ে গেছে, যা একটি ভালো দিক৷ আর রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে মন্ত্রীরা এখন আলোচনা করছেন৷ আমি আশাবাদী, এই কপ, এই (রুলবুক) হয়ে যাবে৷''
-
এক ইন্সটাগ্রামারের চোখে জার্মানির জলবায়ু নীতির ভালো-মন্দ
কয়লা নির্ভরতা
ছবিতে জার্মানির সবচেয়ে বড় সারফেস কয়লা খনি দেখতে পাচ্ছেন৷ এটি হামবাখ খনি নামে পরিচিত৷ জার্মানির মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ আসে কয়লা থেকে৷ তবে এই অবস্থা থেকে সরে আসতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে দেশটি৷ এরপরেও অবশ্য কয়লা শিল্পের ভবিষ্যৎ আছে বলে মনে করছেন ইন্সটাগ্রামার @thomas_k৷ এ ছবির মাধ্যমে তিনি তা-ই বোঝাতে চেয়েছেন৷
-
এক ইন্সটাগ্রামারের চোখে জার্মানির জলবায়ু নীতির ভালো-মন্দ
খনির প্রসার বাড়ছে
কোলন শহরের পশ্চিমে অবস্থিত হামবাখ কয়লা খনির আয়তন প্রায় চার হাজার তিনশ’ হেক্টর৷ এখনও এর পরিধি বেড়ে চলেছে৷
-
এক ইন্সটাগ্রামারের চোখে জার্মানির জলবায়ু নীতির ভালো-মন্দ
গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে
হামবাখ খনির পাশে অবস্থিত এই গ্রামটির নাম মানহাইম৷ এক হাজার বছরের পুরনো এই গ্রামও একটা সময় খনির আওতাভুক্ত হয়ে যাবে৷ তাই ইতিমধ্যে গ্রামের অনেক বাসিন্দা অন্য জায়গায় চলে গেছেন৷ ১৯৮৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় চারটি গ্রাম খনির মধ্যে ঢুকে গেছে৷
-
এক ইন্সটাগ্রামারের চোখে জার্মানির জলবায়ু নীতির ভালো-মন্দ
কোনো বিকল্প নেই
কুর্ট ব়্যুটগার নামের এক ব্যক্তি এখনও মানহাইম গ্রামে থাকেন৷ ছোটবেলা থেকেই তিনি নাকি তাঁর গ্রামের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কথা শুনছেন৷ ‘‘বিষয়টা দুঃখের, তবে কয়লাখনির আর কোনো বিকল্পও নেই’’, মনে করেন কুর্ট৷
-
এক ইন্সটাগ্রামারের চোখে জার্মানির জলবায়ু নীতির ভালো-মন্দ
নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার
কয়লার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারও রয়েছে জার্মানিতে৷ ভাবা হচ্ছে নানা ধরনের বিকল্প জ্বালানি নিয়েও৷ এ ছবিটি তোলা হয়েছে বার্লিনের কাছের একটি এলাকা থেকে৷ ১০৯ মিটার উঁচু এ সব ‘উইন্ড টারবাইন’-ই নাকি ভবিষ্যতে জার্মানির জ্বালানি চাহিদা মেটাবে৷
-
এক ইন্সটাগ্রামারের চোখে জার্মানির জলবায়ু নীতির ভালো-মন্দ
সবচেয়ে বড় উৎস
হ্যাঁ, জার্মানিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে বায়ুবিদ্যুৎ৷ গত এক দশকে প্রায় ২৭ হাজার ‘উইন্ড টারবাইন’ বসানো হয়েছে৷ প্রাণী অধিকার কর্মীরা অবশ্য মনে করেন, এ সব টারবাইন পাখিদের জন্য মহা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
-
এক ইন্সটাগ্রামারের চোখে জার্মানির জলবায়ু নীতির ভালো-মন্দ
ভবিষ্যতের বাড়ি
জার্মানির গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে এমন বাড়ির নকশার কথা বলছে, যেগুলো নিজেরাই বাড়তি জ্বালানি উৎপাদন করতে পারবে৷ অর্থাৎ এ সব বাড়ি নিজেই এত জ্বালানি উৎপাদনে সক্ষম হবে যে, চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি তা বিক্রিও করা যাবে৷ এক্ষেত্রে নেয়া হবে সৌরশক্তির সহায়তাও৷
বাংলাদেশের `কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম এখন পর্যন্ত সম্মেলনে আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করছেন, এই কপ-এ রুলবুকের কাজ শেষ হবে না। এমনকি আগামী কপ-এও যদি শেষ হয় তাহলে সেটি সৌভাগ্যের বিষয় হবে বলে তিনি মনে করছেন।
রুলবুকে যা থাকবে
২০২০ সাল থেকে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হবে৷ কিন্তু সেটা কীভাবে হবে তার নিয়ম-কানুন থাকবে রুলবুকে৷ যেমন ধরুন, মিটিগেশন৷ একটি দেশ কী পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাবে, তা কীভাবে নির্ধারণ করা হবে, তার একটি উপায় বলা থাকবে রুলবুকে৷ সব দেশকে সেটি মেনে চলতে হবে৷ ফলে কোনো দেশ তার নিজের সুবিধামতো নির্গমনের হার ঠিক করতে পারবে না৷
একই কথা প্রযোজ্য অর্থায়নের ক্ষেত্রেও৷ উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দরিদ্র দেশগুলোকে কী পরিমাণ অর্থ সহায়তা দেবে, তা-ও রুলবুকে লেখা থাকবে৷ ফলে কোনো দেশ চাইলেই কম অর্থ দিয়ে পার পাবে না৷
রুলবুকের আরেকটি বিষয় হচ্ছে, কোন দেশ কী পরিমাণ নির্গমন কমালো, কত অর্থ সহায়তা দিলো, তা নিয়মিত ভিত্তিতে ঐ দেশকেই জানাতে হবে৷ এরপর সেই তথ্য সঠিক কিনা, সেটি যাচাই করে দেখার কথাও থাকবে রুলবুকে৷
আইপিসিসি'র প্রতিবেদন বিতর্ক
২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনে নেয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সারা বিশ্বের প্রায় ৯০০ বিজ্ঞানী মিলে গত অক্টোবরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন৷ জাতিসংঘের সংস্থা ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ' বা আইপিসিসির প্রকাশ করা এই রিপোর্টে, শিল্প বিপ্লব শুরুর আগের চেয়ে তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলে ক্ষতির পরিমাণ কীরকম হতে পারে, তার একটি চিত্র তুলে ধরা হয়৷ এছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে আগামী ১২ বছরের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন অর্ধেক কমাতে হবে বলে মত প্রকাশ করা হয়৷
কিন্তু তেল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত চারটি দেশ সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও কুয়েত আইপিসিসির এই প্রতিবেদন মেনে নিতে চাইছে না৷ ফলে পোল্যান্ডে চলমান জলবায়ু আলোচনায় আইপিসিসির প্রতিবেদনটি গ্রহণের সিদ্ধান্তের প্রস্তাব করা হলে তাতে আপত্তি জানায় তারা৷
অর্থাৎ, জাতিসংঘের উদ্যোগে তৈরি প্রতিবেদন জাতিসংঘের সম্মেলনেই ‘স্বাগত' হচ্ছে না৷
ঐ চার দেশের এমন মনোভাবের সমালোচনা করেছেন বেশ কিছু দেশের প্রতিনিধি ও বিজ্ঞানীরা৷
তবে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখাবে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলছে৷
জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিনে রুলবুক চূড়ান্ত করার পাশাপাশি আইপিসিসির প্রতিবেদনকে ‘স্বাগত' জানানোর বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশসহ অন্য দেশের আলোচকরা৷
-
বিশ্ব উষ্ণায়নের শৈল্পিক প্রতিবাদ
সবকিছু একসাথে
কপ২৩ সম্মেলনে স্বাগতিক দেশ ফিজির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাংক বাইনিমারামা বলেন, ‘‘লক্ষ্যে পৌঁছাতে একটি আকাঙ্খাকে সামনে রেখে একসাথে আমাদের নৌকা ভাসাতে হবে৷’’ সম্মেলনে অংশ নেয়া ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিরা সেই বক্তব্যের প্রতিফলনই যেন দেখতে পায় ফিজির নিজস্ব নৌ-যানের এ অবয়বে৷
-
বিশ্ব উষ্ণায়নের শৈল্পিক প্রতিবাদ
প্রতিবাদে হস্তশিল্প
জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষত আদিবাসী গোষ্ঠির মানুষেরা৷ এ ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা৷ কপ২৩ চলাকালীন রাইনাউয়ে পার্কে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের হাতের কাজের নমুনা দিয়ে তৈরি করা এই তাঁবু সেই সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতীকী রূপ৷
-
বিশ্ব উষ্ণায়নের শৈল্পিক প্রতিবাদ
মেরু ভল্লুকের দুঃখজনক পরিণতি
কেবল মানুষ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা, বন্যা বা ঝড়ের তাণ্ডবে ভুগছে প্রাণীরাও৷ মেরু ভল্লুকের মতো অনেক প্রাণীই চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাচ্ছে৷ সম্মেলনে মেরু ভল্লুকের বিদ্ধ করা মূর্তি যেন জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণাম জানান দিয়েছে৷
-
বিশ্ব উষ্ণায়নের শৈল্পিক প্রতিবাদ
গাছবন্ধু
গাছ আমাদের পরম বন্ধু৷ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গাছের কোনো বিকল্প নেই৷ জার্মান ফরেস্ট অ্যাসোসিয়েশন গাছের গুরুত্ব বোঝাতে এই ৮ মিটার লম্বা গাছের ভাস্কর্যটি তৈরি করে৷
-
বিশ্ব উষ্ণায়নের শৈল্পিক প্রতিবাদ
বিপদের মুখে বিশ্ব
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিদিন আরো বিপদগ্রস্থ হয়ে উঠছে পৃথিবী৷ বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে আবহাওয়ার তীব্রতা মারাত্মক আকার ধারণ করছে৷ পৃথিবীর বিপন্নতার কথা মনে করিয়ে দিতেই যেন জার্মানির উন্নয়ন মন্ত্রণালয় পৃথিবীর এই ২০ মিটার লম্বা অবয়বটি বসিয়েছিল রাইনাউয়ে পার্কে৷
-
বিশ্ব উষ্ণায়নের শৈল্পিক প্রতিবাদ
নবায়নযোগ্য জ্বালানি
গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারতই সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ তবে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে জলবায়ু চুক্তি থেকে পিছু হঠছে, সেখানে ভারত ও চীন ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ কমিয়ে আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে৷ অদূর ভবিষ্যতে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর নির্ভর বাড়ানোর ইঙ্গিত ছিল ভারতীয় প্যাভেলিয়নে৷
-
বিশ্ব উষ্ণায়নের শৈল্পিক প্রতিবাদ
রাজপথে প্রতিবাদ
জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পরিবেশ কর্মীদের প্রতিবাদ সমাবেশ ছিল বন শহরে৷ জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে এ প্রতিবাদে সামিল হয় হাজারো মানুষ৷ পরে বন থিয়েটারে এ সব প্রতিবাদী পোস্টার প্রদর্শিত হয়৷
-
বিশ্ব উষ্ণায়নের শৈল্পিক প্রতিবাদ
প্রতিবাদে মুখোশ
প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসতে চাওয়া একমাত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র৷ জলবায়ু সম্মেলনে প্রতিবাদকারীদের অন্যতম লক্ষ্যও তাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷