1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শেখ হাসিনার দিল্লির বছরগুলি

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১৪ আগস্ট ২০২০

শেখ হাসিনা দিল্লি এসেছিলেন ১৯৭৫ সালের শেষদিকে। কয়েক মাস আগে শেখ মুজিবের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড হয়েছে।তারপর থেকে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ফেরার আগে পর্যন্ত ছিল তাঁর দিল্লি প্রবাস।

https://p.dw.com/p/3gxR0
ছবি: Reuters

দিল্লিবাসের অধিকাংশ সময়টা শেখ হাসিনা ইন্ডিয়া গেটের কাছে পান্ডারা পার্ক এলাকায় ছিলেন। তিনি তখনও রাজনীতিতে আসেননি। কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে দিল্লিতে কেটেছে তাঁর। সূত্র জানাচ্ছে, হাসিনার বাড়ির আশপাশে নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনী ছিল। কারণ, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তাদের ভয় ছিল তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে। তাই নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দাদের নজরও থাকত সেখানে।

হাসিনার দিল্লি বাসের দিনগুলিতে তাঁর সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছেন প্রখ্যাত ও প্রবীণ সাংবাদিক হিরন্ময় কার্লেকর। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''আমি শেখ মুজিবকেও চিনতাম। তিনি আমাদের বাড়িতেও এসেছেন। তবে সেটা স্বাধীনতারও আগে। আর শেখ হাসিনা যখন দিল্লি এলেন, তখন আমি তাঁর সঙ্গে কয়েকবার দেখা করেছি। তবে ফোনেই কথা হতো বেশি। হাসিনা তখন রাজনীতিতে নেই। ভিতরে ভিতরে হয়তো রাজনীতিতে নামার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। তবে আমার সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে কথা হতো।''

হিরন্ময় কার্লেকর জানাচ্ছেন, ''দিল্লি ছেড়ে যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ কথা হয়েছিল। তখন আমি তাঁকে রাজনীতিতে নামার ভালো ও মন্দ দুটি দিকের কথাই বলেছিলাম। ভালো দিক হলো তাঁর বাবার অসমাপ্ত কাজ শেষ করা। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার ঝুঁকির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছিলাম।''

শেখ হাসিনা যখন ভারতে আসেন তখন দিল্লির রাজনীতিতেও টালমাটাল সময়। ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। তারপর ইন্দিরার পতন এবং জনতা দলের সরকার গঠন। কিছুদিনের মধ্যেই জনতা দল সরকারের পতন এবং ইন্দিরার প্রত্যাবর্তন। এ সবই শেখ হাসিনার চোখের সামনে হয়েছে। প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায়চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা, তাঁর দেখভালের দায়িত্ব ইন্দিরা গান্ধী দিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। তখন থেকেই হাসিনার সঙ্গে প্রণববাবুর খুবই হৃদ্য সম্পর্ক গড়ে ওঠে।''

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''প্রণববাবু ছিলেন শেখ হাসিনার অভিভাবকের মতো। প্রণববাবুর স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শুভ্রা মুখোপাধ্যায় যখন মারা যান, তখন শেখ হাসিনা প্রটোকলের তোয়াক্কা না করে দিল্লি এসেছিলেন।''

জয়ন্ত জানাচ্ছেন, ''প্রণববাবু তো শেখ হাসিনাকে তাঁর বড় মেয়ে বলে মনে করতেন। এখনও মনে করেন। প্রণববাবুর ছেলে অভিজিতের সঙ্গে হাসিনার ছেলে জয়ের, শেখ রেহানার সঙ্গে প্রণববাবুর মেয়ে শর্মিষ্ঠার ভাল সম্পর্ক ছিল। আমি একবার প্রণববাবুর সঙ্গে ঢাকা সফরে গেছিলাম। খুবই সংক্ষিপ্ত সফর। সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসা। তখন শেখ হাসিনাকে বলতে শুনেছি, আপনি রাতটা থেকে গেলেন না! ভেবেছিলাম, নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াব। একেবারে অন্য ধরনের সম্পর্ক ছিল।''

দিল্লি বাসের সময় শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের সঙ্গে বেশি মিশতে পারেননি। জয়ন্তের বক্তব্য, ''হাতে গোনা কয়েকজন সাংবাদিক, রাজনীতিক ও আমলা ছাড়া খুব বেশি লোকের সঙ্গে তাঁর পক্ষে দেখা করা সম্ভব ছিল না। সেটা ছিল তঁর নিরাপত্তার জন্য খুব জরুরি।''   

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের ভয়ঙ্কর ঘটনা শেখ হাসিনার মনে দীর্ঘ ছায়াপাত করেছিল। দিল্লিবাসের বছরগুলিতে তিনি নিভৃতেই মনকে তৈরি করেছেন। নিজেকে শক্ত করেছেন। তারপর দেশে ফিরে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর সেই প্রস্তুতিপর্বটা ছিল ভারতে।