1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শরীরে ফ্যাটের প্রভাব জিনের উপরেও নির্ভর করে

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সুস্বাদু খাবার মানেই তাতে ফ্যাট রয়েছে৷ তার উৎস বাদাম বা অন্য কোনো নিরামিষ খাদ্য হতে পারে, অথবা প্রাণিজ চর্বিও হতে পারে৷ গবেষকরা ফ্যাটের বিপদ, জিনের প্রভাব, সুস্থ ও অসুস্থ মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নতুন তথ্য সংগ্রহ করছেন৷

https://p.dw.com/p/3D7Ro
Zunehmen
ছবি: Colourbox

ফ্যাট আসলে কতটা খারাপ?

ফ্যাট হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো নয় – এমন একটা ধারণা আজও বদ্ধমূল হয়ে রয়েছে৷ কেউ বলেন, ফ্যাটের মধ্যে ইতিবাচক কিছুই নেই৷ অবশ্যই মোটা করে তোলে৷ কেউ কেউ ফ্যাট কথাটা শুনলেই সজাগ হয়ে ওঠেন৷ কারণ তাঁদের মনে হয় বেশি ফ্যাট পুষ্টির জন্য সহায়ক হয় না৷

কিন্তু খারাপ ফ্যাট পুরোপুরি ত্যাগ করা কখনো সম্ভব হয়নি৷ মানবজাতির ইতিহাসে মানুষ কখনো এখনকার মতো মোটা ছিল না৷ গোটা বিশ্বে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন৷ কম ফ্যাটের খাবার সহজলভ্য করা ও অনেক প্রচার অভিযান সত্ত্বেও এমনটা ঘটছে৷ কিন্তু এর পেছনে কারণ কী? পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ড. মাটিয়াস রিডল বলেন, ‘‘কেউ যদি ফ্যাট ও তেলের পরিমাণ অতিরিক্ত মাত্রায় কমিয়ে দেন, তখন কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে এগিয়ে আসে৷ ফলে ওজন ও রক্তে ফ্যাটের মাত্রা বেড়ে যায়৷'' 

কিন্তু ফ্যাট কি তার ভাবমূর্তির মতো সত্যি এত খারাপ? সাধারণ মানুষের মনে এ বিষয়ে নানা ধারণা রয়েছে৷ কেউ মনে করেন, নির্ভর করছে, কী ধরনের ফ্যাট৷ যদি ভালো মানের কোল্ড প্রেসড তেল হয়, তাহলে তা ভালো হতে পারে৷ অনেকে সবকিছু অলিভ অয়েল দিয়ে রাঁধেন৷ কেউ বা লিনসিড অয়েল বা বাদাম তেল পছন্দ করেন৷

জিনের প্রভাব

কিছু ধরনের ফ্যাট অবশ্যই আমাদের অসুস্থ করে তোলে৷ কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই কি তা প্রযোজ্য?  জার্মানির পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্রের প্রোফেসর আন্দ্রেয়াস ফাইফার ৪৬ জো়ড়া যমজ ভাইবোনের উপর সেই পরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁদের খাদ্যে ফ্যাটের অনুপাত বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে৷  তাতে দেখা গেছে, যে যমজ ভাইবোনদের একই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে৷ কিন্তু সব যমজদের ক্ষেত্রে তা ঘটছে না, বরং বিশাল পার্থক্য চোখে পড়ছে৷ কিছু যমজ ভাইবোন ফ্যাটযুক্ত খাবার খেয়ে অন্যদের তুলনায় বেশি মোটা হয়ে যাচ্ছে৷ কোলেস্টরলের মাত্রা সম্ভবত জিনের উপর নির্ভর করে৷ জার্মান পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্র প্রোফেসর আন্দ্রেয়াস ফাইফার বলেন, ‘‘কোলেস্টরলের মাত্রা হয় বেশি অথবা কম, জিনের মধ্যেই তা স্থির করা আছে৷ খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে বড়জোর ১৫ শতাংশ বাড়ানো অথবা কমানো সম্ভব৷ কারো কোলেস্টরলের মাত্রা খুব বেশি হলে এমনকি খুব স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েও তা কমানো সম্ভব নয়৷''

অর্থাৎ খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে কোলেস্টরলের মাত্রায় অতি সামান্য হেরফের সম্ভব৷ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ড. মেলানি হ্যুমেলগেন তাই রোগীদের পাউঁরুটিতে মাখন লাগিয়ে খাবার অনুমতি দেন৷ কারণ আজকাল কোলেস্টরল কমানোর ওষুধ আগের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর হয়ে উঠেছে৷ তবে তা সত্ত্বেও তিনি রোগীদের সতর্ক থাকতে বলেন৷ কার্ডিওলজিস্ট ড. মেলানি হ্যুমেলগেন বলেন, ‘‘কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে মাঝেমাঝে ভাবি, সতর্ক থাকা উচিত৷ কী আর হবে, সকালে ভালো করে সসেজ খেয়ে দুপুরেও মাংস ও কিমার পদ খাওয়া যাক – এমন কথা বললে চলবে না৷ কারণ এ সব খাবার আসলে প্রাণিজাত কোলেস্টরল ও ফ্যাটের  বোমা৷ কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এমন খাবার বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে৷'' 

স্যাচুরেটেড ফ্যাট সম্পর্কে সাবধান!

কোলেস্টরলের মাত্রা ১৫ শতাংশ কম হলে তা হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক৷ প্রাণিজাত ফ্যাট সম্পর্কে তাদের সতর্ক থাকা উচিত৷ ঝুঁকিপূর্ণ রোগী থেকে শুরু করে সুস্থ মানুষ – সবার ক্ষেত্রেই স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের অনেক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে৷ প্রোফেসর ফাইফার বলেন, ‘‘প্রদাহ থেকে শুরু করে শরীরের যে সব প্রক্রিয়া ডায়াবিটিস, আর্টারিওস্কেলেরোসিস ও স্মৃতিভ্রংশের বিকাশের জন্য দায়ী, সেগুলির উপর এর প্রভাব রয়েছে৷ এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই৷ আমাদের গবেষণায়ও তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ সে কারণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট মোটেই ভালো নয়৷''

পেট্রা শুখার্ড ও হাইকে বাউয়ার ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়ার সময়ে অনেক সতর্ক হয়ে উঠেছেন৷ সুস্থ মানুষ হিসেবে অবশ্য তাঁদের কম ফ্যাট নিয়ে কোনো কড়া নিয়ম মানার প্রয়োজন নেই৷ কারণ আজ আমরা জানি, ভাবমূর্তি খারাপ হলেও ফ্যাট মোটেই তত ক্ষতিকারক নয়৷

বির্গিট আউগুস্টিন/এসবি