লিথিয়াম-নির্ভরতা কমাতে চায় ইউরোপ
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইউরোপ ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠতে চাইলেও সেই পথে একটি কাঁটা রয়েছে৷ শিল্পজগতের অনেক প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজন৷ জার্মানির নতুন এক লিথিয়াম প্রক্রিয়াজাত করার কোম্পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের উপর নির্ভরতা কমানোর চাবিকাঠি হতে পারে৷
ব্যাটারি উৎপাদনে অগ্রগতি আনতে লিথিয়ামের মতো সম্পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু ব্যাটারির মানের উপযুক্ত উপাদান তৈরি করতে রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ বেশ কঠিন৷ অ্যালকালি বা ক্ষার পরিশোধন এবং সেই উপকরণ প্রক্রিয়াজাত করার প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বর্তমানে চীনেরই আধিপত্য রয়েছে৷ কিন্তু সেই নির্ভরতা কমাতে ইউরোপকে নিজস্ব উদ্যোগে উপকরণ সরবরাহের শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে হবে৷
ফ্রাংকফুর্ট শহরে এএমজি লিথিয়াম কোম্পানির ল্যাবে কেমিস্টরা পরিশোধনের প্রতিটি ধাপের উপর অবিরাম নজর রাখেন এবং সেগুলি পরীক্ষা করেন৷ তাঁরাই লিথিয়াম হাইড্রক্সাইড প্রক্রিয়াজাত করার এই প্রক্রিয়া ডিজাইন করেছেন৷ সেখানকার বিজ্ঞানীরা লিথিয়াম থেকে দূষণ ফিল্টার করার কিছু উপায় বার করেছেন৷ ভবিষ্যতে এই কোম্পানি আরো বড় আকারে সেই কাজ করবে৷ ল্যাবের প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে কারখানায়ও হুবহু কার্যকর করা হবে৷ এএমজি লিথিয়াম কোম্পানির প্রতিনিধি রেবেকা স্পিলাউ বলেন, ‘‘এখানে মেটিরিয়াল প্রেস করা হয়৷ তারপর সিলিন্ডার অত্যন্ত দ্রুত ঘোরে৷ ঘূর্ণনের সময় দ্রবণটি ফিল্টার ব্যাগ থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে৷ ভেতরে শুধু নোংরা ও অশুদ্ধ অংশ থেকে যায়৷ আমার পরিষ্কার ক্রিস্টালাইজেট এখানেই থাকে৷ এটাই হলো মৌলিক প্রক্রিয়া৷''
ফ্রাংকফুর্ট-ভিত্তিক এই কেমিকাল কোম্পানি প্রায় পাঁচ বছর ধরে পরিশোধনের ধাপগুলির ক্ষেত্রে নিজস্ব দক্ষতা বাড়িয়ে চলেছে৷ প্রত্যেকটি ধাপ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান অর্জন করলে বিজ্ঞানীরা ল্যাবের বাইরেও সেই ক্ষমতা গড়ে তুলবেন৷
ব্রাজিলের এক খনি থেকে আনা স্পোডুমিন রক এএমজি কোম্পানির লিথিয়াম প্রসেসিং চেইনের শুরুতেই কাজে লাগানো হয়৷ ব্রাজিলে সেটিকে মাটি থেকে বার করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে৷ কোম্পানির কর্ণধার স্টেফান শেয়ারার বলেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ে আমরা এই স্পোডুমিন কনসেনট্রেট চীনে পাঠাই৷ এটাই তার নাম৷ এর কারণ একটাই৷ এই মুহূর্তে অন্য কোথাও এই উপকরণের কনভার্শন প্লান্ট নেই, যেখানে সেটা করা সম্ভব৷ তারপর চীন থেকে সেই টেকনিকাল ইন্টারমিডিয়েট ফিরে এলে বিটারফেল্ডে আমরা চূড়ান্ত ব্যাটারির মান অর্জন করতে সেটি পরিশোধন করি৷’’
বিটারফেল্ড-ভল্ফেন জার্মানির পূ্র্বাঞ্চলের এক রাসায়নিক শিল্পকেন্দ্র৷ উৎপাদনের জন্য এএমজি কোম্পানি এই জায়গাটিই বেছে নিয়েছে৷ ভবিষ্যতে কারখানার জমি পাঁচ গুণ পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগও সেখানে রয়েছে৷
কারখানা এখনো নির্মাণের কাজ চলছে৷ সেটি সম্ভবত ইউরোপের সবচেয়ে বড় লিথিয়াম শোধনাগার হয়ে উঠবে৷ প্রথম পর্যায়েই বছরে ২০,০০০ টন লিথিয়াম হাইড্রক্সাইড পরিশোধন করা হবে বলে প্রত্যাশা রয়েছে৷ কিন্তু সম্প্রতি সেই পণ্যের দাম পড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগ আকর্ষণ করা বেশ কঠিন হয়ে উঠছে৷ স্টেফান শেয়ারার বলেন, ‘‘বর্তমানে লিথিয়াম প্রকল্পে বিনিয়োগের বিষয়ে মানুষ অত্যন্ত সতর্ক হয়ে উঠেছে৷ কারণ বর্তমান মূল্যের নিরিখে বিনিয়োগের কথা বলা সত্যি খুব কঠিন৷’’
এখানকার কারখানা কিছু সরকারি ভরতুকি পেয়েছে৷ ইউরোপের সরকারগুলি ক্রিটিকাল মিনারেল ক্ষেত্র গড়ে তুলতে আরো অর্থের অঙ্গীকার করেছে৷ সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ক্রিটিকাল র মিনারেল্স অ্যাক্ট' নামের আইন কার্যকর করা হয়েছে৷ সরবরাহের শৃঙ্খলের ক্ষেত্রে অন্যদের উপর নির্ভরতা দূর করাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ এর আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ইইউ দেশগুলির খনি থেকেই দশ শতাংশ উপকরণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে৷ এছাড়া ৪০ শতাংশ সেখানেই পরিশোধন করা হবে এবং ১5 শতাংশ রিসাইকেল করা হবে৷ মোটকথা, কোনো উপকরণের ৬৫ শতাংশের বেশি একটি দেশ থেকে আনা যাবে না৷
তবে পরিশোধনের ক্ষমতা বাড়ানো সত্ত্বেও প্রয়োজন মেটাতে এখনো যথেষ্ট অর্থের অঙ্গীকার পাওয়া যাচ্ছে না৷ এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটসের অ্যালিস ইয়ু বলেন, ‘‘অর্থাৎ শুধু লিথিয়াম তহবিলের ক্ষেত্রেই এই পরিস্থিতি বিবেচনা করলে ইইউ-র ২০৩০-এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে কয়েকশো কোটি ইউরো অংকের বিনিয়োগের প্রয়োজন৷’’
জার্মানিতে এএমজি লিথিয়াম রিফাইনিং প্লান্ট সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার ক্ষেত্রে কিছুটা অবদান রাখবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ বিশ্বব্যাপী উপাদান সরবরাহের শৃঙ্খলের ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ কিছুটা পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে৷ তবে একা সেই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব নয়৷
মাটিস রিশটমান/এসবি