সরকার কৃষকদের উপর থেকে সব পুলিশ কেস প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি মেনে নিয়েছে। মৃত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য সরকারগুলি। এমএসপি বা ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য সহ বাকি দাবি একটি কমিটির কাছে পাঠাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই কমিটিতে সরকারি কর্মকর্তা, কৃষি বিশেষজ্ঞ, এবং সংযুক্ত কৃষক মোর্চার প্রতিনিধিরা থাকবেন। গতরাতে সরকারের তরফ থেকে লিখিতভাবে এই প্রস্তাব কৃষকদের দেয়া হয়। তারপরই বৃহস্পতিবার সকালে দীর্ঘ বৈঠক করে সংযুক্ত কৃষক মোর্চা(এসকেএম)। তারপর জানানো হয়েছে, আন্দোলন আপাতত শেষ।
এসকেএমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকার কৃষকদের বিরুদ্ধে করা সব পুলিশ কেস প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশসরকার কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে। পাঞ্জাব সরকার ইতিমধ্যেই তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এমএসপি নিয়েও ভরসা দিয়েছে। সরকার নিজে এমএসপি-তেই কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনবে। তাদের বাকি দাবি কমিটি বিবেচনা করবে।
-
কৃষক বিক্ষোভ ও ট্রাক্টর প্রতিবাদ
সরকারি আলোচনা বিফল
মোদী সরকারের সঙ্গে বহুবার আলোচনায় বসেছেন বিক্ষোভরত কৃষক নেতারা। কিন্তু এতবার আলোচনার পরেও কোনো সমাধানসূত্র পাওয়া যায়নি। কৃষকদের মূল দাবি মানতে চায়নি সরকার।
-
কৃষক বিক্ষোভ ও ট্রাক্টর প্রতিবাদ
সুপ্রিম কোর্টের কমিটি
বিক্ষোভরত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মেটাবার জন্য কমিটি করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সরকারও আগে কমিটি করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তখনো কৃষকরা রাজি হয়নি। এবারও তাঁরা বলেছেন, কমিটি তার কাজ করতে পারে। কিন্তু তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
-
কৃষক বিক্ষোভ ও ট্রাক্টর প্রতিবাদ
কৃষকদের মূল দাবি
কৃষকদের প্রধান দাবি হলো, বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। আইন করে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল কেনা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আর তাঁদের চুক্তি চাষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাধ্য করা যাবে না।
-
কৃষক বিক্ষোভ ও ট্রাক্টর প্রতিবাদ
সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছে
সুপ্রিম কোর্টের রায় হলো, আপাতত তিনটি কৃষি আইনের রূপায়ণ স্থগিত থাকবে। একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানসূত্র খুঁজে বের করবেন।
-
কৃষক বিক্ষোভ ও ট্রাক্টর প্রতিবাদ
কৃষকরা কেন মানছেন না
কৃষক নেতারা মনে করেন, সরকার চাইছে, কৃষকরা আন্দোলন থামিয়ে দিল্লির সীমানা ছেড়ে চলে যাক। সুপ্রিম কোর্টের কমিটি যে তাঁদের দাবি মানবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কমিটির অধিকাংশ সদস্যই অতীতে কৃষি বিলের সমর্থন করেছেন। তাই দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন করবেন।
-
কৃষক বিক্ষোভ ও ট্রাক্টর প্রতিবাদ
দিল্লির সীমানায় বসে কৃষকরা
গত ৪৯ দিন ধরে কৃষকরা দিল্লির সীমানায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশের সঙ্গে দিল্লির যে সীমানা আছে, তার বেশির ভাগ জায়গায় কৃষকদের বিক্ষোভ চলছে। দিল্লিতে এখন প্রবল শীত। তার মধ্যেই কৃষকরা বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন।
-
কৃষক বিক্ষোভ ও ট্রাক্টর প্রতিবাদ
বহু কৃষকের মৃত্যু
কৃষক বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত আন্দোলনরত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েকজন আত্মহত্যা করেছেন। শীত সহ্য করতে না পেরে অনেকে মারা গেছেন। তবে তারপরেও বিক্ষোভ থামেনি।
-
কৃষক বিক্ষোভ ও ট্রাক্টর প্রতিবাদ
প্রজাতন্ত্র দিবসের পরিকল্পনা
আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথে সামরিক বাহিনীর প্যারেড হয়। সেখানে ভারতের সামরিক শক্তির পাশাপাশি উন্নয়নের নজির এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। কৃষকরা ঠিক করেছেন, সেদিন তাঁরাও দিল্লিতে ট্রাক্টর প্যারেড করবেন।
-
কৃষক বিক্ষোভ ও ট্রাক্টর প্রতিবাদ
সরকারের আপত্তি
মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠনে কোনো ব্যাঘাত ঘটলে তা দেশের কাছে বিড়ম্বনার কারণ হবে। কিন্তু যোগেন্দ্র যাদবের দাবি, তাঁরা জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানাতেই এই পরিকল্পনা করেছেন।
ঠিক হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার সময় তাদের জয় উপলক্ষে প্রার্থনা করবেন কৃষকরা। পাঞ্জাবের কৃষকরা স্বর্ণমন্দিরে প্রার্থনা করবেন। আগামী ১১ ডিসেম্বর বিজয় মিছিল হবে সিঙ্ঘু সহ দিল্লির দুইটি সীমানায়।
এর আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের কাছে ক্ষমা চেয়ে জানিয়েছিলেন, তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হবে। তারপর সংসদের শীত অধিবেশনের প্রথম দিনেই সরকার বিল পাস করে সেই তিনটি আইন প্রত্যাহার করে। কিন্তু তারপরেও কৃষকরা জানিয়ে দেন, তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করছেন না। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে মামলা, মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং এমএসপি-কে আইনসঙ্গত করার দাবি সরকারকে মানতে হবে। প্রথম দুইটি দাবি মানা হয়েছে। এমএসপি নিয়ে সরকার কমিটি করে দিচ্ছে। এরপরই কৃষক নেতারা জানান, তাদের জয় হয়েছে। তারা এখন বিক্ষোভ থামিয়ে বাড়ি ফিরবেন। আগামী ১৫ জানুয়ারি তারা সমীক্ষা বৈঠক করবেন।
-
কৃষকদের সমর্থনে বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা
সমর্থনে ধর্মেন্দ্র
৮৬ বছর বয়সী ধর্মেন্দ্র টুইট করে বলেছেন, ''আমার কৃষক ভাইয়েরা কষ্ট পাচ্ছেন দেখে আমি খুবই বেদনা বোধ করছি। সরকার দ্রুত কিছু করুক।'' ধর্মেন্দ্র একসময় লোকসভার সাংসদ ছিলেন। বিজেপি-র হয়ে দাঁড়িয়ে রাজস্থানের বিকানেরে জিতেছিলেন।
-
কৃষকদের সমর্থনে বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা
প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সমর্থন
শুরু করেছিলেন পাঞ্জাবি শিল্পী দলজিৎ দোসাঞ্জ। তারপর একের পর এক তারকা কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। যেমন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। তিনি বলেছেন, ''কৃষকরা হলেন আমাদের খাদ্য-সৈনিক। তাঁদের ভয় দূর করতে হবে। তাঁদের আশা পূরণ করতে হবে।''
-
কৃষকদের সমর্থনে বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা
ইনস্টাগ্রামে সোনম কাপুর
বলিউডের আরেক নায়িকা সোনম কাপুর ইনস্টাগ্রামে কৃষক বিক্ষোভের একাধিক ছবি দিয়ে ড্যানিয়েল ওয়েবস্টারের একটা বিখ্যাত উদ্ধৃতি তুলে দিয়েছেন, ''যখন কৃষিকাজ শুরু হয়, অন্য সব শিল্প তাকে অনুসরণ করে।''
-
কৃষকদের সমর্থনে বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা
কৃষকদের পক্ষে প্রীতি জিন্টা
প্রীতি জিন্টাও টুইট করে বলেছেন, ''ঠান্ডা ও করোনার মধ্যে কৃষকরা সপরিবারে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁরা এই মাটির সৈনিক। আমি আশা করব, সরকার ও কৃষকদের মধ্যে আলোচনায় ফল হবে। সমস্যা মিটবে।''
-
কৃষকদের সমর্থনে বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা
পরিনীতি চোপড়ার সমর্থন
মাত্র একটি লাইন লিখেছেন পরিনীতি চোপড়া। তাতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি কৃষকদের পাশে। বলিউড-তারকা বলেছেন, ''ডিনার খেয়েছেন, একজন কৃষককে ধন্যবাদ দিন।''
-
কৃষকদের সমর্থনে বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা
তাপসী পান্নু এবং অন্যরা
একের পর এক বলিউড তারকা কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। তাপসী পান্নু কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রীতেশ দেশমুখ, চিত্রাঙ্গদা সিং, সোনু সুদ, স্বর্ণ ভাস্কর, হানসাল মেহতা, হিমাংশি খুরানা, জিপ্পি গ্রেওয়ালরাও কৃষকদের পক্ষে কথা বলেছেন।
-
কৃষকদের সমর্থনে বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা
কমেডিয়ান কপিলও
কমেডিয়ান কপিল শর্মা, গায়ক হানি সিং-রা কৃষকদের সমর্থন জানিয়েছেন। ছবিতে চন্দন প্রভাকর ও কিকু শারদার সঙ্গে কপিল শর্মা(মাঝখানে)।
-
কৃষকদের সমর্থনে বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা
উল্টো সুর কঙ্গনার
কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে উল্টো সুর কঙ্গনার। তিনি কৃষকদের সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে বলেছেন, কৃষকরা ভারতের বিভাজন চায়, যাতে চীন এসে তা দখল করে নিতে পারে। সম্প্রতি নানা বিষয়ে বিতর্কিত কথা বলেছেন কঙ্গনা।
-
কৃষকদের সমর্থনে বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা
সোচ্চার হরভজন
ইডেনে তাঁর অফস্পিনের জাদুতে ধরাশায়ী হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বহু ম্যাচে তিনি ভারতকে জিতিয়েছেন। সেই হরভজন সিং এবার কৃষকদের পক্ষে ব্যাট করেছেন। তাঁর টুইট, ''কৃষকরা আমাদের খাবার দেন। আমরা কি তাঁদের জন্য একটু সময় দিতে পারি না। তাঁদের কথা শুনতে পারি না? পুলিশ দিয়ে তাঁদের মোকাবিলা না করে, আলোচনা করতে পারি না?''
-
কৃষকদের সমর্থনে বলিউড ও খেলার জগতের তারকারা
বিজেন্দ্র সিং-এর প্রতিবাদ
বেজিং অলিম্পিক গেমসে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিলেন বক্সার বিজেন্দ্র সিং। তিনি কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। তিনি তাঁর জাতীয় খেল রত্ন পুরস্কার ফেরত দিতে চান। শুধু তিনিই নন, পাঞ্জাবের প্রচুর ক্রীড়াবিদ পুরস্কার ফেরত দেয়ার কথা বলেছেন। সেই তালিকায় আছেন, কুস্তিগির কর্তার সিং, বাস্কেটবল প্লেয়ার সজ্জন সিং চিমা, হকি প্লেয়ার রাজবীর কাউর।
কৃষক নেতাদের দাবি, স্বাধীনতার পর দেশের ৭৫ বছরের ইতিহাসে অন্যতম বড় ও সফল আন্দোলন করলেন কৃষকরা। কেরলের এক কৃষক নেতার দাবি, ''অনেকে আমাদের বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদীর মতো প্রবল শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই ধরনের আন্দোলন করে লাভ নেই। কিন্তু আমরা আন্দোলন করেছি এবং দেখিয়ে দিয়েছি, আন্দোলন করে জয় পাওয়া সম্ভব।''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই)