লাইভ স্ট্রিমিংয়ে রাজি নন মমতা, নবান্ন থেকে ফিরলেন ডাক্তাররা
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, সরকার যদি প্রশাসনিক বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং করতে পারে, তাহলে এই বৈঠকের কেন হবে না? আমরা প্রথম থেকেই লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি করে এসেছেন।
কিন্তু রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্ত ও পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার জানিয়ে দেন, ''কোনো ফর্ম্যাল বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং হয় না। ভিডিও তুলে রাখা হবে। ডকুমেন্টেশন হবে।''
মুখ্যসচিব এটাও বলেন, ''মুখ্যমন্ত্রী বিকেল পাঁচটা থেকে আলোচনার জন্য অপেক্ষা করছেন। দেড় ঘণ্টা হয়ে গেছে। একটা সীমা আছে।''
ঘটনা হলো, চিকিৎসকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর লাইভ স্ট্রিমিং কোনো অভূতপূর্ব ঘটনা নয়। অতীতে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের দুই ঘণ্টার বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠক লাইভ স্ট্রিমিং হয়েছে।
পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ''লাইভ স্ট্রিমিং করা সম্ভব নয়। কারণ, বিষয়টি বিচারাধীন।'' তার বক্তব্য, ''সুপ্রিম কোর্ট লাইভ স্ট্রিমিং করতে পারে। আমরা পারিনা। মামলা বিচারাধীন।''
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ''দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেছি। আমি চাই ডাক্তার ভাইবোনেদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আমি ওদের ক্ষমা করে দিচ্ছি। আমি পদ ছাড়তেও রাজি।''
মুখ্যসচিবের বক্তব্য, ''লাইভ স্ট্রিমিং গুরুত্বপূর্ণ নয়, আসল কথা হলো আলোচনা। আমাদের দুই পক্ষের লক্ষ্য এক। আমরা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা জুনিয়র ডাক্তারদের কাছ থেকে তাদের সুপারিশ জানতে চাই। তাহলে সেগুলি আমরা রূপায়ণ করতে পারব।''
জুনিয়র ডাক্তাররা বলেছেন, ''তারা প্রথম থেকে বলেছেন, তারা ন্যায় পাওয়ার জন্য লড়াই করছেন। পরে সিনিয়র ডাক্তাররা তাদের যোগ দেন। এরপর জনসাধারণ যোগ দিয়েছে। ফলে প্রথম থেকে তারা একই কথা বলেছেন। তারা তাদের দাবি থেকে সরে যাননি। তারা কখনো বলেননি রেকর্ড করে রাখলে বৈঠকে যাবেন।''
তাদের বক্তব্য, প্রথম থেকে পুলিশি তদন্ত ঠিক দিকে গেলে তাদের এইভাবে রাজপথে থাকতে হত না। আগে এনআরএসে এরকম ঘটনার লাইভ স্ট্রিমিং হয়েছিল। এই একই মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাহলে এখন কেন হবে না?
সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের আইনজীবী অরিন্দম দাস ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং সম্ভব নয়। কিন্তু এমন কোনো নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট দেয়নি। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের কোনো বাধা ছিল না। কোর্টে মামলার শুনানিরই তো লাইভ স্ট্রিমিং হয়।''
নবান্নের সামনে কী হলো?
সরকার জানিয়েছিল, পাঁচটার সময় বৈঠক হবে। জুনিয়র ডাক্তারদের ৩৪ জন প্রতিনিধি পাঁচটা বাজার কিছুক্ষণ পর বাসে করে নবান্নের সামনে আসেন।
তাদের বলা হয়, নবান্নে ঢোকার জন্য সবাইকে সই করতে হবে। সই করতে মিনিট দশেক সময় যায়। এরপর জুনিয়র ডাক্তাররা জানতে চান, বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং হবে তো? তখন পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লাইভ স্ট্রিমিং হবে না। পুলিশের ডিজি, মুখ্যসচিব-সহ একের পর এক অফিসার জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে আসেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা বারবার করে বলেন, আপনারা আলোচনায় আসুন।
কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা গোঁ ধরে বসে থাকেন, লাইভ স্ট্রিমিং ছাড়া তারা বৈঠক করবেন না। তারা জানতে চান, কেন লাইভ স্ট্রিমিং হবে না?
মমতা যা বললেন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছয়টা ৫৫ মিনিট নাগাদ নবান্ন সভাঘর থেকে নিজের দপ্তরে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ''বাইরে থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে নির্দেশ এসেছে, আলোচনায় যাবে না। ''
তিনি জানান, ''আমি জুনিয়র ডাক্তারদের ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি তিনদিন ধরে অপেক্ষা করছি, আজও দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। আমাকে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কিছু পদ্ধতি মানতে হয়। কেউ এখানে সিবিআইয়ের সমালোচনা করলে কি আমাদের দায়বদ্ধতা থাকত না?''
মমতা বলেন, ''২৭ জন মারা গেছেন। সাত লাখ মানুষ পরিষেবা পাননি। দেড় হাজার গুরুতর রোগী ৩২ দিন ধরে অপেক্ষা করছে। যারা চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন, তাদের জন্য মোমবাতি জ্বালাব না!''
মুখ্যমন্ত্রী এরপর বলেন, ''আমি ক্ষমা চাইছি। জনগণ আমাকে ক্ষমা করবেন। আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে, অপমান করা হয়েছে। কুৎসা, অপপ্রচার হয়েছে। ওরা বিচার নয়, চেয়ার চায়। আমি চেয়ার চাই না। আমি চাই, তিলোত্তমা বিচার পাক।''
চিকিৎসকদের বক্তব্য
জুনিয়র ডাক্তাররা পরে বলেন, ''উনি বললেন নীরবতা পালন করতে চাই। আমরা অনেকবার নীরবতা পালন করেছি। ৩৪ দিন রাজপথে পড়ে আছি। দরকার হলে ৩৫ বা ৩৬ দিন থাকব।''
তাদের বক্তব্য, ''আমরা স্বচ্ছ্বতা চেয়েছি। আমরা চেয়ার চাইনি। আমরা রাজনীতি করার জন্য আসিনি। নির্যাতিতার বাবা-মা বলেছিলেন, আমাদের হয়ে তোমরা দেখে নিও। আমরা তো পাঁচটি দাবি নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিনাম। সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে শুধু আমরা নই, সাধারণ মানুষ অভিযোগ করছেন।''
তারা বলেছেন, ''আমরা আশা রাখছি, অপেক্ষা করছি, আরো অপেক্ষা করব।''
চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেছেন, ''যে যুক্তি দেয়া হলো, আমাদের মনে হয়েছে অবান্তর। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। সুপ্রিম কোর্টকে দেখানোর জন্য এসব করা হলো। তদন্তর ফাঁক নিয়ে প্রশ্ন করলে তখন মুখ্যমন্ত্রী কী বলতেন? সেজন্য লাইভ স্ট্রিমিং করা হলো না।''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এবিপি আনন্দ)