একাধিক শপিংমল এবং মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা মানুষ জানালেন, তারা প্রায় সবাই ঈদের কেনাকাটা করতেই এসেছেন৷ পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনের মন রক্ষা করতেই করোনা সংক্রমণের ভয়কে উপেক্ষা করেই এখানে এসেছেন বলে জানান তারা৷

ঢাকার ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের সোমা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোঃ আবুল বাশার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘বেলা বাজে ১২ টা, এখনো বউনি করতে পারি নাই৷ দোকানে কোন কেনাবেচা নাই, শুধু খবরেই আমরা দেখি বেচাকেনায় ধুম পড়সে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন৷’’

ধানমন্ডির হকার্স মার্কেট সংলগ্ন দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা গেল, বিয়ের শাড়ি এবং সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র বেচাকেনা চলছে তুলনামূলক বেশি৷ কেনাকাটা করতে আসা সাবরিনা হোসেন জানালেন, তারা ঘরোয়াভাবেই বিয়ের আয়োজন করছেন৷ করোনার প্রকোপ কবে শেষ হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বছরের পর বছর তো এভাবে বিয়েশাদি আটকে রাখা সম্ভব না৷’’

ঢাকার নিউমার্কেটে বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেল, খুব কম দোকানিই স্বেচ্ছায় মাস্ক পরে আছেন৷ শুধু ক্যামেরা দেখলেই তড়িঘড়ি করে মাস্ক পরছেন৷ অনেক ক্রেতার মুখেও মাস্ক নেই৷ মাস্ক না পরার কারণ জিজ্ঞেস করতে জানালেন, এই গরমে মাস্ক পরে কেনাকাটা করা অনেক কষ্ট৷

এবার রমজানের শুরু থেকেই প্রচণ্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত৷ তার উপর করোনার উর্ধ্বমুখী সংক্রমণের ঝুঁকি৷ কিন্তু এসবের কোন প্রভাবই দেখা গেলো না কেনাকাটা করতে আসা মানুষের মধ্যে, তাদের কাছে কেনাকাটাই মুখ্য৷

ক্যামেরা দেখলেই অনেক বিক্রেতা দোকানে প্রবেশে বাধা দিচ্ছেন৷ কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সাংবাদিক দেখলে তাদের ক্রেতারা দোকান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন৷ এমনিতে বেচাকেনা নেই, এভাবে খদ্দের চলে গেলে তাদের আর কোন উপায় থাকবে না বলে জানান বিক্রেতারা৷

ঢাকার অন্যতম বড় কেনাকাটার জায়গা নিউমার্কেটে ঘুরে দেখা গেলো, দোকানিরা অলস সময় পার করলেও দিব্যি বেচাকেনা চলছে মার্কেটসংলগ্ন ফুটপাথগুলোতে৷ কারণ হিসেবে ক্রেতারা বলছেন, ফুটপাথে জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক কম থাকায় এবং করোনার কারণে মানুষের হাতে নগদ অর্থের সংকট থাকায় সবাই কম দামেই কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন এবার৷

ঢাকার বিভিন্ন শপিংমল এবং মার্কেট সংলগ্ন রাস্তাগুলোতে দেখা মিললো যানবাহনের৷ শুধু গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোন বাস-লেগুনা দেখা গেলো না৷ একজন পথচারী সাংবাদিক দেখে মন্তব্য করলেন, ‘‘লকডাউন কোথায়? এই লকডাউনের কোন মানে আছে?’’

একাধিক মার্কেট ঘুরে তেমন স্বাস্থ্যবিধি মানতে না দেখা গেলেও বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে পাওয়া গেল কিছুটা সন্তোষজনক চিত্র৷ এখানে প্রবেশের সময় দেহের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে, জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানোসহ সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে৷ এছাড়া সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের লিফট তারা বন্ধ রেখেছেন৷ এসব পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্রেতারা৷

ঢাকার দ্বিতীয় বৃহত্তম শপিংমল বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে দেখা গেলো, নামিদামি ব্র্যান্ডসহ ছোটখাটো দোকানগুলোতে মূল্যছাড়ের প্রতিযোগিতা৷ কিন্তু তবুও ঈদের তুলনায় বেচাকেনা অনেক খারাপ বলে জানান বিক্রেতারা৷

বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের বাটা শোরুমে গিয়ে দেখা গেলো সেখানে বিক্রয়কর্মীদের দম ফেলার ফুরসত নেই৷ দোকানে অনেক মানুষের ভিড়৷ বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, ই-ভ্যালির অফারের কারণে মানুষ ৫০-৬০ ভাগ কম দামে জুতা কিনতে পারছে৷ তাই ঈদের কেনাকাটায় এই সুযোগ কেউ হাতছাড়া করতে চাইছে না৷

লকডাউনের মাঝেও সাধারণ মানুষের কেনাকাটার ধুম এবং সচেতনতার অভাব দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন৷ জুতা কাপড়ের পাশাপাশি প্রত্যেকের জন্য একটি করে কাফনের কাপড় কেনার পরামর্শ দিতেও ছাড়ছেন না কেউ কেউ৷