1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডাউনের পরে কী

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
৬ এপ্রিল ২০২০

করোনা রুখতে আগামী  ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন থাকবে ভারত। প্রশ্ন হল, তারপর কী হবে? লকডাউনের মেয়াদ বাড়বে না কি তা আংশিকভাবে বা পুরোপুরি উঠবে?

https://p.dw.com/p/3aV6X
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo

নববর্ষের দিন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিকে লকডাউনের মধ্যেই কাটাতে হবে। কারণ, আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত গোটা দেশে লকডাউন থাকছে। কিন্তু তার পর কী হবে? লাকডাউন কি পুরোপুরি উঠে যাবে? না কি, আংশিকভাবে উঠবে? সে ক্ষেত্রে কোন জায়গায় তা থাকবে, কোন কোন ক্ষেত্র ছাড় পাবে? না কি কোনও ঝুঁকি না নিয়ে আরও কিছুদিন লকডাউন চালাবার সিদ্ধান্ত নেবে সরকার? এই প্রশ্ন নিয়ে সাধারণ লোকের মনে বিভ্রান্তি চরমে। কারণ, সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটা কথাও বলা হচ্ছে না। সামাজিক মাধ্যম নানা ধরনের গুজবে ছেয়ে যাচ্ছে। আবার বিভিন্ন সংগঠনের কার্যকলাপ বিভ্রান্তি আরও বাড়াচ্ছে। যেমন বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলি ১৫ তারিখ থেকে বুকিং নিতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়া বুকিং নিচ্ছে ৩০ এপ্রিল থেকে।

লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন বা চিন্তা কেবল সাধারণ মানুষের নয়, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যেও পুরোমাত্রায় তা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রুপ অফ মিনিস্টার বা মন্ত্রিগোষ্ঠী একাধিকবার আলোচনা করেছে। সব ক'টি মন্ত্রক, দফতর ও রাজ্য সরকারগুলির কাছ থেকে লকডাউন তোলা বা জারি রাখা নিয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশের মতো চারটি রাজ্য লকডাউন তোলার বিপক্ষে। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, রেল মন্ত্রক যেমন প্রথমেই প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানোর পক্ষপাতী নয়। আগে মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন চালিয়ে তারপর প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালাবার পক্ষপাতী। অবশ্য ১৫ এপ্রিল থেকে সব ট্রেনের রিজার্ভেশন চালু রয়েছে। তবে রেলমন্ত্রকের বক্তব্য, কম্পিউটারচালিত রিজার্ভেশন ব্যবস্থায় এটা হয়। ট্রেন না চললে তখন টাকা ফেরত দেওয়া হবে। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, লকডাউন বহাল রাখলেও মুশকিল, পুরোপুরি তুলে দেওয়াও অসম্ভব। তাই সব চেয়ে ভালো যেখানে দরকার সেখানে লকডাউন থাকুক। যে সব ক্ষেত্র বন্ধ রাখলে অসুবিধা নেই, তা বন্ধ থাকুক। অন্য ক্ষেত্র খুলুক। নইলে দেশের অর্থনীতিধসে পড়বে। গরিবরা খেতে পাবেন না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহে টান পড়বে। আবার অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এপ্রিলের শেষ বা মে মাসের প্রথম দিকে ভারতে করোনা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছবে। সে সময় পরিস্থিতি সামলাতে হয়ত আবার লকডাউনের দরকার হতে পারে। 

সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, লকডাউন এক ধাক্কায় পুরোপুরি উঠবে না। কারণ, দেশের বহু জায়গায় করোনার প্রকোপ বেশি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ভাষায় এই এলাকাগুলিকে বলা হচ্ছে হট স্পট। প্রতিটি রাজ্যে এই ধরনের হট স্পট চিহ্নিত করা হচ্ছে। দিল্লিতে নিজামুদ্দিন ও দিলশাদ গার্ডেন, রাজস্থানের ভিলওয়াড়া ও জয়পুর শহরের বেশ কিছু এলাকা, উত্তর প্রদেশের নয়ডা ও মিরাট, কেরলের কাসারগড়ের মতো বেশ কিছু হট স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে এবং প্রতিদিনই সংখ্যাটা বাড়ছে। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, এই হট স্পট গুলিতে লকডাউন চলবে। সেখানে কোনও লোককে ঢুকতে বা বেরতে দেওয়া হবে না। লকডাউন পুরোপুরি তোলা হলেও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এখন খুলবে না। গরমের ছুটি এগিয়ে এনে এই সময়টাকে তার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। বাজারে নিত্য্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকানপাট খুলবে। কিন্তু খেলনার দোকান, উপহারসামগ্রীর দোকান এখনই হয়তো খুলবে না। মিটিং, মিছিল, সমাবেশ, সম্মেলন সব বন্ধ রাখা হবে।

কারখানাগুলির ক্ষেত্রে কী হবে তা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। সিবিইসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুমিত দত্ত মজুমদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''প্রথমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যা উৎপাদন হয়ে গিয়েছে, সেগুলি বাজারে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। কারখানা থেকে জিনিস আসে পরিবেশকদের কাছে। সেখানে তা রিপ্যাক হয়। তা পরিযায়ী শ্রমিকরাই করেন। সেখান থেকে পাইকারি দোকানে মাল যায়, সেখান থেকে আবার তা খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে আসে। এই পুরো সাপ্লাই চেইন চালু করতে হবে। এতে দিন সাতেক সময় লাগবে। তখনই নতুন করে উৎপাদন শুরু হবে। এই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের উৎপাদন আগে দরকার। তাতে শ্রমিকরা কাজ পেয়ে বাঁচবেন। কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে। তারপর অন্য ক্ষেত্রগুলি ধীরে ধীরে খুলতে হবে।'' তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, একাধিক শিফট করে শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কারখানা চালু করা উচিত।  নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিজনেস এডিটর জয়ন্ত রায়চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''কিছু কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে, কারখানা চালু হলে তাঁরা শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেবে।''

তবে মোদী সরকার এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। আগামী কয়েকদিনের অবস্থা খতিয়ে দেখে এবং সব বিভাগ ও রাজ্য সরকারের মতামত বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সরকারি সূত্র জানাচ্ছে।